ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে চালু উড়াল সড়ক

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

অবশেষে চালু উড়াল সড়ক

ভোগান্তি আর প্রতীক্ষার দীর্ঘ প্রহর পার হওয়ার পর অবশেষে যানজট আক্রান্ত রাজধানীতে আরও একটি উড়াল সড়ক চালু হলো। শ্লথ গতিতে নির্মাণ কাজের আরেক উদাহরণ হয়ে থাকা এই সড়ক নির্মাণে দফায় দফায় সময় ও অর্থ বাড়ানো হয়েছে। প্রথম দফায় প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে এমনভাবে যে, বাড়তি অর্থে আরও কাঠামো নির্মাণ করা যেত অনায়াসে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় নয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই উড়াল সড়কের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। মগবাজার থেকে মৌচাক পর্যন্ত এই সড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ করা যায়নি। নক্সায় ত্রুটি থাকায় পিলার ভেঙ্গে নতুন করে পিলার তৈরি করতে হয়। প্রথমে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে নক্সায় পরিবর্তন করায় ব্যয় বাড়ে। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে বাড়তে এক হাজার ২১৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৭৭৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিয়েছে সৌদি উন্নয়ন তহবিল এবং ওপেক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিল। প্রকল্পের প্রতি মিটারে খরচ হয়েছে ১৩ লাখ টাকা। যা ব্যয়বহুল। চার লেনের এই উড়াল সড়ক ছয়টি মোড় অতিক্রম করেছে। সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর ও মালিবাগ মোড়। এর মধ্যে মগবাজার, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজারে রেললাইন অতিক্রম করেছে এই উড়াল সড়ক প্রকল্প। এই উড়াল সড়ক তিনভাগে ভাগ করা। একটি অংশ সাতরাস্তা মগবাজার হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। গত বছরের মার্চ মাসে এই অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর নিউ ইস্কাটন থেকে মৌচাক পর্যন্ত উড়াল সড়কের একদিক খুলে দেয়া হয়। তৃতীয় ধাপে এফডিসি মোড় থেকে কারওয়ান বাজার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় ১৭ মে। ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মৌচাক মালিবাগ-শান্তিনগর রাজারবাগ-মগবাজার অংশ উদ্বোধন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনকালে বলেছেন, ‘দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এসেছে, আর সে কারণে গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক। এই উড়াল সড়ক যানজট নিরসনে বড় ভূমিকা রাখবে।’ চার বছর ধরে এই এলাকার রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি আর নির্মাণ কাজের দীর্ঘসূত্রতা জনজীবনের ভোগান্তিকে দুঃসহ অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। ভয়াবহ দুর্ভোগ আর দুর্বিষহ অবস্থা থেকে এখন পরিত্রাণ মিলবে। দেশে এখন পর্যন্ত যে কয়টি উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, তার মধ্যে মৌচাক-মালিবাগ উড়াল সড়কটি দৈর্ঘ্যে দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে রয়েছে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়াল সড়ক। যার দৈর্ঘ্য দশ কিলোমিটার। উড়াল সড়কের কারণে যান চলাচলের সময় কমে আসবে। রাজধানীর যানজট নিরসনে ১৯৯৯ সালে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ডের সমীক্ষা অনুযায়ী যানজট নিরসনে কুড়িটি পয়েন্টে উড়াল সড়ক, আন্ডারপাস, বল বে, বাস টার্মিনাল, পার্কিং এরিয়া ইত্যাদি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। এরই অংশ হিসেবে নির্মিত হয় মহাখালী, মেয়র হানিফ ও খিলগাঁও উড়াল সড়ক। ২০১১ সালে সদ্য চালু হওয়া মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়ক অনুমোদন পায়। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে নির্মাণ কাজের মধ্যেই ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ে নক্সায়। ফলে চলে ভাঙ্গা-গড়ার খেলা, গণমাধ্যমে এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। তবে উড়াল সড়কের নিচের রাস্তা বিশেষত সিদ্ধেশ্বরী মগবাজার চৌরাস্তা এলাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এখনও জটিল হবে বলে মনে করে ট্রাফিক বিভাগ। এখানে কয়েক স্থানে আছে একমুখী সড়ক। তদুপরি বিভিন্ন পয়েন্টে উড়াল সড়কে ওঠা-নামার জন্য সংযোগ সড়কের সংখ্যাও কম। ফলে সেসব পয়েন্টে যানজট হতেই পারে। এই সড়কটির নির্মাণ কাজে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। দু’পাশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জনগণ ধৈর্য সহকারে সব সয়েছে। সময়ের কাজ সময়ে শেষ না হওয়ার উদাহরণ হয়ে থাকা এই সড়কটি যানজট বাড়ানোর সহায়ক যেন না হয়- সেই প্রত্যাশা।
×