ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার মাসুদ

জীবনের রঙধনু, পাঁচ কবির জীবনভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

জীবনের রঙধনু, পাঁচ কবির জীবনভাবনা

বাংলাদেশের আশির প্রজন্মের কবিতা যে উল্লেখযোগ্য বিষয় বৈচিত্র্য ও ভাববৈভবের যোগান দিয়েছে তাতে সুস্পষ্ট অবদান আছে স্বদেশ বন্ধু সরকারের। দৈনিক মাসিক বা ত্রৈমাসিক পত্রিকার সিঁড়ি বেয়ে যে কবিরা পরিচিতি অর্জন করেছেন তাদের মতো আত্মতুষ্ট এবং মসৃণ নয় স্বদেশের কবিজীবন। প্রায় চার দশক ধরে লিখছেন। এই পুরোটা সময়েই তিনি নির্ধিদ্বায় লিখেছেন লিটল ম্যাগাজিনে, লিখে চলেছেন। এ জন্য সাধারণভাবে তার পরিচিতি কম। কিন্তু এতে খুব একটা যায় আসে না। কেননা, কবিতায় সিদ্ধি অর্জন ম্যারাথন রেসে জেতার মতো। তাছাড়া সমকালে অনেকটা আড়ালে ছিলেন কিন্তু উত্তরকালে সংবর্ধিত হয়েছেন; নতুন কবি ও কাব্যপাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন, বিশ্বে এমন কবির সংখ্যা খুব কম নয়। ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে বেরিয়েছে স্বদেশ বন্ধু সরকারের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ছোট কাগজে মোড়ানো অগ্নি ও অশ্রুগাথা।’ স্বদেশ- যে শুধু লিটল ম্যাগাজিনের সেবক এ কথা তার বইয়ের নামেও উঠে এসেছে। সাতান্ন বছর বয়সে প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভিক্টোরিয়ান কবি-কথাশিল্পী টমাস হার্ডির প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ছাপান্ন বছর বয়সে। রবার্ট ফ্রস্ট- যে কবিতা লেখেন এ কথা তার চল্লিশ বছর বয়সের আগে কেউই জানতেন না। যশোপ্রার্থী তরুণ কবিদের জন্য এগুলো শিক্ষণীয় উদাহরণ। স্বদেশের এই সুদীর্ঘকালের প্রায়-নীরব, অনলস সাধনার পেছনে সক্রিয় তার কৃষি পটভূমি, রাজনীতিবোধ, জনমদুঃখী বাংলাদেশ। কবি যে একদা (১৯৭৯-৮৩) তুখোড় মঞ্চ অভিনেতা ছিলেন এ বিষয়টিও পরোক্ষভাবে তার কবিতায় জায়গা পেয়েছে। কয়েকটি দৃষ্টান্তÑ১. কেঁচোর আর্তনাদ জমে আছে মৃত্তিকায় মৃত্তিকায়/ কেঁচোর ইতিহাস জানে না কেউ, বোঝে না কেউ!/কেঁচোই প্রথম শুঁকে ছিল মাটির পবিত্র ঘ্রাণ (কেঁচোর কবিতা) ২. শস্য সাধকের দানাদার চাল কেবলই চুরি যায়/ তুষের ভেতর ভয়ে খুদকুঁড়ো লুকিয়ে রয়/ তুষের ভেতর চুম্বনের অগ্নিজিভ ভাঁজ করা রয়? (চিটা) ৩. প্রজাতন্ত্র তুমি কাটামাথা...? প্রজাদের ছেড়ে কোথায় রয়েছো?/হালহীন ধানভরা নৌকো নদী-পাঁকে বার বার ডুবে যায় (প্রজাতন্ত্র) ৪. রাজপথে জোড়াহীন জুতাগুলো বাদামখোসার মতো আছে পড়ে/ ছাতারং আকাশের তলে রাতের শিশিরে ওদের উদোম বুক ওঠে ভরে (১৭ আগস্ট ও ২১ আগস্ট ২০০৫) ৫. হাসপাতাল আর বধ্যভূমির মাঝখানে/পড়ে আছে আমার হৃদয় (ছিটমহল) ৬. ডাক বাক্সর গাত্রবর্ণ গাঢ় লাল/যত রোদ ওঠে তত রক্ত চুয়ে চুয়ে পড়ে (ডাক বাক্স) ৭. আমি কি থাকতে পারব প্রাণের নাট্যকার?