ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খেলনা বিক্রেতা রুহুল আমিন

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

খেলনা বিক্রেতা রুহুল আমিন

গ্রাম-গঞ্জে, বাসস্ট্যান্ডে, হাটে-বাজারে হেঁটে হেঁটে শিশুদের খেলনা বিক্রি করছেন রুহুল আমিন। দীর্ঘ দশ বছর ধরে এ পেশায় ডুবে আছেন তিনি। রুহুল আমিন এক সময় গ্রামের বাড়িতে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। রুহুল আমিন আগের মতো আর পরিশ্রম করতে পারেন না। তাই তিনি কৃষি কাজ ছেড়ে চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। স্বল্পশ্রমে কাজ পেতে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু কোথাও তিনি স্বল্পশ্রমের কাজ পাননি। অবশেষে বেছে নেন শিশুদের খেলনা বিক্রির কাজে। শিশুরা কোমলমতি। তাই স্বল্প টাকায়ও শিশুদের বিনোদন দেয়া যায়। শিশুদের জন্য রয়েছে পুতুল, বল, বাঁশি, দোলনা, পাম্প ঘোড়া, পিস্তল, গাড়ি, ট্রেনসহ নানা ধরনের খেলনা। এ খেলনা বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন এদেশের বহু মানুষ। তাদের মধ্যে রুহুল আমিনও একজন। বুধবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ডে রহুল আমিনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি এ সময় জানান তার সুখ-দুঃখের নানা কাহিনী। রুহুল আমিনের বয়স পঁয়ষট্টির কোটায়। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানার পুযুয়াকান্দায়। এক সময়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে কৃষি কাজ করে জীবন ধারণ করতেন।। নিজের বাড়িঘর ছাড়া আর কিছুই নেই তার। নিজের জমি-জমা নেই। তবুও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করতেন। কখনও কখনও অন্যের জমিতে কাজ করতেন। কিন্তু দিন দিন বয়স ভাটার দিকে যাচ্ছে। তাই তিনি আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না। একটু কম পরিশ্রম করে আয়ের পথ খুঁজতে থাকেন তিনি। তাই তাকে ছাড়তে হয় গ্রামের বাড়িও। চলে আসতে হয় রাজধানী ঢাকায়। ঢাকার লালবাগে ভাড়া থাকেন রুহুল আমিন। একদিন অন্য একজনকে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে খেলনা বিক্রি করতে দেখে নিজেই এ কাজটি বেছে নেন। শুরু করেন খেলনা বিক্রির পেশা। তিনি ঢাকার চকবাজার থেকে পাইকারি শিশুদের নানা ধরনের খেলনা কিনে এনে গ্রাম-গঞ্জে, বাসস্ট্যান্ডে, হাটে-বাজারে হেঁটে হেঁটে বিক্রি শুরু করেন। বিক্রি করতে করতে ছুটতে হয় এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। তিনি এখন বিক্রি করছেন পাম্প ঘোড়া, বাঁশি, গাড়ি, পুতুল ও বলসহ নানা ধরনের খেলনা। সকাল হলেই একটি ব্যাগ নিয়ে বের হন বাসা থেকে। বিক্রি শেষে রাতে ফিরেন বাসায়। তিনি বিভিন্ন মেলায় ঘুরেও খেলনা বিক্রি করেন। তিনি রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানে খেলনা বিক্রির জন্য গেছেন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার আশপাশের জেলা-উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেশি যাতায়াত রয়েছে তার। রহুল আমিনের বিক্রি করা খেলনা সব শ্রেণীর লোকজনই তাদের শিশুদের জন্য কিনে নিয়ে যান। প্রতিদিন তিনি এক হাজার টাকার খেলনাও বিক্রি করতে পারেন। এতে তার ৪শ’/৫শ’ টাকা আয় হয়। তার এ আয়ের টাকাই সংসারের হাঁড়ি জ্বলছে। তার ৩ ছেলে ২ মেয়ে। স্ত্রী শহর বানু। বড় ছেলে সেলিম গ্রামের বাড়িতে বেকারিতে কাজ করে। তার এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়ে এখনও বিয়ে হয়নি। টাকার অভাবে নিজেও লেখাপড়া করতে পারেননি। এখনও অভাব-অনটনের কারণে ছেলে- মেয়েদেরও লেখাপড়া করাতে পারছেন না। এটাই তার দুঃখ। তবুও চলছে তার নিত্যদিনের পথচলা।এটাই রুহুল আমিনের দিনকাল। -মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে
×