ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্রহ্মপুত্র ও ধরলায় ইলিশের ঝাঁক

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

ব্রহ্মপুত্র ও ধরলায় ইলিশের ঝাঁক

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ ব্রহ্মপুত্রে এমন ইলিশের প্রাচুর্য আগে কখনও দেখা যায়নি। সামুদ্রিক আর লোনা পানির মাছ বলে চিরাচরিত ধারণাও বদলে গেছে। পদ্মা-যমুনা ব্রহ্মপুত্র হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ চলে যাচ্ছে ভারতের অসম রাজ্যে। ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে সংযুক্ত তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন পয়েন্টে গোপনে প্রতিদিন শত শত মণ ইলিশ ধরে বিক্রি করেছে জেলেরা। দরিদ্ররাও দীর্ঘদিন পর ইলিশের স্বাদ পেয়েছেন। প্রকাশ্য বেচতে না পারলেও গোপনে ইলিশের বাণিজ্য হয়েছে কোটি টাকার। প্রশাসনের সহায়তায় মৎস্য বিভাগ এ সময়ে ৬০ লাখ টাকার জাল পুড়িয়ে দিলেও বন্ধ ছিলনা ইলিশ ধরার উৎসব। দীর্ঘদিন পর জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় খুশি জেলেরা। দামও ছিল সাধারণের হাতের নাগালে। প্রতি কেজি ২৫০-৩৫০ টাকা। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সোম ও মঙ্গলবার জেলেদের জালে মাছ কিছুটা কম ধরা পড়লেও দাম বেড়ে যাওয়ায় তাতেই পুষিয়ে যাচ্ছে জেলেদের। মৎস্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভাঁটিতে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা সফল হওয়ায় এবং নদীতে পানির প্রবাহ বেশি থাকায় এ বছর ব্রহ্মপুত্র ও সংযুক্ত নদ-নদীতে ধরা পড়ছে ইলিশ। বুধবার সদর উপজেলার যাত্রাপুর ঘাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাছের পাইকাররা নৌকা বোঝাই বরফ আর বাক্স নিয়ে নদের ভেতরে ছুটে গেছেন মাছ ধরারত জেলেদের কাছে। এই এলাকার পাইকার জয়নাল ও মাঈদুল জানান, নিষেধাজ্ঞার সময়ের তুলনায় অর্ধেক মাছ ধরা পড়ছে। তবে দাম বাড়ায় জেলেদের পুষিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ইলিশ ৪০০-৫০০ টাকা কেজি। চিলমারীর মৎস্য আড়তদার ফুল মিয়া জানান, নিষেধাজ্ঞার সময়ে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও তারা প্রকাশ্যে বেচতে পারেননি। জেলেরা সরাসরি বিক্রি করেছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর প্রায় ২০ মণ ইলিশ চিলমারীর ঘাটে এসেছে। ব্রহ্মপুত্র পারের বাসিন্দারা জানান, গত ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর ছিল নদ-নদীতে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এ বছর আকস্মিকভাবে ব্রহ্মপুত্রে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসতে থাকে। যার বেশিরভাগই ছিল ডিমওয়ালা। জেলেরা ডিঙি নৌকায় কারেন্ট জাল নিয়ে রাতভর ইলিশ ধরে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর এখনও দিনে-রাতে ধরছেন ইলিশ। চিলমারী, যাত্রাপুর, মোল্লারহাট, নুনখাওয়াসহ ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন পয়েন্টে গোপনে গভীর রাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত শত শত মণ ইলিশ মাছ বেচাকেনা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা এসে ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা কেজি ধরে সুস্বাদু এ ইলিশ মাছ কিনেছে। পরবর্তীতে দাম বেড়ে যাবে বলে কেউ কেউ ফ্রিজে মজুদ করেছে ব্রহ্মপুত্রের ইলিশ। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ব্রহ্মপুত্রে পানির প্রবাহ বেশি থাকায় মূলত ইলিশ ছুটে এসেছে ব্রহ্মপুত্রে। নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে পালন করা গেলে ভবিষতেও এমন ইলিশের প্রাচুর্য থাকবে বলে আশা করেন তিনি।
×