ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি স্বর্ণ চোরাচালানে এয়ার হোস্টেসরা জড়িত

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি স্বর্ণ চোরাচালানে এয়ার হোস্টেসরা জড়িত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এয়ার হোস্টেসদের মাধ্যমে উড়োজাহাজের ভেতরে স্বর্ণ পৌঁছায়। তারা সুবিধামতো কোন একটি আসনের নিচে তা রেখে দেন। উড়োজাহাজে খাবার দিতে আসেন ক্যাটারিং শাখার কর্মচারীরা। যাত্রীর সবাই নেমে যাওয়ার পর ময়লার সঙ্গে স্বর্ণগুলো বাইরে নিয়ে আসেন তারাই। এরপর এভাবে সকল সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে স্বর্ণের চোরাচালান বাইরে আসছে বিমানবন্দরের কতিপয় কর্মচারীর সহযোগিতায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম। নাজমুল জানান, গত মঙ্গলবার গভীররাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিমানবন্দর গোলচত্বর থেকে একটি প্রাইভেটকারসহ তিনজনকে আটক করেন তারা। এ সময় উদ্ধার হয় চার কোটি টাকা মূল্যের ৮০টি সোনার বার। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- মীর হোসেন, মোঃ ফারুক আহম্মেদ ও মোঃ শাহীন। তাদের মধ্যে মীর হোসেন রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের ক্যাটারিং বিভাগের কর্মচারী। ফারুক নিজেই চোরাচালানে আসা স্বর্ণের কিছু অংশের মালিক আর শাহীন গাড়িচালক। ডিসি নাজমুল জানান, এর আগেও মীর হোসেনের সহযোগিতায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে সফলভাবে বেশ কয়েকটি চালান বের হয়েছে বিমানবন্দর থেকে। পরশু রাতে আমাদের কাছে খবর ছিল স্বর্ণের একটি বড় চালান বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার গেট দিয়ে বের হয়ে যাবে। ডিবির সদস্যরা বিমানবন্দর গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান করছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে একটি প্রাইকেটকার আসে। কারটি তল্লাশি করলে চারটি স্কেলের বার থেকে মোট ৮০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জেনেছে, তারা বহুদিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এই প্রথমবার তারা ধরা পড়লেন। পুলিশ বলছে, দুবাই থেকে আসা রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে আসা এই চালানের মধ্যে ফারুকের কিছু স্বর্ণ রয়েছে। মীর হোসেন বিমানবন্দর থেকে স্বর্ণ বের করে দিতে সহায়তা করেন আর শাহিন গাড়ির চালক। স্বর্ণগুলোর প্রকৃত গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাড়িটি নিয়ে তারা কাওলার দিকে যাচ্ছিলেন। সেখান থেকে অন্য কেউ স্বর্ণগুলো নিতেন। প্রকৃত গন্তব্য সম্পর্কে তারা কেউ জানাতে পারেননি। ডিসি নাজমুল জানান, তাদের কাছ থেকে এ সময় তিনটি মোবাইল ফোন ও একটি প্রিমিও প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। কিন্তু মোবাইলে এ বিষয়ক কোন কথোপকথন পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইচ্যাটের মাধ্যমে তারা এ সংক্রান্ত যোগাযোগ করতেন। স্বর্ণ চোরাচালানের চক্রের বিভিন্ন ধাপে জড়িত বেশ ক’জনের নামও জেনেছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম এখনই বলা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এয়ার হোস্টেসদের মাধ্যমে উড়োজাহাজের ভেতরে স্বর্ণ পৌঁছায়। তারা সুবিধামতো কোন একটি আসনের নিচে তা রেখে দেন। এরপর ওই আসনের নম্বর জানান অন্যদের। উড়োজাহাজে খাবার দিতে আসেন ক্যাটারিং শাখার কর্মচারীরা। সবাই নেমে যাওয়ার পর ময়লার সঙ্গে স্বর্ণগুলো বাইরে নিয়ে আসেন তারাই। এরপর চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বিমানবন্দরের অন্যদের সহায়তায় স্বর্ণ নিয়ে আসা হয় টার্মিনালের বাইরে। সেখানে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষমাণ চক্রের অন্য সদস্যদের হাতে তুলে দেয়া হয় সেগুলো। পরবর্তীতে তারাই নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে দেয় চোরাচালানের মাধ্যমে আসা স্বর্ণগুলো। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য (উত্তর) বিভাগের ডিসি শেখ নাজমুল আলম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানান, রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজে আনা হয় এই ৮০ পিস সোনার বার। এয়ার বাসটি দুবাই থেকে আসে ২৪ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৫টায়। স্বর্ণের চালানটি আনার পর বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার গেট দিয়ে তা বের করা হয়। বাইরে অপেক্ষমাণ একটি গাড়িতে উঠে পালাচ্ছিল ওই চক্র। ডিসি শেখ নাজমুল আলমের দাবি, চালানটি এসেছে দুবাই থেকে। সোনার বারগুলো বিমানবন্দর গোলচত্বর পার হয়ে কাউলায় অপেক্ষা করা কারও কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু গোলচত্বর পারের আগেই আমাদের কর্মকর্তারা তাদের আটক করে। এই অপারেশনের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য (উত্তর) বিভাগের বিমানবন্দর জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মহররম আলী বলেন, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে মীর হোসেন রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের ক্যাটারিং বিভাগে চাকরি করেন। মূলত স্বর্ণের চালান বের করে দেয়ার দায়িত্বে থাকেন তিনি। এর আগে চক্রটির সঙ্গে জড়িত এয়ার হোস্টেসরা উড়োজাহাজের আসনের নিচে সোনার বারগুলো কৌশলে রেখে যান। ক্যাটারিংয়ের লোকজন যাত্রী নেমে যাওয়ার পর কৌশলে ময়লার সঙ্গে তা নিয়ে আসে। এরপর বাইরে অপেক্ষমাণদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি জানান, এই চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন জড়িত। এর মধ্যে কিছু নাম আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আটকদের মধ্যে ফারুক আহমেদ নিজেই কিছু স্বর্ণের মালিক। তাকে আটক করার ফলে আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। এদিকে স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় আটক একাধিক মূল হোতা বর্তমানে জামিনে আছেন। জামিন পাওয়ার পর তারা আবারও একই পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। মূলত তাদেরই কেউ কেউ দেশের বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে স্বর্ণ চোরাচালানের অবৈধ ব্যবসা। এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তারা।
×