ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরে দুই টাকায় চা ও পান

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

নাটোরে দুই টাকায় চা ও পান

বর্তমান সময়ে এক কাপ চা কিংবা বাহারি মসলাযুক্ত একটি পান বিক্রি হয় অন্তত চার থেকে পাঁচ টাকায়। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু বাগাতিপাড়া উপজেলার নওপাড়া গ্রামের এক টাকার মোড়। এখানে এক টাকায় পাওয়া যায় এক কাপ চা এবং সমপরিমাণ টাকায় একটা পান। আর এই মূল্যে বেচাবিক্রি করে উপজেলার নওপাড়া গ্রামসহ আশপাশের গ্রাম তো বটেই জেলার বাইরেও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন একই গ্রামের সোবাহান ব্যাপারীর ছেলে রজব ব্যাপারী লালন। মূল্য কম হওয়ায় সকাল বিকাল কাস্টমারের আনাগোনায় মুখরিত থাকে পুরো এলাকা। এই এক টাকার মোড়ের খ্যাতি এখন আর শুধু বাগাতিপাড়ায় নয়, জেলার বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। এক টাকায় চা বিক্রি করে এলাকার নাম চারদিকে ছড়িয়ে দিতে অবদান রাখায় জায়গার মাসিক ভাড়া নেন না জায়গার মালিক মনিরুল ইসলাম। বৈধপথে অল্প উপার্জন করে জনগণকে ভালবেসে যে সুখী হওয়া যায় তার জলজ্যান্ত প্রমাণ দিয়েছেন চা বিক্রেতা লালন। মুনাফা নয়, জনগণকে ভালবেসে আর ভালবাসা নিয়ে খুব সাদামাটাভাবে জীবন সংসার পাড়ি দেওয়ার বাসনা নিয়ে ১৯৯১ সালে মাত্র পাঁচশ টাকা দিয়ে লালন শুরু করেন চায়ের দোকান। গ্রামের মানুষেরা যাতে কম টাকায় চা ও পান খেতে পারেন, তার জন্যই লালন এক টাকায় চা ও এক টাকায় পান বিক্রি শুরু করেন। প্রথম দিকে অবশ্য পঞ্চাশ পয়সায় চা বিক্রি শুরু করেন। দোকান শুরুর কিছুদিন পরে স্থানীয় জনগণের উৎসাহ ও সহযোগিতা পেতে শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই এক টাকায় চায়ের কথা আশ পাশের গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর ইচ্ছা জন্ম নিলে তিনি অভাব অনটনের মধ্যেও এক টাকায় চা ও এক টাকায় পান বিক্রি করে চলেন। এর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন প্রায় বার’শ টাকার চা ও সমপরিমাণ টাকার পান বিক্রি করেন। জনগণের প্রতি লালনের ভালবাসা দেখে তার সঙ্গে পরিণয়ে বাধা পড়েন একই গ্রামের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সুবর্ণা আক্তার। তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। লালনের গল্প এখানেই শেষ নয়। এক টাকায় চা ও এক টাকায় পান বিক্রি করেই তিনি তার স্ত্রীকে উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত করে চলেছেন। স্থানীয়রা ছাড়াও জেলার বাইরের অনেক উৎসুক লোকেরা চা খেতে চলে আসেন বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়ার ইউনিয়নের নওপাড়া এক টাকার মোড়ে। গত বৃহস্পতিবার বাগাতিপাড়া নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন বানু ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম এক টাকার মোড়ে গিয়ে চা পান করেন এবং ওই মোড়ে যাতে লোকেরা আরাম আয়েশে বসে চা পান করতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এক টাকার মোড়ে চা খেতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন বানু চা বিক্রেতা লালনকে জিজ্ঞেস করেন তোমার কোন কিছু চাওয়া পাওয়া আছে কিনা? উত্তরে লালন নিজের জন্য কিছুই চাননি। চেয়েছেন শুধু জনগণের জন্য। -কালিদাস রায়, নাটোর থেকে
×