ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাস্তায় বেপরোয়া যানবাহন, জনদুর্ভোগ চরমে

খুলনা মহানগরীর ফুটপাথ অবৈধ দখলে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

খুলনা মহানগরীর ফুটপাথ অবৈধ দখলে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ ওয়াসার পানির লাইনের পাইপ স্থাপনে খোঁড়াখুঁড়ি ও বৃষ্টির কারণে খুলনা মহানগরীর প্রায় সকল রাস্তা কম বেশি খারাপ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাথ অবৈধ দখলে। থ্রি হুইলার মাহেন্দ্র ও সিএনজির পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক এবং ইঞ্জিনচালিত হাজার হাজার রিক্সা নগরীতে চলাচল করছে। অনিয়ন্ত্রিত এসব যানবাহনের কারণে মোড়ে মোড়ে যানজট লেগেই থাকে। এতে পথচারীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ফুটপাথের দখল উচ্ছেদ এবং ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে সিদ্ধান্ত হলেও বাস্তবে কার্যকর কিছু হচ্ছেনা। গুরুত্বপূর্ণসহ অলিগলির ভাল-মন্দ সকল রাস্তায় ইঞ্জিনচালিত রিক্সা অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। এছাড়া স্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি নামের আর একটি বিপদজনক যান নগরীর যত্রতত্র চলছে। বেপরোয়াভাবে এই সব যানবাহন চলাচল করায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। জানা গেছে, খুলনা মহানগরী এলাকায় মোট ১২১৫টি সড়ক রয়েছে। এর দৈর্ঘ্য মোট ৬৪০ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। ২০০ কিলোমিটার পাকা রাস্তার দুই পাশে ফুটপাথ আছে। ১০০ কিলোমিটার সড়কে কোন ফুটপাথ নেই। অনেক সড়কের দুই পাশে চার /পাঁচ ফুট চওড়া ফুটপাথ থাকলেও তা দিয়ে পথচারীদের চলাচলের সুযোগ কম। ক্লে রোড, কেডি ঘোষ রোড, ওয়েস্ট মেকট রোড, স্যার ইকবাল রোড, সিমেট্রি রোড, খানজাহান আলী রোডসহ শহরের প্রায় সকল রাস্তার ফুটপাথ অবৈধ দখলে। হরেক রকম পণ্যের পসরা নিয়ে সেখানে বসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। রাস্তার পাশ্ববর্তী বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামালও ফুটপাথ এমনকি রাস্তার ওপরেও রাখা হয়। ভ্যানে করে রাস্তার ওপর ভাসমান দোকানও বসে। মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চলানো হলেও অভিযান শেষ হতে না হতেই আবার দখলে চলে যায় ফুটপাথ। এ ছাড়া বিভিন্ন রাস্তায় ইচ্ছেমত মোটরসাইকেল, রিক্সা, পণ্যবাহী ভ্যান ইত্যাদি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। কেডিএ এ্যাভিনিউ সড়ক ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি পার্কিংয়ের অঘোষিত স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এভাবে ফুটপাথ ও রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে পথচারীরা প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। সূত্র জানায়, খুলনা মহানগরী এলাকায় থ্রি হুইলার মাহেন্দ্র ও সিএনজির পাশপাশি প্রায় ২০ হাজার ইজিবাইক চলাচল করছে। এর মধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকাকালে তালুকদার আব্দুল খালেক নগরীতে চলাচলের জন্য ২ হাজার ইজিবাইকের টোকেন দিয়েছিলেন। বাকি ইজিবাইকগুলোর নগরীতে চলাচলের কোন প্রকার বৈধতা নেই। নগরীতে লাইসেন্সকৃত রিক্সার সংখ্যা হচ্ছে ১৭ হাজার। অথচ রিক্সা চলাচল করে ৩৫ হাজারের অধিক। এর মধ্যে নতুন করে তৈরি লাইসেন্সবিহীন ও পুরনো লাইসেন্সকৃত প্রায় ১৫ হাজার রিক্সা ও কয়েক হাজার রিক্সা ভ্যানে অবৈধভাবে ব্যাটরিচালিত ইঞ্জিন লাগিয়ে নগরীতে চালানো হচ্ছে। ওয়াসার পানির লাইনের পাইপ স্থাপনে খোঁড়াখুঁড়ি ও বৃষ্টির কারণে নগরীর প্রায় সকল রাস্তা কম বেশি খারাপ হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষে মেরামত কাজ শুরুর পর সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে কাজ ব্যাহত হয়। পুনরায় শুরু হলেও কাজ চলছে খুব ধীর গতিতে। গুরুত্বপূর্ণসহ অলিগলির ভাঙ্গাচোরা রাস্তায়ও ইঞ্জিনচালিত রিক্সা অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। এ বাহনটি হালকা হওয়ায় গতি নিয়ন্ত্রণ করার সময় প্রায়ই উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া স্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি ইট-বালু বোঝাই করে কিংবা খালি অবস্থায় নগরীর প্রায় সকল রাস্তায় চলাচল করছে। এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় এগুলো চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিজ্ঞমহলের মতে, মাহিন্দ্র, অতুল, সিএনজি, ইজিবাইক ও রিক্সা নগরীর সাধারণ মানুষের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ বাহনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু চলাচলে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এ সকল গণপরিবহন জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোকে আইন-কানুনের কাঠামো ও সুষ্ঠু নীতিমালার আওতায় মধ্যে এনে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। আর নাগরিকদের চলার পথে যে সকল প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করতে হবে। অবিলম্বে এটা করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে রাস্তা ও ফুটপাথের অব্যস্থাপনা এবং অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন নগরবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলবে।
×