ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাঘের ঘরে

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

বাঘের ঘরে

পুরো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হতে পারে মাত্র অল্প ক’জন লোভী, দুর্নীতিপরায়ণ ও অপরাধমনস্ক পুলিশ সদস্যের কারণে। শঙ্কা হয়, টেকনাফের ঘটনা এমনই একটি দৃষ্টান্ত হবে কিনা। টেকনাফ পৌরসভার এক কম্বল ব্যবসায়ীকে মঙ্গলবার ডিবি পুলিশের দল অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারা ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে মুক্তিপণস্বরূপ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। ব্যবসায়ীর ভাই বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানালে তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং সাত ডিবি পুলিশ আটক হয়। বর্তমান সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব সদস্যদের হাতে সাত খুনের ঘটনার বিচার তারই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ইতোমধ্যে টেকনাফের অপহরণ ঘটনার অভিযুক্তদের বরখাস্ত করা হয়েছে। আটককৃত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণই যথেষ্ট নয়, আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। রক্ষক হয়ে ভক্ষকের অপকর্মটি করলে তার শাস্তি যথোপযুক্ত হবে দেশের মানুষ এটাই চায়। স্বল্পতম সময়ের ভেতর এসব ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার সম্পন্ন হলে মানুষের মনে আস্থা ফিরে আসবে। তবে একইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সুস্পষ্ট বার্তা পৌঁছানো যে, দেশের কোন নাগরিকের সঙ্গে এ জাতীয় গর্হিত অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না। যখন নৈতিকতা ও কর্তব্যবোধ থেকে পুলিশের কেউ কেউ বিচ্যুত হয়, সেক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির দৃষ্টান্তই তাদের এ হেন অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারে। সর্বপ্রকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির পূর্বশর্ত হলো শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুলিশের ওপর সমাজ নির্ভরশীল। বিশেষ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুলিশের ওপর সাধারণ নাগরিকরা যেমন ভরসা করেন, তেমনি কোন কোন পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগেরও অন্ত নেই। পুলিশের দায়িত্বহীনতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়ে থাকে। পুলিশের ভাল কাজ ছাপিয়ে তার দুর্নীতি ও কিছু গর্হিত অপরাধের কথা ফলাও করে প্রচারিত হওয়ার সংস্কৃতি এখনও রয়েছে। সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ সম্বন্ধে এক মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। নিকট অতীতে অপরাধ দমনে পুলিশের চ্যালেঞ্জ বহুলাংশে বেড়ে গেছে। তবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ অপরাধীর পেছনে ছোটে পুলিশের পেশার এই বৈশিষ্ট্যের দিকে সমাজের সহানুভূতির দৃষ্টি দেয়া আরও জরুরী। পুলিশ বাহিনীকে মানুষ দুর্নীতিদমন, সন্ত্রাস ও জঙ্গী নির্মূলে সাহসী ভূমিকায় বাঘের মতো দেখতে চায়। তবে এ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটিতে যারা ‘ঘোগ’ সেজে ঘাপটি মেরে আছেন এবং জনগণের অর্থ-সম্পদ লুটে নিতে ব্যস্ত তাদের সকল ক্ষেত্রে চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী উপযুক্ত বিচারের আওতায় এনে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তিকে অধিকতর উজ্জ্বল করার কোন বিকল্প নেই।
×