ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দ রশিদ আলম

টাকার জাদুঘর

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

টাকার জাদুঘর

এখানে আড়াই হাজার বছর আগের তৈরি করা পাঞ্চমার্ক, বাংলার সুলতানদের তৈরি মুদ্রা, দিল্লীর সুলতানদের তৈরি মুদ্রা, মুঘল সম্রাটদের তৈরি মুদ্রাসহ বিশ্বের ক্ষুদ্র অঞ্চল, সব স্বাধীন দেশ, বিলুপ্ত দেশ, বিলুপ্ত জনপদ তৈরি করা মুদ্রা প্রদর্শন করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রায় প্রতিটি দেশে একাধিক বিষয়ের ওপর জাদুঘর তৈরি করা হয়। একমাত্র লক্ষ্য থাকে নিজের দেশকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা। যদি জাদুঘরের অস্তিত্ব না থাকত তাহলে কোন জাতি বিশ্ববাসীর সামনে নিজের দেশকে, নিজের দেশের ইতিহাসকে কোনদিনই সবার সামনে তুলে ধরতে পারত না... রাজধানী ঢাকার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশু-কিশোরদের মাঝে যখন বাংলাদেশের প্রথম এক পয়সার ধাতব মুদ্রা উপহার দেয়া হলো, তখন তাদের প্রথম প্রশ্ন ছিল এই মুদ্রাটা কবে তৈরি হয়েছিল? এই এক পয়সা দিয়ে কি পাওয়া যেত? প্রশ্নের উত্তরের চেয়ে বড় উত্তর ছিল এর ভেতর দিয়ে তোমরা সংগ্রহের জগতে প্রবেশ করলে। যখন একজন সংগ্রাহক মুদ্রা, ব্যাংক নোট, ডাকটিকিট, বই, মানচিত্র বা তার পছন্দের কোন কিছু সংগ্রহ শুরু করেন তখন তিনি হতাশায় ভুগতে থাকেন তার সংগ্রহশালা দেখে কিন্তু যারা ধৈর্যের সঙ্গে লেগে থাকেন, এক সময় তাদের সংগ্রহশালা একটি সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে যায়। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান কয়েকজন মুদ্রা সংগ্রাহক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহায়তায় ঢাকার মিরপুরে একটি মুদ্রা জাদুঘর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এই জাদুঘরের নামকরণ করা হলো ‘টাকা জাদুঘর।’ বাংলাদেশের কয়েকজন প্রথম শ্রেণীর মুদ্রা সংগ্রাহক ড. আতিউর রহমানকে এই টাকা জাদুঘরের জন্য মুদ্রা উপহার দিয়ে নিজেদের সম্মানিত করার সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নামটি লিখিয়ে ছিলেন। সেই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে আমিও একজন। বহু কাঠখড় পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করল। এই টাকা জাদুঘরে প্রাচীন যুগ থেকে সমকালীন সময়ের সব ধরনের ধাতব মুদ্রা, ব্যাংক নোট ও মুদ্রা তৈরির উপকরণ প্রদর্শিত হচ্ছে। এখানে আড়াই হাজার বছর আগের তৈরি করা পাঞ্চমার্ক, বাংলার সুলতানদের তৈরি করা মুদ্রা, দিল্লীর সুলতানদের তৈরি করা মুদ্রা, মুঘল সম্্রাটদের তৈরি করা মুদ্রাসহ বিশ্বের ক্ষুদ্র অঞ্চল, সব স্বাধীন দেশ, বিলুপ্ত দেশ, বিলুপ্ত জনপদ তৈরি করা মুদ্রা প্রদর্শন করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রায় প্রতিটি দেশে একাধিক বিষয়ের ওপর জাদুঘর তৈরি করা হয়। একমাত্র লক্ষ্য থাকে নিজের দেশকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা। যদি জাদুঘরের অস্তিত্ব না থাকত তাহলে কোন জাতি বিশ্ববাসীর সামনে নিজের দেশকে, নিজের দেশের ইতিহাসকে কোনদিনই সবার সামনে তুলে ধরতে পারত না। জাদুঘরে গেলে আপনি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারবেন। হাজার হাজার বছর আগে যেসব নিদর্শন ইতিহাসের পাতায় চলে গেছে তাও জাদুঘরে গেলে দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে প্রথমবারের মতো ‘টাকা জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রাচীন ও বর্তমান যুগের মুদ্রা সংগ্রহের প্রতি আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। যদি টাকার জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত না হতো তাহলে এই আগ্রহ তাদের ভেতরে তৈরি হতো না। টাকা জাদুঘর হচ্ছে দেশের প্রথম ডিজিটাল জাদুঘর। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কম্পিউটার বিজ্ঞানী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ডিজিটাল পরিকল্পনা মোতাবেক টাকা জাদুঘরকে সাজানো হয়েছে। আপনি যখন টাকা জাদুঘরে উপস্থিত হবেন তখন মনে হবে টাকার রাজ্যে প্রবেশ করেছেন। চার পাশে শুধু দেশ-বিদেশের টাকা-পয়সা অথবা বহু মূল্যবান মুদ্রার সঙ্গে পরিচিত হবেন। একবার যখন টাকা জাদুঘরে উপস্থিত হবেন তখন আপনার আবারও এখানে আসার আগ্রহ তৈরি হয়ে যাবে। মাত্র পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে এক লাখ টাকার একটি স্মারক ব্যাংক নোটে আপনার ছবি মুদ্রিত করতে পারবেনÑ যা প্রায় প্রতি দর্শনার্থী করে থাকেন। টাকা জাদুঘরে একটি সেলস সেন্টার রয়েছে। এখানে বাংলাদেশের সব স্মারক ধাতব মুদ্রা ও ব্যাংক নোট বিক্রি করা হয়। আপনি যদি মুদ্রা সংগ্রহের প্রতি আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে টাকা জাদুঘরে উপস্থিত হয়ে সেলস সেন্টার থেকে আপনার পছন্দের মুদ্রা সংগ্রহ করতে পারবেন। বুধবার থেকে শনিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টাকা জাদুঘর খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার বন্ধের দিন। শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টাকা জাদুঘর খোলা থাকে। টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করে আপনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুদ্রার সঙ্গে পরিচিত হন। আগামী ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে টাকা জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় নতুন করে টাকা জাদুঘরকে সাজানো হবে। সেখানে একটি গবেষণাগার, পাঠাগারসহ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। টাকা জাদুঘরের ঠিকানা : ঢাকার মিরপুরের বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির দ্বিতীয় তলায়। কিভাবে যাবেন: রাজধানীর যে কোন প্রান্ত থেকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর। সেখান থেকে রিক্সাযোগে টাকা জাদুঘরে পৌঁছতে পারবেন। আর যারা গোলচত্বর থেকে হেঁটে যেতে চান তাদের সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় লাগবে। লেখক : সাধারণ সম্পাদক, টাকা জাদুঘর ডোনার ক্লাব
×