ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেল নিয়ে কতই না কথা...

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

বেল নিয়ে কতই না কথা...

বাঙালী প্রবাদের দুটি কথা- গাছে বেল পাকলে তাতে কাকের কি! ন্যাড়া বেলতলা একবারই যায়। বেল ফলের খোসাটি বেশ শক্ত। কোন এক কালে ন্যাড়া ও টাকওয়ালা বেলতলা দিয়ে যাওয়ার সময় মাথায় বেল পড়লে বুঝতে পারেন কত ধানে কত চাল। মনে হবে ইটের মতো গোলাকৃতির কিছু একটা পড়ল। দ্বিতীয়বার তিনি আর বেলতলা দিয়ে যান না। সেই থেকে বোধ হয় এই প্রবাদ। আবার কাক বেলে ঠোকর দেয় না। কোন এককালে কাক বেলে ঠোকর দিতে দিয়ে ঠোঁটই হয়তো ভেঙে ফেলে। তারপর কাকের আক্কেল হয়েছে। কথা দুটি বাঙালীর নানা উদাহরণে রূপক অর্থে ব্যবহার হয়। বেলই একমাত্র ফল যার খোসা খুবই শক্ত। দুই ধরনের বেল পাওয়া যায় বঙ্গীয় এই বদ্বীপে। একটা সাধারণ বেল, আরেকটা কতবেল। দুই বেলই লেবু পরিবারের সদস্য। ইংরেজীতে বেলকে বলা হয় ‘উড এ্যাপেল’। যার অর্থ কাঠ আপেল। ব্রিটিশরা এই বেল দেখে নাম দিয়েছিল ‘বেঙলী কুইন্স’। এর অর্থ এক ধরনের হলদেটে নাসপাতি। বেলের বৈজ্ঞানিক নাম ‘এ্যাইগেল-মারমিলস’। বেলের জন্ম ভারতবর্ষে। সংস্কৃত নাম ‘বিল্ব’। বেল গাছ ১০ থেকে ১৬ মিটার উচ্চতার হয়ে থাকে। গাছ যখন ছোট তখন তীক্ষè কাঁটা থাকে। গাছ যত বড় হয় কাঁটাও তত কমে যায়। বর্ষা শরৎ হেমন্তে বেল পাওয়া যায় বেশি। কখনও শীতেও মেলে। বেলও হাইব্রিড এসেছে। শীতে গাছের সকল পাতা ঝরে বসন্তে নতুন পাতা গজায়। পাতা ত্রিপত্র যুক্ত সবুজ ডিম্বকার। পত্রফলকের অগ্রভাগ সূঁচালু। ফুল প্রথমে হালকা সবুজ থেকে সাদায় পরিণত হয়। ফুলে মিষ্টি গন্ধ আছে। ফল গোলাকার ও বড়। ফলের ভিতরে শাঁস ও ১০ থেকে ১৫টি করে কোয়া কয়েক খ-ে বিভক্ত। প্রতিটি খ- চটচটে আঠার মতো। অনেক বীজ লেপে থাকে। শাঁসের রং কমলা ও হলদেটে। কাঁচা ফলের উপরিভাগের রং সবুজ। পাকলে হলুদ হয়ে যায়। তবে কতবেলের উপরিভাগ প্রথমে সবুজ ধীরে ধীরে হালকা সবুজে পরিণত হয়। সাধারণ বেল ও কতবেলের স্বাদ কিছুটা আলাদা। তবে সাধারণ বেল যেভাবে শরবত পান করা যায় কতবেলে ততটা নয়। কতবেল ভেঙ্গে খেতেই বেশ মজা। এই বেলের আচার বানানো যায়। বেল ও বেলের পাতার ঔষধি গুণাগুণ অনেক। বেলের একটি করে পাতা ঘি দিয়ে ভেজে সামান্য চিনিসহ খেলে স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়। বেলের শরবত হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়। কোষ্ঠ্য কাঠিন্য সারিয়ে তোলে। পেট শীতল রাখে। গরমে বেলের এক গ্লাস শরবত দেহকে শীতল করে দেয়। বেলের পাতার রস সামান্য মধুসহ খেলে চোখের ছানি দূর হয়ে দৃষ্টিশক্তি ভাল থাকে। বেলের মধ্যে আছে ভিটামিন সি, প্রোটিন, স্নেহ, শর্করা, রিবোফ্লেভিন, এ্যাবজর্বিক এ্যাসিড, টার্টারিক এ্যাসিডসহ নানা উপাদান। সকল উপাদান মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজায় বেল পাতার দরকার হয়। শিবপূজায় ত্রিনয়নের প্রতীক হিসাবে ব্যবহার হয় বেল পাতা। তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজায় গণেশের ডান পাশে নয়টি গাছের উপকরণের মধ্যে বেল পাতা রাখা হয়। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×