/ তোমাদের পথ মঞ্চে যা যা ঘটে যাচ্ছে সব কেবলই অভিনয়?/ অশ্রু ও রক্তভেজা মাটি, লাঙ্গল ও চাষির কি কিছুই নয়, বলো? (একটি দলছুট কবিতা) গূঢ় ভাবনা, ব্যতিক্রমী উপমা এবং শক্তিশালী প্রতীকের সফল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় স্বদেশের কবিতায়। ইঙ্গিতপ্রধান ভাষার সঙ্গে কখনও কখনও যুক্ত হয়েছে লক্ষভেদী শ্লেষ। বিশুদ্ধ লিরিক আত্তীকৃত করে নিয়েছে যেমন সমাজ-সমকাল ভাবনা, তেমনি একান্ত ব্যক্তিক অনুভবও। তার কবিকল্পনায় প্রথানুগত্য ও চমৎকারিত্ব দুটোই লক্ষণীয়। ক. তলদেশে জাদুবাস্তবের এক জলটাকি ঘাই কেটে ঢেউ তুলে চলে। খ. বাস্তবে দেখেছি, বেগুনের কোয়ার ভেতর গহনার নকশার/মতো জমে আছে বীজ আর স্বর্ণশিল্পের কারুকাজ। গ. বর্তমানে কেউই আলু দোষে দুষ্ট নয়! আলুগুনে দলবদলের তন্ত্রমন্ত্র/দিব্যি পরমায়ু পায়। পূজনীয় আলু সদা সজ্ঞানে সর্বদলীয়। ঘ. অনিশ্চয়তা, নিশ্চেতনা এবং নৈঃশব্দের অশ্রু ছাড়া/পৃথিবীতে কিছুই পাইনি। ঙ. ব্যবহৃত বেলুনের মতো আমাকেই নৈঃশব্দের দিকে ছুড়ে দাও?/আমি না-কবিতা আর না-সংসারের মাঝখানে/পেটফুলানো পটকা মাছ হয়ে শুয়ে রই। আধুনিক কবিতার বহুরূপ ও বিভা সম্বন্ধে সচেতন এই কবি। বইটিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেছেন। লিরিকের পাশাপাশি বিশুদ্ধ গদ্যে কবিতা লিখতে চেয়েছেন। এসব রচনা কতটুকু কবিতা হয়েছে সে ব্যাপারে আমি সন্দিহান। অন্যত্র আবার নিরীক্ষার প্রশংসনীয় ধরন দৃশ্যমান, যেমনটা দেখা যায় ‘শব্দার্থ’ কবিতায়। ‘কাঁটাতার’, শিরোনামের কবিতায় পাওয়া গেল প্যাটার্ন পোয়েট্রির স্বাদ। ‘কেঁচোর কবিতা’, ‘ছিটমহল’, ‘চিটা’, ‘অচেনা’, ‘ইদারা’ এগুলো গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ কবিতা। প্রত্যেকটিতেই ভাবনার ও কল্পনার সংহত রূপ বিদ্যমান। ‘নির্জন সংকেত’ কবিতায় প্রযুক্ত ‘টিথ ব্রাশ; শব্দটি পীড়াদায়ক। ‘পুত্রশোক’ কবিতার প্রথম পঙ্ক্তিটি হচ্ছে ‘মাছের চোখের জলে জলে ভরে ওঠে নদী। দ্বিতীয় ‘জলে’র প্রয়োজন ছিল না। এটা যদি মুদ্রণ-প্রমাদ হয়ে থাকে তাহলে কথা নেই; কিন্তু লেখকের ইচ্ছাকৃত হলে তা অসতর্কতার প্রমাণ। একটি মাত্র শব্দের ভুল বা অনাবশ্যক প্রয়োগ কিংবা দুর্বল প্রয়োগ একটি কবিতাকে নষ্ট করে দেয়। স্বদেশ বন্ধু সরকার পরিণত কবির কাব্যসামর্থ্য দেখাতে পেরেছেন এই গ্রন্থে। কবিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরেকটু সাবধানী হলে নিঃসন্দেহে আরও ভাল হতো। কবি হিসেবে বদরুল হায়দারের আত্মপ্রকাশ আশির দশকে ঘটলেও তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ আত্মজ পরিব্রাজক বেরোয় ১৯৯৩-এ। মাঝখানে নিয়মিত বিরতি দিয়ে বেরিয়েছে অনেকগুলো বই। ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে প্রকাশিত হলো তার পনেরোতম কাব্যগ্রন্থ ‘অপহরণের প্রেমিক মন।’ গ্রন্থভুক্ত চব্বিশটি লেখার মধ্যে তিন/চারটি বাদে বাকি সবই প্রেমের কবিতা। বদরুলের অপরাপর বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি, এই বই প্রমাণ করেছে, তার প্রেমিক সত্তাটিও যথেষ্ট সজীব। মনে পড়ে, এই লেখক ১৯৯৫-এ দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কালো সিল্কের অন্ধকার’ প্রকাশিত হওয়ার পর কবি হিসেবে নজর কেড়েছিলেন অনেকেরই। ১৯৯৮-এ প্রকাশিত কবিতারই ‘উন্মাদ সত্যদ্রষ্টা’ও প্রায় সমজাতীয় কাব্যসামর্থ্য ধারণ করে। মাঝখানের বইগুলোতেও বদরুলের আপন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কবিতা আছে। ভাল-মন্দের মিশেল আছে। কিন্তু ওই বই দুটির মতো উল্লেখযোগ্যতা নেই তাদের। ‘অপহরণের প্রেমিক মন’-এ বদরুল হায়দার তুলনামূলকভাবে বেশি সক্ষমতা দেখাতে পেরেছেন। এখানে আছে অভিনব এ্যাপ্রোচ। উদ্ধৃতিযোগ্য অনেক পঙ্ক্তিও আছে- ১. মালতীলতায় দুলে ওঠে মন। ফুলে-ফলে বর্ষার কপালে/হাওয়ার অনুকূলে খুঁজি হৃদয়ের মূলধন। ২. মন দিয়ে কিনেছি তোমার অধীনতা ৩. ম্লান হতে থাকে সভ্যতা, ইতিহাস, ভূগোল ও পৌরনীতি।/বৃষ্টি প্রকৃতির সৃষ্টি হয়ে মিষ্টি অভিযানে ঝরে পড়ে ৪. ধ্রƒপদীরা স্পর্শ পেয়ে জেগে উঠেছে গণিতে ৫. ময়নাকে অনেক বায়না দিয়ে নিজের ভেতর-আয়নায়/বহুবার ভালোবাসতে চেয়েছি। লক্ষণীয়, বদরুল উপমা ব্যবহার করেননি। এক্ষেত্রে তিনি আলাদা। তার পরিবর্তে ‘ময়না আমার গ্রাম হয়ে ওঠে তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর’ এ জাতীয় পঙ্ক্তি লিখেছেন। নিবিষ্টচিত্তে পাঠ করলে অনুভব করা যায় তার কবিতারও বিশেষ ঢঙ যার বেশির ভাগটাই গড়ে দিয়েছে ভাষার বিবৃতি ধর্মিতা। এই বিবৃতি ধর্মিতা অনেক সময় সাংবাদিক-গদ্যের প্রান্ত ছুঁয়ে যায়। ‘কাব্যে ধারণাশক্তি’ প্রবন্ধে অমিয় চক্রবর্তী বলেছেন, ‘রিপোর্টার বৃত্তির প্রাবল্য আধুনিক ধারণাশক্তিকে বিড়ম্বিত করে, কেননা তার মধ্যে অভিষিক্ত চৈতন্যের স্থির বিদ্যুৎ নেই, যাতে তল পর্যন্ত দৃষ্টি পৌঁছয়।’ বদরুলের মধ্যে এই বৃত্তি সক্রিয় কিন্তু তা প্রবল নয় এবং কবি-স্বভাবের ভিন্নতার কারণে তাতে অন্যরকম চেতনাও চোখে পড়ে। তা সত্ত্বেও বিষয়টির প্রয়োগ ঝুঁকিপূর্ণকে কেননা এর মধ্যে অমিয়কথিত ‘স্থির বিদ্যুৎ‘ অনুপস্থিত। তার কাব্যে বিবৃতিধর্মিতার সেরা প্রকাশ ঘটেছি এভাবেÑ ‘বেলাশেষের গানের কলি গেয়ে ওঠে গোধূলির পাখি।/রাখি বন্ধনের তত্ত্বমিল তোমার অজান্তে করে/বিরল দস্যুতা। আমি সামাজিক জাঁতাকলে/বাকি সত্যতার কাছে রাখি মনস্কতা।’ কাব্যগ্রন্থটির অপেক্ষাকৃত ভাল কবিতা হচ্ছে ‘মালতীলতার মন’, ‘শরৎ শ্রীমতী,’ ‘প্রেমিক’, ‘বৃষ্টিস্নাত হৃদয়ের কান্না’, ‘ময়না’, ‘শেষ কবে দেখা হয়েছিল মনে নেই,’ ‘মনের বেপারি’। কবিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তার আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল। উন্মেষের কাল থেকে এখন পর্যন্ত বদরুল হায়দার অব্যাহতভাবে লিখে চলেছেন। পত্রপত্রিকায় তার উপস্থিতি ও নিয়মিত। বেরিয়েছে পনেরোটি বই। তার কবি-ইমেজ তার কবিতার ধাঁচের সঙ্গে খুবই সঙ্গতিপূর্ণ। বদরুলের বেশকিছু উৎকৃষ্ট কবিতা আছে যেগুলো বিভিন্ন গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আশির প্রজন্মের কবিতায় তার অবদান অনস্বীকার্য। শিহাব শাহরিয়ার আশির প্রজন্মের আরেক কবি। অন্যূন বিশ বছর ধরে আমি তার লেখালেখির সঙ্গে পরিচিত। তার যতগুলো কবিতা পড়েছি, সবই বিচ্ছিন্নভাবে। এক সঙ্গে অনেক কবিতা পড়ার সুযোগ হয়নি আগে। ফলে তার কবি-মেজাজটি অধরাই থেকে গেছে আমার কাছে। সম্প্রতি হাতে এসেছে শিহাবের ‘প্রেমের কবিতা’। এই সূত্রে পড়া গেল লেখকের অনেক কবিতা। অনেক কিছু অনুধাবন করাও গেল। ২০১৬-এর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থটির নাম যদিও ‘প্রেমের কবিতা’ তথাপি এখানে প্রেম ছাড়া আরও নানা বিষয়ের কবিতা স্থান পেয়েছে। অবশ্য বৃহৎ অর্থে সব কবিতাই প্রেমের কবিতা। এই গ্রন্থের মূল সুর ব্যক্তিগত আনন্দ-বেদনা, অভিমান-আক্ষেপ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্মৃতিকাতরতা, নিসর্গপ্রীতি এসব। নদী শিহাবের কবিতায় এক পুনরাবৃত্ত অনুষঙ্গ। শুকিয়ে আসা নদীর মুখের ছবির ভেতর দিয়ে তিনি বিপন্ন বাংলাদেশের কথাও বলতে চেয়েছেন। লেখকের অনুভূতি কিভাবে ভাষা পেয়েছে দেখুনÑ ক. যে বেদনার বাঁশি বাজিয়েছো ঘুমের ভেতর/টের পাই যে ঘুমে ছিল শত শত ঘুনপোকা।’ খ. একটি চৈতের চাঁদ ভাঙবে মেঘনার বিকলাঙ্গ জল/একটি লাল স্পর্শ মরা কচ্ছপের মতো পড়ে থাকবে গ. বসন্ত মানেই ওই একটি কোকিলই দিন-রাত/অথবা কয়েক যুগ ধরে কুহু কুহু সুর তোলে ঘ. স্টেশনের পেছনে পড়ে থাকে কয়েকটি দুঃখরাত ঙ. জ্যোৎস্নাভরা চান্দের গাড়ি আমায় পিছু ডাকে/ঘুম-ঘরে বাতি জ্বলে অন্ধ প্রাণের বাঁকে বাঁকে চ. ... প্রজাপতির আগে লাল গোলাপে বসে কীট ছ. যে জীবন আমি যাপন করে ফেলেছি আর যে ভুল আমাকে তাড়ায়/তুমি কি তার স্বভাব বদলে দিতে পারো আমাকে নিয়ে যেতে পারো মেঘের কাছে? ভাষার সহজতা ও সাবলীলতা শিহাব শাহরিয়ারের কবিতার বড় গুণ। গভীরাশ্রয়ী ভাবনা-কল্পনা। অনেকেরই কাব্যপ্রতিম রচনা অর্থহীন বাকবিস্তার ছাড়া আর কিছুই নয়। শিহাবের কবিতা এ জাতীয় বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত। নির্মল, স্বচ্ছ, অকপট এক ভঙ্গিতে লিখে চলেন তিনিÑ ১. আগামী ফাল্গুনে তুমি পরিশোধ করে দিও তোমার নদী-ঋণ। ২. এক দিন অনুরাগগুলো জমা ছিল/নাভির গহ্বরে ৩. তোমার বারান্দায় যদি পড়ে মঙ্গলগ্রহের আলো তবু আমি ফিরে তাকাবো না/নদীপথে আর একবার গিয়ে শুধু খুঁজবো পাখি স্বর, রঙিন ওড়না, ভেজা বাতাস। ৪. যখন পার হয়েছো আত্রাই, তখন বৃষ্টির ভেতর কেঁপেছিল/শিলাইদহ ৫. শরতের সাদা-ধাক্কায় সেদিন/তুমি উড়েছিলে নদীবাহিত ঘন আঁধারে/বাড়িগুলো পড়ে ছিল চাঁদের কিনারে। আধুনিক কথাসাহিত্যের একটা