ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গভীরতা ১৩৫ মিটার! পদ্মা সেতুর চার পিয়ার নিয়ে ব্যস্ত সংশ্লিষ্টরা

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

গভীরতা ১৩৫ মিটার! পদ্মা সেতুর চার পিয়ার নিয়ে ব্যস্ত সংশ্লিষ্টরা

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর চৌদ্দটি পিয়ারের নক্সায় পরিবর্তন নিয়ে এখন সংশ্লিষ্টরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এর মধ্যে চারটি পিয়ারের (স্তম্ভ) নক্সা নিয়ে বেশি ব্যস্ততা। সেতুটির মাওয়া প্রান্তে ৬, ৭, ৮ ও ১০ নম্বর পিয়ারের নিচের মাটি নরম। তাই এই চারটি পিয়ারের পাইল (স্টিলের টিউব) ১৩৫ মিটার গভীর পর্যন্ত স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেতুতে ব্যবহৃত পাইলের ক্ষমতা এবং হ্যামারের ক্ষমতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ ব্যবহৃত টিউবের চেয়ে বেশি ওজনের ড্রাইভ করলে টিউব ভেঙ্গে যাবে। তাই টিউবে পরিবর্তন আনতে হবে এবং বেশি ক্ষমতার হ্যামার নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া বিকল্প হিসেবে রয়েছে এই চারটি পিয়ারে ছয়টি করে পাইলের পরিবর্তে আটটি পাইল স্থাপন করা। কিন্তু এটি করতে গেলে মূল সেতুর নক্সায় পরিবর্তন আনতে হবে। ৬ ও ৭ নম্বর পিয়ারে ইতোমধ্যে ৩টি করে প্রথম পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। তাই এখানে ৮টি করে পাইল স্থাপনের সুযোগ নেই। এসব কারণে সবদিক বিবেচনা করে এই চারটি পিয়ারের ৬টি করে পাইল স্থাপনের মাধ্যমেই নতুন নক্সা অনুমোদন হতে পারে। সেক্ষেত্রে এই চারটি পিয়ারের অদূরে ফলস পাইল স্থাপন করে প্রটেকশন দেয়া হবে। যাতে জাহাজের আঘতে পাইলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলেছেন, পদ্মা সেতুর প্রতিটি পিয়ারেই জাহাজের আঘাত থেকে রক্ষার জন্য প্রটেকশন রাখা হয়েছে। তবে এ চারটির জন্য বেশি প্রটেকশন রাখা হবে। পদ্মা সেতুর অন্যান্য পিয়ারের পাইলের গভীরতা ১২৪ থেকে ১২৮ মিটার। তবে এই চারটি পিয়ারের গভীরতা ১৩৫ মিটার পর্যন্ত বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক বিষয় নিয়ে ভাবছে বিশেষজ্ঞ দল। এই ডিজাইনের দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যে ড্রাফট ডিজাইন সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেল দীর্ঘ বৈঠক করেছে। ১৪টি পিয়ারের নতুন নক্সা নিয়ে অবজারভেশন দিয়েছে বিশেষজ্ঞ দল। ১০টি পিয়ারের ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা না থাকলেও উল্লেখিত ৪টি পিয়ার নিয়ে ভাবনায় ফেলেছে সংশ্লিষ্টদের। পদ্মা সেতুর বাকি ১৪টি পিয়ারের নক্সার চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, ড্রাফট নক্সা পাওয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে এবং আরও কাজ চলবে। সমস্যা সমাধানে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানকে রেনডেল এই ডিজাইন নিয়ে কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও এই নিয়ে সফল সমাধানের চেষ্টা করছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে প্রথম প্যান বসানোর মাধ্যমে এটি এখন দৃশ্যমান। এটি ঘিরে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। তাই প্রতিদিনই মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাওয়া অংশের মাওয়া পুরাতন ঘাট থেকে জশলদিয়া পর্যন্ত ১ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মার তীর সিমেন্টের তৈরি ব্লক ফেলে পদ্মা শাসনের এক-তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখনও বাকি রয়েছে মাওয়া পুরাতন ঘাট থেকে মূল পদ্মা সেতুমুখী নদী শাসনের কাজ। কিন্তু বাকি অংশের কাজ সম্পন্ন করতে আরও বিলম্ব হবে। কারণ, বাকি অংশে নদীর গভীরতা, ভাঙ্গন ও প্রকৃতির ভিন্নতা রয়েছে। তাই এ অংশে বালুর বস্তা ফেলে রাখা হয়েছে নদীর ভাঙ্গনের গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য। এরপর আসন্ন শুকনো মৌসুমে পুনরায় শুরু হবে নদী শাসনের কাজ এমনটাই জানিয়েছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (নদী শাসন) মোঃ শারফুল ইসলাম।
×