ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লিপি খন্দকার

কর্মস্থলে যাতায়াতে নারীদের জন্য আলাদা পরিবহন জরুরী

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

কর্মস্থলে যাতায়াতে নারীদের জন্য আলাদা পরিবহন জরুরী

লিপি খন্দকার। একজন শিল্পী। পোশাকের শিল্পী। পোশাক ডিজাইনের পাশাপাশি তিনি একাধারে বিবিআনা ফ্যাশন হাউসেরও কর্ণধার। বাংলাদেশের মানসম্মত ফ্যাশন হাউসের কথা বলতে গেলে ‘বিবিআনা’র নাম সবার আগে চলে আসবে। একযুগের বেশি সময় সাধনার ফসল বিবিআনা ও দেশের বর্তমান ফ্যাশন শিল্প নিয়ে লিপি খন্দকারের সঙ্গে কথা বলেছেন - হাসান সাইদুল কেমন আছেন? খুব ভাল আছি আপনার শৈশব পুরান ঢাকায় আমার শৈশব এবং বেড়ে ওঠা। আমরা ৫ বোন ২ ভাই। বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী মা গৃহিণী। লেখাপড়া ঢাকাতেই। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় পেইন্টিং বিভাগ থেকে গ্রাজুয়েশন। পরবর্তীতে এনআইডি থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করি। ফ্যাশন হাউস বিবিআনার বর্তমান অবস্থা কি? বিশেষ দিন আসলে একটু বেশি ভাল হয়। অন্যরকম একটা ভিড় থাকে সব ফ্যাশন হাউসেই। বর্তমানে আমাদের দেশে গার্মেন্টস শিল্পে একটু মন্দা সময় যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমার বেলায়ও তেমন। সর্বেসর্বা ভাল বলা চলে। উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার শুরুটা ১৯৯২ সালে আড়ংয়ে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছিলাম। এর মাঝে আমার সংসার জীবনে আসে আমার বড় ছেলে। ২০০০ সালে আড়ংয়ের চাকরিটা ছেড়ে দেই। চাকরি ছাড়ার তিনদিনের মাথায় মনে হলো আমি বসে থাকতে পারব না। আমার নিজের কিছু করতে হবে এ সিদ্ধান্ত নিলাম। বাসায় বসে কাজে হাত দিলাম। শুরু করলাম ডিজাইন, সেলাই এভাবে তিন মাসে অনেক কাপড় জমে গেল। আমার আশপাশের স্বজন, বন্ধুরা উৎসাহ দিল শো-রুম খোলার জন্য। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমার কাপড় বিক্রি হবে। আমি যখন বাসায় কাপড় ডিজাইন করতাম আশপাশের সবাই কাপড় কেড়ে নিত। এ বিশ্বাস থেকেই আমি ২০০১ সালে ধানম-ি ৫-এ আমার প্রথম ‘বিবিয়ানা’ শো-রুমটা চালু করি। এ শো-রুম খোলার পিছনে যাদের অবদান না বললেই নয় তারা হলো আমার প্রডিউসাররা। তারা বাকিতে কাপড় ও সেলাই করে দিত। তারা বলত আপনার বিক্রি হলে আমাদের টাকা দিয়েন। সঙ্গে আমার স্বামী আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। আল্লাহর রহমতে আমি শো-রুম রমজানে চালু করি। অনেকটা টানাপোড়নের মধ্যে ‘বিবিআনার’ যাত্রা। শুরুতেই আমি খুব ভাল সাড়া পাই। বর্তমানে ‘বিবিআনার’ ১১টা শো-রুম আছে। ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও সিলেটে শো-রুম আছে। জীবনে প্রথম উপার্জনের অভিজ্ঞতা আড়ংয়ে প্রথম চাকরি নিয়েছিলাম ১৯৯২ সালে। প্রথম মাসের বেতনই ৪হাজার টাকা যা আমার প্রথম উপার্জন। বাসায় মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশের ফ্যাশন শিল্পের আন্তর্জাতিক অবস্থান আমাদের দেশের হাউসগুলোর আন্তর্জাতিকমানের কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে। তবে খুব যে ভাল করতে পারছে তা বলব না, কারণ এতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। আর এখন তো দেশীয় শিল্পই ধ্বংস হওয়ার