ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিএনএনটেক

ভারতে স্মার্টফোনের বাজার বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

ভারতে স্মার্টফোনের বাজার বাড়ছে

যুক্তরাষ্ট্রে যত মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে ভারতে এমন ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও প্রায় তার সমান। ভারতে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরও কয়েক লাখ বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ইতোমধ্যে বিশ্বে মোবাইল ফোনের সবচেয়ে গরম বাজারগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে, স্যামসাং থেকে শুরু করে এ্যাপল, চীনের অপ্পো, ভিভো ও জিয়াওমি তাদের একটা পণ্য বিক্রি করার জন্য মাইক্রোম্যাক্সের মতো ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে দস্তর মত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। আর এই প্রতিযোগিতা সবে শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ভারতে স্মাার্টফোনধারীর সংখ্যা আগামী কয়েক বছরে ৫০ শতাংশেরও বেশি বাড়তে পারে। এক শ’ কোটির এখনও র্স্মাটফোন নেই ভারতে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৬৫ কোটি। এদের মধ্যে ৩০ কোটিরও কিছু বেশি লোকের স্মার্টফোন আছে। তার মানে ভারতের স্মার্টফোনের বাজার ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বড়। চীনের পর এদিক দিয়ে মাত্র দ্বিতীয়স্থানে আছে ভারত। তার মানে এক শ’ কোটি ভারতীয়র এখন স্মার্টফোন নেই। বাজারের দৃষ্টিকোণ থেকে স্মার্টফোনের জন্য এ এক বিশাল সুযোগ। প্রযুক্তি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চের এনালিস্ট শোভিত শ্রীবাস্তব বলেছেন ‘স্মার্টফোনের প্রসারের জন্য ভারত এক অতি চমৎকার জায়গা। এখানে ৩০ কোটি লোক ২জি ডিভাইসের উপর নির্ভর করে আছে যা শেষ পর্যন্ত স্মার্টফোনের দিকে এগিয়ে যাবে। এ এক বিশাল সম্ভাবনা ভারত ধারণ করে আছে।’ কাউন্টার পয়েন্টের জরিপে জানা যায় যে, প্রতি তিনজন ভারতীয় মোবাইল ব্যবহারকারীর মধ্যে দুজন বা মোটামুটিভাবে ৪৩ কোটি ৩০ লাখ লোক আগামী বছর তাদের মোবাইল আপগ্রেড করার কথা ভাবছে। ৯০ কোটির ইন্টারনেট নেই ভারতের ১৩০ কোটি লোকের মধ্যে ৬৬ শতাংশের এখনও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই। আগামী দশকে কোটি কোটি ভারতীয় অনলাইনে আসবে এবং সেটা তারা মোবাইল ডিভাইসের দ্বারা করবে। শ্রীবাস্তব বলেন ‘মোবাইল ইতোমধ্যে প্রধান ডিভাইসে পরিণত হয়েছে যেখান থেকে ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটে ঢুকতে পারে। এই সেদিন পর্যন্ত মোবাইল দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ বেশিরভাগ ভারতীয়র জন্য এত ব্যয়বহুল ছিল যে তারা তাতে নিরুৎসাহিত বোধ করত। কিন্তু ড্যাটার দামের ব্যাপক পতনের ফলে এই অবস্থাটা বদলাতে শুরু করেছে। ভারতের সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তি মুকেশ অম্বানি এক বছর আগে নতুন গ্রাহকদের তার রিলায়েন্স জিও ফোরজি নেটওয়ার্ক বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দেয়ায় ইন্টারনেট সংযোগের খরচ বেশ পড়ে যায়। এর ফলে বিশ্বে মোবাইল ড্যাটার দাম যে কয়টি দেশে সবচেয়ে সস্তা ভারত তার অন্যতম। মাসে মাত্র ১.৪৯ রুপি বা ২.৩০ ডলারে হাইস্পিড ড্যাটা প্ল্যান পাওয়া যায়। ভাষাও প্রবৃদ্ধি ঘটাতে পারে ভারতে কয়েক ডজন আঞ্চলিক ভাষা আছে। দেশের নতুনতম মোবাইল ব্যবহারকারীরা তাদের একটি ভাষায় ইন্টারনেট দেখতে ও ব্যবহার করতে পারছে। গুগুলের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে জানা যায় যে ভারতে স্থানীয় ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ২৩ কোটি ৪০ লাখে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ সেই সংখ্যা ৫৩ কোটি ৬০ লাখ দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শ্রীবাস্তব বলেন, স্মার্টফোন গ্রামাঞ্চলে বা মফস্বল শহরগুলোতে ভালমতো প্রবেশ করতে না পারার একটা বড় কারণ এর সবটাই ইংরেজীতে। অথচ এর প্রসার ঘটার জন্য আঞ্চলিক ভাষা প্রয়োজন। অনেক কোম্পানিই সেটা বুঝতে পেরেছে। ইন্তাস ও এসের মতে ভারতীয় কোম্পানিগুলো একাধিক ভারতীয় ভাষায় অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করছে। মাইক্রোম্যাক্সের মতো শীর্ষ দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো ইতোমধ্যেই ইন্ডাস সিস্টেম ব্যবহার করতে লেগে গেছে। তারা তাদের স্মার্টফোনগুলোতে আঞ্চলিক ভাষা প্রয়োগের পেছনে বিনিয়োগ করছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গিয়ে তারা অন্যদের সঙ্গে নিজেদের পার্থক্য রচনা করেছে। ভারতে স্মার্টফোনের একশ’রও বেশি ব্র্যান্ড রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন বাজেটের লোকদের প্রয়োজন মেটাচ্ছে। বাজারে স্যামসাং কোম্পানির-ই আধিপত্য। তারা বাজারের ২৫ শতাংশ দখল করে আছে। তবে বেশকিছু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিও বাজারের অপেক্ষাকৃত ছোট হলেও উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করতে সক্ষম হয়েছে। ভারতীয়দের বার্ষিক গড় আয় যেখানে প্রায় ১৯০০ ডলার সেখানে বেশিরভাগ মানুষের কাছে আইফোন বড্ড বেশি ব্যয়বহুল। তবে এ্যাপল সম্প্রতি ভারতে হাইটেকের প্রাণকেন্দ্র ব্যাঙ্গালরুরে নির্বাচিত কিছু মডেল তৈরি করতে শুরু করেছে এই আশায় যে আরও প্রতিযোগিতামূলক দরে এই পণ্যটি ক্রেতার কাছে পৌঁছানো যাবে। চীনের প্রস্তুতকারকরা ভারতীয় বাজারের অর্ধেকের বেশি দখল করে আছে। গত বছর তারা বেশ বড় ধরনের ব্যবসা করেছে। শ্রীবাস্তব বলেন, চীন ও আমেরিকার তুলনায় ভারতে নবাগত কোম্পানিগুলোর ব্যবসা করার সুযোগ অনেক বেশি। তাদের ভারতীয় বাজারে প্রবেশের পথে বাধা অনেক কম। ভারতে ছোট ব্যবসায়ীদের বড় হওয়ার সুযোগ আছে। অনুবাদ ॥ এনামুল হক
×