ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাজনীন বেগম

পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিক পারিবারিক ক্ষমতায়ন

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিক পারিবারিক ক্ষমতায়ন

বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির একটা বিরাট অংশজুড়ে আছে পোশাক শিল্প কারখানা। রফতানি আয়ের বড় অংশও আসে এই শিল্প খাত থেকে। আরও উল্লেখযোগ্য এই পোশাক শিল্প কারখানার সিংহভাগ শ্রমিকই নারী। জনসংখ্যার অর্ধাংশ নারী হলেও উন্নয়নের সব সূচকে নারীর অংশগ্রহণ সমান নয়। কিন্তু পোশাক শিল্প কারখানায় নারীর সক্রিয় ভূমিকা, পোশাক শিল্প খাতকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে তা সত্যিই ঈর্ষণীয়। শিল্প কারখানার ইতি এবং নেতিবাচক সবকিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করে নারীরা আজ এই খাতকে শুধু বাঁচিয়েই রাখেনি উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কারখানাগুলোতে নারী-পুরুষের শ্রম এবং সময়ের কোন তারতম্য না থাকলেও মজুরিতে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। শিল্প-কারখানার অভ্যন্তরীণ নানাবিধ সমস্যা তো আছেই। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এসব শিল্প- কারখানার নারী শ্রমিকের ওপর এক জরিপ চালায়। এই গবেষণা তথ্যে বেরিয়ে আসে পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন এবং কর্তৃত্বের কাঠামোর এক ব্যাপক রদবদল। সময়ের দাবিতে এসব সূচকের মানোন্নয়ন দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধির দিকনির্দেশক। নারীরা সহিংস অবস্থায় নানা প্রতিকূলতার শিকার হলেও পারিবারিকভাবে উপার্জনক্ষম নারীর ক্ষমতায়নে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয় গবেষণালব্ধ এই সমীক্ষায়। গবেষণায় ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের ৪৮টি পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৪ জন নারী শ্রমিকের সাক্ষাতকার নেয়া হয়। এসব তথ্য সংগৃহীত হয় ২০১৩-১৪ সালের অর্থবছরে। বাড়তি শ্রমসহ দিনে গড়ে প্রায় ১৮ ঘণ্টা শ্রম বিনিয়োগ করে এই পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকরা। এই গবেষণা তথ্যে বেরিয়ে আসে এই শিল্পে ৮০% নারী শ্রমিক পরিবারে সিদ্ধান্ত রাখার ক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছেন। ৬৯% নারী শ্রমিক মনে করেন তাদের শ্রম এবং উপার্জিত অর্থে সংসারে নানামাত্রিকে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সিংহভাগ নারী অভিমত দেন সন্তানের লালন পালন, শিক্ষাদান এমনকি বিয়ের ব্যাপারেও তাদের মতামতকে সানন্দে গ্রহণ করা হয়। তারা শুধু যে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে তা নয় সামাজিক প্রতিষ্ঠান পরিবার ও শিক্ষায় এবং তাদের অভিমত ব্যক্ত করার স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এটা যে কোন দেশের উন্নয়নের বিরাট চালিকাশক্তি। কারণ অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জাড়িয়ে থাকে সামাজিক প্রগতিও। সুতরাং আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমানতালে মেয়েরা এগিয়ে যেতে না পারলে সার্বিক উন্নয়নের গতিধারা বিঘ্নিত হয়। দেশ সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌঁছাতে বিলম্ব করে। পারিবারিকভাবে ক্ষমতায়নও কর্তৃত্বের কাঠামো শক্ত হলে নারীরা সবক্ষেত্রেই তাদের মতামত মজবুত করতে পারবে। আসলে সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবার থেকেই তো সবকিছু শুরু হয়। এই সমীক্ষায় শিল্প-কারখানায় নারী শ্রমিকদের দৈন্যদশার কিছু চিত্র থাকলেও সামাজিক পরিম-লে তাদের অবস্থান মজবুত হওয়ার দিকনির্দেশনাও আছে। কর্মঘণ্টা, মজুরি, কর্মস্থলের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার তারতম্য ঘটলেও গবেষণায় নানা পর্যায়ে নারী শ্রমিকের অবস্থার ইতিবাচক দিকগুলোও বিবেচনায় আনা হয়েছে। এসব নারী শ্রমিক নিজেরাই তাদের অধিকার এবং স্বাধীনতা নিয়ে সচেতন। সুতরাং তারা নিজেরাই স্বাধীনভাবে তাদের অভিমত ব্যক্ত করতে সদা তৎপর। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারীরা সমাজ ও পরিবারে তার অবস্থান দৃঢ় করতে সব সময়ই আগ্রহী। এটা সামগ্রিক উন্নয়নের অন্যতম সূচক। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে গেলে নারী-পুরুষ সবাইকে তার শ্রম, সময় অর্থ ব্যয় এবং অভিমত ব্যক্ত করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের সামগ্রিক সাফল্যে নারী-পুরুষ উভয়কেই সমান অংশীদারিত্ব গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে দেশের উন্নয়ন বিঘ্নিত হবে, সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে।
×