ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে আসছেন জাতিসংঘ দূত প্রমীলা প্যাটেন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে আসছেন জাতিসংঘ দূত প্রমীলা প্যাটেন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারের রাখাইন থেকে গত দুই মাসে ৬ লাখ ৪ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘ সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে জানিয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে নবেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় আসছেন যৌন সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত প্রমীলা প্যাটেন। সূত্র জানায়, জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে হামলার পর মিয়ানমার থেকে দুই মাসে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৬ লাখ ৪ হাজার নাগরিক। এছাড়া আগে থেকেই ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে থাকে। এখন বাংলাদেশে মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। এই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বাস্তুচ্যুতদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক সাহায্য আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো। রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পর গত দুই মাসে বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখ ৪ হাজারে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন ইন্টারসেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)। তারা কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকায় ত্রাণ বিতরণের কাজ পরিচালনা করছে। আইএসসিজি বলছে, আশ্রিত অনেকেই এখনও খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ অতিপ্রয়োজনীয় সেবার বাইরে। তবে দিনে দিনে উন্নতি হচ্ছে পরিস্থিতির। জাতিসংঘ সম্প্রতি প্রায় ১২ লাখ সম্ভাব্য রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য ৪৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘের তিন সংস্থার এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিশ্চিতে সীমান্ত খুলে দিয়েছে। পালিয়ে আসা মানুষের জন্য নিশ্চিত করেছে নিরাপত্তা আর আশ্রয়। রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয়দের আর্তি আর উদারতা আমাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে গেছে। জাতিসংঘের মতে, এ অঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শরণার্থীর প্রবেশ। গত সোমবার ওই বিশ্বসংস্থাসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কুয়েতের উদ্যোগে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি সম্মেলনে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ৩৬০ মিলিয়ন ডলার সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান বলেছেন, এখন অনেকটা সংগঠিতভাবেই সেবা দেয়া যাচ্ছে। তবে এদের চাহিদা অনেক। নতুনভাবে আরও রোহিঙ্গা জল ও স্থলপথে আসছে। আমরা ইতোমধ্যে অনেক কিছু করতে পেরেছি। আশা করছি, সরকারের সঙ্গে নতুন ক্যাম্পগুলোতে কাজ করা যাবে। কক্সবাজারে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী সমন্বয়ক মাইকেল ড্যানফোর্ড বলেছেন, প্রথম ছয় মাস জরুরী সময়। আমরা ভাবছি কিভাবে মানুষগুলোকে বাঁচানো যায়। তবে স্থায়ী সমাধান কিভাবে সম্ভব সেটিও ভাবতে হবে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বলেছে এদের ফিরিয়ে নেয়াই মূল সমাধান। সেটি নির্ভর করছে দুই সরকার কিভাবে সমঝোতায় পৌঁছাচ্ছে তার ওপর। ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত গণহত্যা ও সহিংসতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেখতে আসছেন যৌন সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত প্রমীলা প্যাটেন। নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তার বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। প্রমীলা প্যাটেন ঢাকায় নেমে চলে যাবেন কক্সবাজার। কথা বলবেন নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে। ইতোপূর্বে তিনি জানিয়েছেন, রাখাইনের নির্যাতন বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল। সেখানে নারীদের যে গণধর্ষণ করা হচ্ছে সে ব্যাপারেও তিনি শুনেছেন। রোহিঙ্গা নারী নির্যাতনের বিষয়টি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। পালিয়ে আসা বেশিরভাগ নারীই মগ ও সেনাদের হাতে কোন না কোনভাবে যৌন হয়রানির শিকার। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন সে সংখ্যাও আশঙ্কাজনক। জাতিসংঘ সভাপতির সঙ্গে দীপু মনির বৈঠক ॥ জাতিসংঘ সদর দফতরে বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিরোসøাভ লাজ্যাকের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডাঃ দীপু মনি এমপি এক বৈঠকে মিলিত হন। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বৈঠককালে ডাঃ দীপু মনি সাধারণ পরিষদের সভাপতিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ পরিষদ তার নেতৃত্বে যে সকল অগ্রাধিকার ও রূপকল্প গ্রহণ করেছে তার প্রতি বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। সাধারণ পরিষদের সভাপতি বলেন, এই মুহূর্তে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি একটি প্রাধিকার ও উদ্বেগের বিষয়। তিনি এক্ষেত্রে তার সর্বাত্মক সহযোগিতার নিশ্চয়তা দেন। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, বক্তব্য ও সুপারিশ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাহায্য করবে। ডাঃ দীপু মনি এমপি বলেন, রাখাইন প্রদেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে যাবে, তবে মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে যে কথা ও কাজের মধ্যে যেন সঙ্গতি থাকে; যাতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিজ ভূমিতে মর্যাদা, নিরাপত্তা ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে ফিরে যেতে পারে এবং সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে।
×