ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংলাপ বিষয়ে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিইসি নুরুল হুদা

জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠাকারী এটা আমি ‘ওন’ করি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠাকারী এটা আমি ‘ওন’ করি

স্টাফ রিপোর্টর ॥ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপ্রতি মরহুম জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রে পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী এটা তিনি ‘ওন’ করেন। তার মতে ’৭৫-র পটপরিবর্তনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র হত্যা করা হয়। ফলে ’৭৫ থেকে ’৭৭ সাল পর্যন্ত দেশে কোন গণতন্ত্রই ছিল না। জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দল গঠন করে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। বহুদলীয় নির্বাচন করেন। যে গণতন্ত্র আগে ছিল। পরে তিনি তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। কোন দলকে তিনি খুশি করার জন্য জিয়াকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে উল্লেখ করেননি। তথ্য দিয়েই কথাগুলো বলেছি। আমি এটা ‘ওন’ করি উল্লেখ করেন। বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ-পরবর্তী সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকেদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সকাল এগারোটায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অন্য চার কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব এবং কমিশনের উর্ধতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ইসির দায়িত্ব নেয়ার পর কোন মহল থেকে কোন ধরনের চাপ আসেনি। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে কোন চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। যদি কখনও সরকার বা অন্য কোন মহল থেকে চাপ বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা হয় তবে ইসি তা প্রত্যাখ্যান করবে। এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, সরকারী দলের সঙ্গে সংলাপে জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে উল্লেখ করায় এর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা ব্যাখ্যা পেয়েছি বলব না। এ বিষয়ে ইসির পক্ষ থেকে তাদের কী ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে? জবাবে সিইসি জানান, ইসি কখনও সরকারী দলের সঙ্গে সংলাপ করেনি। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ করা হয়েছে। সংলাপে জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে উল্লেখ করার কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও কোন ব্যাখ্যা চাওয়া হয়নি। তাদের সঙ্গে সংলাপের শুরুতে ইসির পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেন বা তারা ব্যাখ্যা পেয়েছে বলে মনে করতে পারেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা ইসির পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়নি। গত ১৫ অক্টোবর রবিবার বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। এ সময় সিইসি তার বক্তব্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়াও বিএনপির সময় নানা উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের প্রশংসা করেন সিইসি কেএম নুরুল হুদা। বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০০১ সালের তার নেতৃত্বে আবারও সরকার গঠন হয়। আজকের সংলাপে আসা অনেকে মন্ত্রী ছিলেন। তিনি তাদের অধীনে চাকরিও করেছেন। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে প্রকৃত নতুন ধারার প্রবর্তন করেছে উল্লেখ করেন। ওই সংলাপে জিয়াকে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে উল্লেখ করায় বিভিন্ন মহলে সমালোচনার জন্ম দেয়। সরকারী দলের পক্ষ থেকে এর সমালোচনা করা হয়। বিশেষ করে তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক হয়ে এবং ইতিহাস থেকে কথা বলার পরামর্শ দেয়া হয়। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংলাপে আগে এক অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কৌশল হিসেবে সিইসির এ ধরনের কথা বলে থাকতে পারে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। বিএনপির সংলাপের পরে গত ১৮ অক্টোবর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসে নির্বাচন কমিশন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দল ইসির সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপে আগামী নির্বাচন নিয়ে যেমন দলটির পক্ষ থেকে ১১ প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয় তেমনি ইতিহাস, দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনের ইতিহাসের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য ইসির সামনে উপস্থাপন করা হয়। লিখিত সেই বক্তব্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের হোতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের সংবিধান ও সকল প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দেন। শুরু হয় স্বৈরশাসনের। স্বৈ^রশাসক জিয়া তার অবৈধ ক্ষমতার বৈধতা পাওয়ার চেষ্টায় ১৯৭৭ সালে প্রহসনের গণভোটের আয়োজন করেন। তাতে সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার হারায় এবং সব গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। এর ধারাবাহিকতা চলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর আরেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন পর্যন্ত। অবশ্য ওবায়দুল কাদের সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জিয়াকে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠকারী হিসেবে উল্লেখ করায় ইসির বক্তব্যর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আমরা ব্যাখ্যা পেয়েছি। কিন্তু বলা যাবে না। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য সিইসি বলেন, এ বিষয়ে কোন দলের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়নি। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা সংলাপ-পরবর্তী করণীয় নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও উল্লেখ করেন সংলাপে আসা সুপারিশসমূহের মধ্যে সাংবিধানিক, আইনসংক্রান্ত এবং নির্বাচন কমিশনের করণীয় বিষয়ে অনেক সুপারিশ এসেছে। এর মধ্যে যেসব সুপারিশ নির্বাচন কমিশনের নিজের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব তা বাস্তবায়ন করা হবে। যেগুলো সুপারিশের জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে, সেগুলো সরকারের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে পাঠানো হবে আর যেগুলো সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়, সেগুলো সরকারের কাছে পাঠানো হবে। তবে সরকার যদি এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন না করে তাহলে তাদের ওপর চাপ দেয়ার বা বাধ্য করার সুযোগ নেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার কোন উদ্যোগ ইসি নেবে না। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান হওয়া ভাল। ইসির বিদ্যমান যেসব আইন আছে তা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট। কমিশন যথাযথভাবে সেটা প্রয়োগ করবে। যখন, যেভাবে আইন থাকে, তখন সেভাবেই নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করেছে। আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ইসির চ্যালেঞ্জ হলো আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের ভারমুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ মনে করে মোকাবেলার দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। তিনি বলেন, সংলাপে ইসির প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা বেড়েছে। এ সময় তিনি বলেন, ইসির বিদ্যমান আইনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা সম্ভব। তবে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কি হবে না বা কিভাবে মোতায়েন হবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনও আসেনি। সময় এলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
×