বড় বৈশিষ্ট্য নিবিড় বর্ণনার উপস্থিতি। এ ধরনের ডিটেল আধুনিক কবিতায়ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সেটা কবির ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। শিহাবের কবিতার রোমান্টিক মেজাজের সঙ্গে বেশ খাপ খেয়েছে তার প্রযুক্ত ডিটেলÑ ‘আমাদের মন ব্রহ্মপুত্র, নৌকার গলুই, কাশফুলে হাওয়া,/চুপচুপ দূর্বা-ঘাস, ভেজা কিশোরের দু’পাটি দাঁত/ঝুম বৃষ্টিতে দুধেল গাভীর চোখে টপটপ জল, জলের কণিকা’ (ব্রহ্মপুত্র পর্ব : ০৩)। তাছাড়া উপমার কথা তো বলতেই হবে। ‘জলকষ্ট’ কবিতায় লেখক বলেছেন, ‘বাবার বাজারের থলির মতো থুথথুরে বুড়ি’। অন্যত্র, ‘যখন ভাঙে নক্ষত্র : ১৮’ কবিতায় লিখেছেন, ‘একটি লাল স্পর্শ মরা কচ্ছপের মতো পড়ে থাকবে।’ এগুলো নতুন ধরনের উপমা। নতুন এবং চিত্তস্পর্শী। মনোহর ছবি, প্রথাগত উচ্চারণ, নতুন স্বাদের শব্দ-অভিব্যক্তি, শব্দ প্রয়োগে অপচয়, আবার প্রশংসনীয় শব্দ সংযম (যেমনটা দেখা গেছে, ‘যখন নক্ষত্র ভাঙে : ০৪ কবিতায়) এই সব ভাল-মন্দ মিলিয়েই তৈরি হয়েছে শিহাব শাহরিয়ারের কবি-ইমেজ। যিনি লিখতে পারেন ‘পাতারা পরিমাপ করে সন্ধ্যার রঙ’-এর মতো অনুভবঘন পঙ্ক্তি তিনি কবি হিসেবে নিজেকে আরও খানিকটা শক্ত প্লাটফর্মে দাঁড় করাতে পারবেন, এমন প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। আমীর খসরু স্বপন নব্বইয়ের প্রজন্মের পরিচিত কবি। প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশের সাহিত্যের অঙ্গনে তার পদচারণা। ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে বেরিয়েছে তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘বিড়ালের মতো ঘরে ফেরা।’ আমি তার কোন কবিতার বই আগে পড়িনি। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বেশকিছু কবিতা বিচ্ছিন্নভাবে পড়েছি। এই কবির লেখালেখি সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা আগে থেকেই আছে। এর সঙ্গে যুক্ত হলো নতুন কাব্যগ্রন্থটি পাঠের অভিজ্ঞতা। গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে চব্বিশটি কবিতা। শিল্প ভাবনা ও জীবনের কঠিন বাস্তবতা, বেকারত্ব ও চাকরি নামের বন্দিত্ব, আত্মগ্লানি, স্বপ্নময়তা, বিষণœ উচ্চাশা ইত্যাকার নানা বিষয় ঘুরেফিরে এসে এর রচনাসমূহে। বিরূপ পরিবেশ পরিস্থিতিতে একজন কবির নিরন্তর জীবন সংগ্রাম তাকে কতটা জেদি করে তুলতে পারে তারও শিল্পসম্মত প্রকাশ ঘটেছে এখানে। ‘কণা কণা রক্তবীজ’ কবিতায় লেখক নিজেই বলেছেন, ‘নিজের বাস্তবতা ও স্বপ্নের টুকরোগুলোর ভেতর দিয়েই আমি/প্রতিদিন হাঁটছি।’ পরিষ্কার বোঝা যায়, রাজধানীর সিন্ডিকেট আক্রান্ত কলুষিত সাহিত্য সমাজে তার অবস্থান খুবই কোণঠাসা। বিকশিত হওয়ার সার্বিক সুযোগ পাওয়া তো দূরের কথা, ন্যূনতম সহযোগিতাও তিনি পেয়েছেন কিনা সন্দেহ। সেই বেদনা থেকেই উৎসারিত হয়েছে এসব পঙ্ক্তিÑ‘কিন্তু আমি ঘুরেফিরেই একটা অস্পষ্ট,/অধরা ও অনিশ্চিত পথেই হেঁটে যাই/ এমনকি, আমি সর্বত্রই অযোগ্য হয়ে পড়ি’ (বিশ্বাস)। ‘দ্বিধান্বিত সড়কে’ শিরোনামের কবিতায় স্বপন লিখেছেন, ‘খুব ভালো হয় যদি বন্ধুরা আমাকে ঘৃণা করে ঘুমিয়ে পড়ে/যদিও ওরা কখনও জেগে ওঠেনি এবং জগতের সব স্বপ্নের/নিচে ওরা এখনও চাপা পড়ে আছে/জানি ওরা চমকে ওঠার, অপেক্ষায় আছে।’ কবি-কথাসাহিত্যিক ইকবাল আজিজ একবার লিখেছিলেন ‘সাপের মতো বন্ধুরা সব।’ তো ওই ‘সাপের মতো’ বিপজ্জনক, অসহযোগী বন্ধু-লেখক-সম্পাদকগণ আমীর খসরু স্বপনের এই নতুন কাব্যগ্রন্থ পড়ে (যদি পড়েন) চমকে উঠবেন কিনা জানি না, কিন্তু লেখকের অগ্রগতি দেখে তাদের ভ্রুতে ভাঁজ পড়বে এ বিষয়ে আমি প্রায় নিশ্চিত। কয়েক বছর আগে স্বপনের সে সব কবিতা আমি পড়েছি সেই লেখাগুলোতে ভাষার আড়ষ্টতা এবং ভাঙাচোরা অনুভবের চেহারা লক্ষ্য করেছিলাম। কিছু ভাল কবিতা ছিল না এমন নয়। কিন্তু এই ‘বিড়ালের মতো ঘরে ফেরা’য় স্বপন খোলস থেকে সম্পূর্ণ বেরিয়ে এসেছেন, আসতে পেরেছেন। এই বইয়ের কাব্যভাষা ঝরঝরে, সুগম এবং একই সঙ্গে নিবিষ্টতা প্রত্যাশী। ১. অথচ সারাদিন আমি জীবিকা জীবিকা করে বিক্রি হই/আর আমার সব অসম্মতিগুলোই জীবিকার নামে অন্যের/হাতে তুলে দিই ২. আমার জীবনে ওই মরুজগত অনেক অবদান রেখে চলে ৩. তুমি জানো অলৌকিক আঁধার আর তামাসার কাছে রক্তবীজ আমি আশা করি না/ কেননা রক্তবীজগুলো চারাগাছ থেকে বৃক্ষ হয়ে উঠবে আমার মাটির হৃদয়ে ৪. স্টেশনের স্মৃতি ছাড়া আমাদের মনে আর কিছুই জমা থাকে না ৫. অথচ আমার ফরিয়াদে পর্বত কেঁপে ওঠে, মিনারের উচ্চতাও নেমে আসে মাটিতে/কিন্তু বুকের ভেতর শুধু স্তব্ধতাই জমা হয়/ফলে আমি এখন পরকাল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি, পার্কে হাঁটি/আর মার্কেটে মার্কেটে ঘুরি। ৬. আমার প্রাত্যহিকতাই গড়ে দেয় আমাকে বিশ্বজুড়ে আধুনিক কবিতায় নতুনত্ব সৃষ্টিতে স্বীকারোক্তিমূলক কবিতার বিরাট অবদান আছে। এই ধারার কবিতায় গুরু মনে করা হয় রবার্ট লাওয়েলকে যিনি খরভব ংঃঁফরবং (১৯৫৯) কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে নিয়ে এসেছিলেন ওই নবতরঙ্গ। লাওয়েলের প্রধান ভাবশিষ্যরা হচ্ছেন জন বেরিম্যান, এ্যান সেক্সটন, ডব্লিউডি স্নডগ্লাস এবং সিলভিয়া প্লাথ। ইংরেজী ভাষার কবিতায় এদের সকলেরই বড় রকমের অবদান আছে। এই ধারা বাংলা কবিতায়ও অনেকখানি প্রভাব বিস্তার করে। ভাস্কর চক্রবর্তীর ফিক আজাদ শশী হক, মুস্তফা আনোয়ার প্রমুখের কবিতায় আমরা এটা দেখতে পাই। আমীর খসরু স্বপনের কবিতার একটা বড় বিশেষত্ব এই স্বীকারোক্তি। সরল ও অকপটভাবে তিনি তার খুঁত, ক্ষত ও দুর্বলতার কথাগুলো ব্যক্ত করেছেন- ক. হায়! সারাদিন আমি নিজের ছদ্মবেশকেই মেলে ধরি সবার কাছে খ. আমি বোকাচোদা প্রতিদিনের অভ্যাস ভুলতে না পেরে/খালি পেটে শুধু মন মাতানো স্মৃতি খুঁজি, ঝকমকে শব্দ খুঁজি,/রিনঝিন দৃশ্য খুঁজি, যার সাথে আমার কোন মিল নেই/অথবা যার সঙ্গে আমার কখনও দেখাই হয় না গ. কিন্তু কাউকে বলিনি, আমার হাত ও পা এখনও আমাকে ঘৃণাই করে। কাব্যগ্রন্থটির সব কবিতা ধারণ করেছে লেখকের আত্মজৈবনিকতা। এটা খারাপ নয়। কিন্তু এর কিছু অসুবিধাও আছে। কবির একান্ত সুখ-দুঃখের কথা পাঠক বার বার জানতে চাইবেন না। পাঠক, স্বভাবতই, চান এর চেয়েও বেশি কিছু। সুতরাং স্বপ্নকে আত্মজৈবনিক অভিজ্ঞতা ছাড়িয়ে বৃহত্তর কিছুর দিকে এগুতে হবে। যতখানি সক্ষমতা তিনি এই বইয়ে দেখাতে পেরেছেন তাতে মনে হয় তিনি তা পারবেন। তার সামগ্রিক অর্থে গুরুত্বপূর্ণ কবি হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এখানে স্পষ্ট। কুতুব হিলালী বাংলাদেশের কবিতায় নবাগত। ২৫/২৭ বছরের তরুণ কবি বলতে যা বোঝায় তিনি ঠিক তা নন। পঁয়ত্রিশ উত্তীর্ণ এই যুবক প্রথম বই বের করার আগে অনেক বছর ধরেই প্রস্তুতি নিয়েছেন। তার কবিতা সেই সাক্ষ্য দেয়। প্রস্তুতি কতটা ভাল হয়েছে কি হয়নি সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু তার লেখা পড়ে মনে হয়েছে তিনি কবিতা অন্তঃপ্রাণ। কাব্য এবং কাব্য ভাবনা তার মাথার ভেতর নিরন্তর কাজ করে। ডিসেম্বর ২০০৬-এ বেরিয়েছে হিলালীর কাব্যগ্রন্থ ‘বেঁচে থাকা ভোর।’ পাঁচ ফর্মার বই। কবিতা আছে মোট ৫৮টি। পাতা উল্টাতে উল্টাতে আমার চোখ আটকে গিয়েছিল ৪১তম পৃষ্ঠার ‘সম্পর্ক’ নামের কবিতাটিতে। প্রথম স্তবকটি এ রকমÑ ‘সম্পর্কগুলো সংসদীয়/সম্পর্কগুলো মাননীয়/সম্পর্কগুলো কি অমোচনীয়?/ সম্পর্কগুলো সংশোধনীয়।’ দ্বিতীয় স্তবকের শেষ পঙ্ক্তি ‘সম্পর্কগুলো কি বৈরিতা না!’ আমাকে ভাবিয়েছে। কেননা সম্পর্ক যদি আদৌ না থাকে, তাহলে বৈরিতারও প্রশ্ন ওঠে না। এই কবিতা আমাকে কৌতূহলী করে তুলেছে তার অন্যান্য কবিতায় মনোযোগী হতে। ‘অর্থ’ শিরোনামের কবিতায় লেখক বলছেন, ‘সব কিছু সস্তা দরে পেলে/দুর্মূল্যের মূল্য কখনও বুঝে আসে না/ভালো থাকা, ভালোবাসা/এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়!’ এই অনুভবে লেখকের নিজত্ব আছে এটা স্পষ্ট। ‘অর্থের অভাবে ভাবনারা হাতছাড়া/অর্থের স্বভাবে জাহানারা খাপছাড়া’ জীবন বাস্তবতার কাঠিন্য তুলে ধরলেও তা বেশ কৌতুকপ্রদত্ত বটে। কবিতাটিতে ভাবনার সংহত রূপ লক্ষ্য করা গেল। এ রকম ভাবসংহতি ‘আরাম,’ ‘অভিনয়’, ‘লেখো যত পারো’, ‘ঝাউতলা’, ‘বিপ্লব’, ‘অপচয়’ ‘পরিচয়’ প্রভৃতি কবিতায়ও পাওয়া যায়। ‘পরিচয়’, কবিতাটির কথা আলাদাভাবে বলতে চাই। গ্রন্থের যে ক’টি কবিতায় লেখকের প্রস্তুতিপর্বের কাব্যসামর্থ্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধরা পড়েছে এই কবিতা তার মধ্যে অন্যতম। পুরো কবিতাই উদ্ধৃতিযোগ্যÑ ‘প্রজ্ঞার ভাষা জানা নেই/অশ্লীল পরিচয়ে বার বার/নিজেকে ঢাকি/অস্থির পরিবেশ, নির্জন পাখি/সে পাখি আমি নই/ আমি নই/আমি নই/প্রকৃতই আমি যে কী/কীভাবে নিজেকে আঁকি!’ প্রথানুগ ছন্দের প্রতি আনুগত্য এবং এ বিষয়ে প্রাথমিক সক্ষমতা প্রদর্শন যে কোন নবীন কবির জন্য ভাল লক্ষণ। কেননা ছন্দের কল-কব্জা সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা নিয়েই তাকে এগুতে হয় শব্দ আর বাক্য প্রয়োগের স্বাধীন এলাকায়। সেই নবীন কবি যদি প্রতিভাবান হন তাহলে ছন্দের হিসেবি নিগড়ের ভেতরেও তার ভাব-কল্পনা যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। কুতুব হিলালীও সাধ্যমতো তা করতে পেরেছেন- ১. ‘বাতাসেরও কান আছে ঝিঁঝিঁ ঝংকার ওড়ে আকাশে/কতটুকু রতি হলে রাত পার হয়? প্রাণীদের বিশ্বাসে/সে আঘাত তীব্র হলে জ্বলে ওঠে আলোক উদ্ভাসে/মনুষ্যত্বের চেয়ে প্রাণিস্বত্ব বড় প্রজ্ঞান নিয়ে আসে।’ ২. ‘একদিন পাখি ছিলাম হয়তবা অজানা কোন গ্রহে/প্রাণহীন নামহীন গোত্রহীন জ্ঞানহীন মজ্জমান আঁধার/সবুজের পান্না নয়, শুভ্র কোন শুক্র কিংবা শুক্তিসার/পদার্থের অর্থময় কিছুই নয়, নিরর্থক কীভাবে বহে/কিছুই তো জানার নয়;’ বোঝা যায় হিলালীর কান বেশ সজাগ। আর কেবল ছন্দপ্রীতিই নয়, স্থাপত্যপ্রতিম বিন্যাসও লক্ষ্য করা যায় তার কবিতায়। সে রকম কয়েকটি কবিতা হচ্ছে ‘শাস্ত্রব্যথা’, ‘আরাম’, ‘অভিনয়’, ‘কয়েদি’। বিচিত্র অনুভব সাকার করে তুলেছে তেমন কিছু পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করব এবার- ক. নিঝুমের দ্বীপ/সেও জানে জলে কত বেদনার ভাষা খ. পায়ে হাঁটা দাগটুকু মুছে যায়/ঝাউ হাওয়া আবহাওয়া হেসে যায়। হাহ্ হা হা হাহ্া লা লা লা লা/ লা লা লা লালা লা লা গ. অভিনয় জানে না তবু এই মন নয় ছয় ভালোবাসে ঘ. যত অপচয়/তত সঞ্চয়/যত অবক্ষয়/তত অক্ষয় বিশুদ্ধ গদ্যে লেখা কবিতাগুলো সম্বন্ধে আমার বেশি কথা বলার নেই। শুধু এটুকু বলব, এই সব লেখায়, যতটা গদ্যের কুচকাওয়াজ আছে ততটা নেই কবিতার বর্ণচ্ছটা। লেখক যদি এ রকম কবিতা আরও লিখতে চান, লিখে সফল হতে চান, তাহলে আমি বলব, তাকে গভীর মনোনিবেশসহ পাঠ করতে হবে স্য ঝন্্ পার্সের মতো মহান কবিদের রচনা। পার্সের ‘এ্যানাবাজ’ নিরেট গদ্যে রচিত সার্থক কবিতার এক বড় দৃষ্টান্ত। কুতুব হিলালীর এই কাব্যগ্রন্থে নানা স্বাদের কবিতা আছে। গঠন ও আকৃতিগত বৈচিত্র্যও আছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে শব্দের সঠিক প্রয়োগ সংক্রান্ত উনতাও আছে। লেখক এখনও বয়সে তরুণ। সামনে পড়ে আছে দীর্ঘ পথ। এখন তাকে এগোতে হবে বড় মাপের কাব্যচিন্তার দিকে, অনুভূতির সেই অঞ্চলে যা হবে একই সঙ্গে হৃদয়গ্রাহী ও যথেষ্ট শিল্প গুণসম্পন্ন। মনে রাখা জরুরী যে, প্রতিভা একটা প্রাথমিক শর্ত মাত্র। তাকে কার্যকর করে তোলার জন্য প্রয়োজন সাধনা ও তিতিক্ষা। আমি যতদূর জানি হিলালী শুধু কবিতা লেখেন না; কবিতা নিয়ে ভাবেনও। নিয়মিত পড়াশোনাও করেন। তার লেখালেখি আশাব্যঞ্জক। বোধ হয় তিনি পারবেন নিজের কবি-পরিচয়কে উজ্জ্বল করে তুলতে।
×