ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মালদ্বীপে দুই শতাধিক বাংলাদেশীসহ আটক পাঁচ শ’ বিদেশী

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

মালদ্বীপে দুই শতাধিক বাংলাদেশীসহ আটক পাঁচ শ’ বিদেশী

ফিরোজ মান্না ॥ মালদ্বীপে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বিভিন্ন দেশের কর্মীদের আটক অভিযান চলছেই। দেশটিতে গত কয়েকদিনে ৫শ’ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশী কর্মীর সংখ্যা ২শ’র ওপরে। পুলিশ আটককৃতদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের অভিযানে আটক হচ্ছে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের কর্মী। ওসব দেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। দেশটিতে ৬০ হাজার বাংলাদেশী কাজ করছে। বাজারটি দেশের জন্য অনেক ভাল। তাই ওই বাজারে কোন অস্থিরতা যাতে না হয়, সেজন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। মালদ্বীপ থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, দেশটির রাজধানী মালেসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে। পুলিশ কখন কোথায় হানা দেবে এটা কেউ জানে না। ফলে কর্মীরাও কোথাও লুকানোর জায়গা পাচ্ছে না। মাঝেমধ্যেই অভিযানের এলাকা বাড়িয়ে পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন দেশের কয়েক শ’ নাগরিককে আটক করে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ২শ’ জনের বেশি কর্মী রয়েছে। আটক কর্মীদের ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। যাদের ন্যূনতম বৈধতা আছে তাদের বিষয়ে বাংলাদেশের অনুরোধ রক্ষা করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তবে যাদের একেবারেই কোন বৈধতা নেই তাদের ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। মালদ্বীপে বৈধ কর্মীর চেয়ে অবৈধ কর্মীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ মাঝেমধ্যেই বিশেষ অভিযান চালিয়ে অবৈধদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। মালদ্বীপের বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশ করা হয়েছে, দেশটিতে কোন অবৈধ কর্মী রাখা হবে না। মালদ্বীপ থেকে বাংলাদেশী এক কর্মী টেলিফোনে জানান, পুলিশ গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন এলাকায় হানা দিচ্ছে। তারা বৈধ-অবৈধ যাকেই পাচ্ছে, তাকেই আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। পরে কর্মীদের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখছে। যাদের ন্যূনতম বৈধতা রয়েছে তাদের ছেড়ে দিচ্ছে। যাদের কাগজপত্র নেই তাদের আটক রাখছে। দেশ থেকে এক শ্রেণীর জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ট্যুরিস্ট ভিসা দিয়ে অনেককে মালদ্বীপ পাঠিয়ে দিচ্ছে। ট্যুরিস্ট হিসেবে এখানে এসে নানা কাজে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। গত দুই বছরে এ সংখ্যা বিপুল হারে বেড়েছে। যারা বৈধভাবে এ দেশে এসেছে তারা এখন অবৈধদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক কম হয়ে গেছে। এতে বৈধ কর্মীদের মাঝেমধ্যে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এটা বন্ধ না করতে পারলে এখানে বৈধ কর্মীরা নানা অসুবিধায় পড়বে। মালদ্বীপে বিভিন্ন দেশের প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার অভিবাসী কর্মী কাজ করছে। এর মধ্যে ৬০ হাজার কর্মী রয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের পরেই ভারতীয় কর্মীদের স্থান। বাংলাদেশী কর্মীরা মাছ ধরা, নির্মাণ ও পর্যটন খাতে কাজ করছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মালদ্বীপের বাজারটি আগে বেশ শান্ত ছিল। এখানে বৈধভাবেই অনেক কর্মী গেছে। হঠাৎ কিছু অসাধু জনশক্তি ব্যবসায়ী বাজারটিকে ঘোলা করে চলেছে। তারা প্রতিদিন ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে কর্মী পাঠিয়ে বাজারটি অস্থির করে তুলেছে। মালদ্বীপে একজন কর্মী পাঠাতে তারা পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা নিচ্ছে। এদের অতিলোভের কারণে বাজারটি ঠিক রাখা আমাদের জন্য মুশকিল হয়ে পড়বে। তবে মালদ্বীপের বাজারটি যাতে কেউ নষ্ট করতে না পারে সে চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় উঠে এসেছে কোন কোন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মালদ্বীপে কর্মী পাঠাচ্ছে। তাদের একটি তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাদের কারণে বাজার নষ্ট হচ্ছে তাদের লাইসেন্স স্থগিত করা হতে পারে। মালদ্বীপসহ বেশ কয়েকটি দেশে ট্যুরিস্ট ভিসায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, এ রকম কিছু লাইসেন্সধারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে বেশ কয়েকটি লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। যারা এ কাজ করছে তারা একদিকে যেমন গরিব মানুষের সর্বনাশ করছে, অন্যদিকে ভাল বাজারকে নষ্ট করে দিচ্ছে। মালদ্বীপের বাজারে কোন অস্থিরতা ছিল না। বাজারটিতে খুব নিরিবিলি কর্মীরা যাচ্ছিল। কিন্ত হঠাৎ বাজারটি অস্থির হয়ে উঠেছে। এর পেছনে একটাই বড় কারণ, তা হচ্ছে ট্যুরিস্ট ভিসায় কর্মী পাঠানো। যারা ট্যুরিস্ট ভিসায় যাচ্ছে তারা সেখানে কাজ করতে গিয়ে নানা জটিলতার শিকার হচ্ছে। তাদের লুকিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। দেশে টাকা পাঠাতে গেলে দালালদের সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। দালালরা এ সুযোগে কিছু টাকা তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। অবৈধ কর্মীদের বিরুদ্ধে এ কারণেই মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষ অভিযান চালাচ্ছে। বৈধ কর্মীদের বেলায় কোন অসুবিধা হবে না। এরপরও আমরা মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছি। উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশটির আদালত যৌনকর্মী পাচারের দায়ে তিন বাংলাদেশীকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দিয়েছে। ট্যুরিস্ট ভিসায় কর্মী পাঠানোও এক ধরনের মানবপাচার হিসেবে বিবেচনা করে মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষ। দেশটির আইনে মানবপাচার বড় ধরনের অপরাধ। আমাদের দেশেও মানবপাচার বড় ধরনের অপরাধ। যারা এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের আইনের আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
×