পথে। পাকিস্তানী ও ইন্ডিয়ান পণ্য এসে দেশ সয়লাব। দেশীয় তাঁতীরাও মার খাচ্ছে। ফ্যাশন শিল্পের ঘাটতি আমাদের ফ্যাশন শিল্প অনেক এগিয়ে যেত, আামদের এ ছোট মার্কেটের যাও শিল্প দাঁড়াচ্ছিল, সেখানে বিদেশী পণ্য চলে আসাতে একটা ধস শুরু হয়ে গেছে। এই তো পাঁচ বছর আগেও আমাদের এ সেক্টরে একটা স্বর্ণযুগ ছিল বলতে গেলে। কিন্তু হঠাৎ করে বিদেশী কাপড় আসাতে এখন অনেকেই এই ব্যবসা বন্ধ করে চলে গেছে। অনেকেই পেশা পরিবর্তনও করেছে। এটা আমাদের দেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। ফ্যাশন হাউসগুলোর নিজস্বতা সম্পর্কে বলুন অবশ্যই। কিছু কিছু ফ্যাশন হাউস পশ্চিমা প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। কিন্তু নিজস্বতা না থাকলে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রতে আসুক না কেন দিন শেষে এরা হারিয়ে যাবে। বিদেশী পোশাক আসুক তাতে আমাদের আপত্তি নেই তাই বলে আমরা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ভুলে গেলে চলবে না। নারীদের নিরাপত্তাহীনতাকে কীভাবে দেখেনÑ এটা ঠিক। এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা খুব প্রয়োজন। মেয়েদের জন্য আলাদা করে যদি গাড়ি দেন তবে মেয়েরা বাসায় ফিরতে পারবে নিরাপত্তার সঙ্গে। আর আমরা যারা ফ্যাশন হাউসে কাজ করি তাদের গাড়ি বের করার সামর্থ্য হয়নি, যাবতীয় খরচ মিটিয়ে বাড়তি কিছু করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। সংসার জীবন আমার দুই সন্তান। আমি আর আমার স্বামী মিলে ছোট সংসার। বিবিআনায় আমি ও আমার স্বামী একই সঙ্গে কাজ শুরু করি। এখনও দুজন মিলে বিবিআনায় কাজ করছি। প্রেমের অভিজ্ঞতা প্রেমে পড়িনি। কিন্তু এখন যার সঙ্গে আছি তার সঙ্গে আর্ট কলেজে অধ্যায়ন অবস্থায় পরিচয় সে থেকে বিয়ে, এখনও তার সঙ্গে আছি। কোন স্মৃতি যা মনকে নাড়া দেয় আমার স্বামী আর আমি বকুল তলায় বসে কথা বলার স্মৃতিগুলো এখনও আমাকে রোমাঞ্চিত করে। মন চায় এখনও বসি কিন্তু সে সময় হয়ে ওঠে না। হা হা হা... অবসরে কি করেন? অবসর তেমন একটা পাই না। আমার প্রকৃতি ভাল লাগে। প্রকৃতি দেখার জন্য দেশে বা দেশের বাইরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যাই। ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? ডিজাইনারদের নিয়ে একটি ইনস্টিটিউট দেয়ার ইচ্ছা আছে। এটাকে ইনস্টিটিউট বলব না ডিজাইনার ক্লাব বলব। আমি চাই এমন একটা জায়গা থাকবে যেখানে সিনিয়র ডিজাইনাররা যাবে, জুনিয়র বা স্টুডেন্টরা তাদের কাছে যেতে পারবে, কাজ শেয়োর করতে পারবে। এমন একটা জায়গার কথা ভেবেছি অনেক আগে থেকে। এটা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। যারা কাজ শিখতে চায় তাদের একটা দিক নির্দেশনা যেন দেয়া যায়, এমন একটা জায়গার কথা ভেবেছি। জীবনের চাওয়া পাওয়া ? অনেক পেয়েছি। আমার এত চাওয়া ছিল না। নতুন যারা উদ্যোক্তা হতে চায়? নতুন যারা আসে তাদের জন্য বলব, ক্রিয়েটিভিটি, হার্ড ওয়ার্কিং ও ধৈর্য, এ তিনটি জিনিস থাকতে হবে। ক্রিয়েটিভির মধ্যে নিজের মেধাটা লাগবে। নেট থেকে নকল করলে হবে না। পরিশ্রম করতে হবে। একদম পাস করা ডিজাইনাররা এখানে কাজ করতে আসে তাদের আবার একদম জিরো থেকে শেখাতে হয়। শক্ত মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। ধন্যবাদ ভাল থাকবেন আপনিও ভাল থাকবেন
×