ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাহাড়ে খাদ্য সঙ্কট দূর করতে ৭০ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

পাহাড়ে খাদ্য সঙ্কট দূর করতে ৭০ কোটি টাকার প্রকল্প

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ২৭ অক্টোবর ॥ পাহাড়ের দুর্গম এলাকার তীব্র খাদ্য সঙ্কট দূর করতে ৭০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার পাঁচটি উপজেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে জুমিয়া পরিবারগুলোতে তীব্র খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। খারাপ আবহাওয়ায় জুমের ফলন ভাল না হওয়া, ইঁদুর, বন্যা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাসের কারণে আদিবাসীদের আয় কম হওয়ায় দুর্গম এলাকার অধিকাংশ গ্রামে এই অভাব দেখা দেয়। এই সঙ্কট দূর করতেই নতুন প্রকল্প গ্রহণ করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পার্বত্য জেলায় পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়িত হয়ে এলেও চলতি বছর সাজেকে তীব্র খাদ্য সঙ্কটের কারণে রাঙ্গামাটির জন্য ৭০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো ফল-ফলাদি উৎপাদনের মাধ্যমে সাজেকের আধিবাসীদের দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীদের কৃষিকাজে অধিকতর সম্পৃক্তকরণ, সর্বোপরি জীবনমান উন্নয়ন করা। সাজেক ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার ডহিন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, সঙ্কট দূর করতে মিশ্র ফল বাগানের প্রকল্প ভাল উদ্যোগ। তবে এর সঙ্গে গবাদিপশু পালনের প্রকল্প গ্রহণ করলে আরও ভাল হতো। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুম চাষ, বাঁশ ও বনজসম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে দুর্গম এলাকার আদিবাসীরা। অধিকাংশ গ্রামে এখনও পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। গ্রামগুলো এতই দুর্গম যে, গ্রামগুলো থেকে হাঁটা পথে বাজারে আসতে তাদের সময় লাগে তিন থেকে চার দিন। আর এসব এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপরও জোর দেয়া হচ্ছে। সাজেকের গ্রামগুলো থেকে ভারতের মিজোরাম বাজার ও থানচির বড়মদক থেকে মিয়ানমার কাছে হলেও নিরাপত্তা বলয়ের কারণে তারা সেখান থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারে না। ফলে সাজেকের মাচালং বাজার থেকে ও থানচি বাজার থেকে কোন পণ্য ক্রয় করে এসব গ্রামে নেয়া পর্যন্ত খরচ পড়ে চারগুণ। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ খাদ্য ক্রয় করতে না পারার কারণে তীব্র খাদ্য সঙ্কটে ভোগে। সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা বলেন, সাজেকের এক হাজার পরিবারকে মিশ্র ফলবাগান এবং অন্যদের জন্য পশু পালনের জন্য ভেড়া ও গরু দেয়া হবে বলে শুনেছি। চলতি বছরের শুরুতে সাজেকের পুরান জোপুই, নতুন জোপুই, উদলছড়ি, পুরান থাঙনঙ, নতুন থাঙনঙ থারুমপাড়াসহ ২০টির মতো গ্রামের মানুষ আর্থিক অভাবের কারণে চাল কিনতে পারেনি। এসব গ্রামে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হয়েছে ৯০-১১০ টাকা। খাদ্য সঙ্কটের কারণে তারা কলা গাছের আলেয়া, পাহাড়ী আলু ও লতাপাতা খেয়ে জীবনধারণ করে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ত্রিদিব কান্তি দাশ জানান, সাজেকে উৎপাদনমুখী প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে এই সঙ্কট থাকবে না। আর এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ।
×