ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয়তার ঘরে বাংলাদেশী থাকায় সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মাঝে বসতি কার্ড বিতরণ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মাঝে বসতি কার্ড বিতরণ শুরু

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানোর প্রশ্নে প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। দেশটি মনে করে, কড়া ভাষায় বক্তব্য কিংবা নিন্দা নয়, গঠনমূলক ও বাস্তবসম্মতভাবে আলোচনার মাধ্যমেই তাদের রাখাইন রাজ্যে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব। এ বিষয়ে ভারতের উদ্বেগও ফুটে উঠেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের পর বৃহস্পতিবার দিল্লীতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রোহিঙ্গা বিষয়ে নিজ দেশের অবস্থান আরও পরিষ্কার করেছেন সে দেশের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর। এদিকে, নানামুখী চাপে মিয়ানমার সরকার বৃহস্পতিবার রাখাইনে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের স্থায়ী বসতি কার্ড দেয়া শুরু করেছে। রোহিঙ্গারাও বেশ আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করছে এই ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি)। কিন্তু এতে জাতীয়তার ঘরে ‘বাংলাদেশী’ উল্লেখ থাকায় সঙ্কটের সুষ্ঠু সমাধানে মিয়ানমারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠকের পর যে সমঝোতা সৃষ্টি হয়েছে সে অনুযায়ী উত্তর রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ হয়েছে। নির্যাতন সহ্য করেও যারা সেখানে রয়ে গেছে তাদের বিতাড়নের আর কোন ইচ্ছা মিয়ানমার সরকারের নেই বলেই আচরণে প্রতীয়মান। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্ট থেকে যে রোহিঙ্গা ¯্রােত বাংলাদেশ অভিমুখে শুরু হয়েছিল তা অব্যাহত থাকার আর কোন কারণ নেই বলে মনে করছে রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা। কিন্তু তারপরও সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে গ্রুপে গ্রুপে সপরিবারে তারা আসছে। এই আসার পেছনে নিপীড়নের মতো কোন ঘটনা নেই বলে জানা গেছে আগতদের কাছ থেকেও। তারা মূলত খাদ্য সঙ্কটের অভিযোগটাই বেশি করছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে উত্তর রাখাইনে দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানা যায়। রাখাইনে নির্যাতনের কারণে ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনাটি জাতিসংঘসহ সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। প্রথমদিকে, কিছুটা দোদুল্যমান অবস্থায় থাকলেও একপর্যায়ে দুয়েকটি দেশ ছাড়া প্রায় সকল দেশেরই অবস্থান পরিষ্কার হয়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ভারত, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা এ ঘটনায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তীব্র নিন্দা জানিয়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবি তুলেছে। শুধু তাই নয়, দেশটির ওপর নানাক্ষেত্রে অবরোধ আরোপের হুমকিও এসেছে। সর্বশেষ ভারতের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় মিয়ানমারের ওপর চাপ আরও বেড়েছে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মিয়ানমারে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন এনএলডি নেত্রী আউং সান সুচি এবং সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। তারাও বলেছেন, রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বেরিয়ে এসেছে দুদেশের একটি যুক্ত বিবৃতিও। বাংলাদেশের চাওয়াগুলোর মধ্যে প্রধানতম ছিল যারা মিয়ানমারে রয়ে গেছে তাদের দেশান্তরি না করা। মিয়ানমার সরকারও যে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে তার আলামত কিছুটা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
×