ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

দুই শিল্পীর রেখাচিত্রে লোকজ জীবনের বয়ান

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

দুই শিল্পীর রেখাচিত্রে লোকজ জীবনের বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রেখাচিত্রগুলো দারুণ নজর কাড়ছে শিল্পানুরাগীদের। সহজ ও সাবলীল অঙ্কনশৈলীতে দৃশ্যমান লোকজ জীবন। সেই সূত্রে ক্যানভাসে বর্ণিত হয়েছে আবহমান বাংলার সহজিয়া জীবনচিত্র। ধানম-ির শিল্পাঙ্গন গ্যালারির দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ড্রইংনির্ভর এই চিত্রকর্মগুলো। সেসব চিত্রপটে দেখা যায় চুল বাঁধছে নারী, হুঁকোয় টান মারছে ষাটোর্ধ বৃদ্ধ, পিঠে ঝাকা চেপে কাজে যাচ্ছেন পাহাড়ী নারী। কোন ক্যানভাসে আবার উড়ছে পাখি কিংবা উদ্ভাসিত হয়েছে মৈমনসিংহ গীতিকার কোন চরিত্র। লোকজ জীবনের বয়ান দেয়া ‘ডাইভার্সিটি ইন ডুয়ালিটি টু’ শীর্ষক যৌথ এ প্রদর্শনীর ছবিগুলো এঁকেছেন প্রখ্যাত দুই শিল্পী আব্দুশ শাকুর শাহ ও রণজিত দাস। নিজ শিল্পকর্ম প্রসঙ্গে আব্দুশ শাকুর শাহ বলেন, শিল্প সৃজনের মাধ্যমেই আমার ভাবনার প্রকাশ ঘটে। আমার কাজের ধারাটিও অনেকেই জানেন। প্রথমত লোকজ। তারপরে মৈমনসিংহ গীতিকাকে অবলম্বন করে কাজ করি। এই প্রদর্শনীতে সেই ধারাতেই কিছু কাজ করেছি। ড্রইংয়ের আশ্রয়ে বাংলার গ্রামীণ রূপকে মেলে ধরেছেন রণজিত দাস। সেই সঙ্গে এঁকেছেন আদিবাসী জীবনের চিত্র। এই শিল্পী নিজের কাজ প্রসঙ্গে বলেন, শিল্প সৃষ্টিতে গ্রামীণ পটভূমি আমাকে বিশেষভাবে টানে। তাই তাদের জীবন যাপন নিয়ে কাজ করেছি। রুরাল লাইফের মধ্যে ট্রাইব লাইফটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটাও আমার কাজে এসেছে। এ ছাড়া ড্রইং আর্টওয়ার্কের মেইন স্ট্রাকচার হলো ড্রইং। সাধারণত জল রং, তেলরংসহ অন্যান্য মাধ্যমের বেশি প্রদর্শনী হয়। কিন্তু ড্রইংয়ের প্রতি দুর্বলতা থেকেই এই মাধ্যমে ছবি এঁকে প্রদর্শনী করেছি। পক্ষকালব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে আজ শুক্রবার। বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রয়াণের শতবর্ষে স্মরণে চলচ্চিত্রকার হীরালাল সেন ॥ বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে জন্মেছিলেন হীরালাল সেন। শৈশব থেকেই আসক্ত হন সেলুলয়েডের প্রতি। পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রকার। শুধু তাই নয়, উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শকও তিনি। কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ১৯১৭ সালের ২৬ অক্টোবর প্রয়াত হন। সেই হিসেবে বৃহস্পতিবার পূর্ণ হলো এই নির্মাতার মৃত্যুর শতবর্ষ। বিয়োগান্তক দিনটিতে তাকে স্মরণ করা হলো। এদিন সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে ‘প্রয়াণের শতবর্ষে হীরালাল সেন স্মরণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিস অব বাংলাদেশ (এফএফএসবি) এবং শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে এই চলচ্চিত্রের দিকপালকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ আয়োজনে অগ্রজ চলচ্চিত্রকার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমামের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মসিহউদ্দিন শাকের, চলচ্চিত্রকার মানজারে হাসিন মুরাদ, শিল্পসমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ, চলচ্চিত্র গবেষক ড. মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন ও মানিকগঞ্জের হীরালাল সেন চলচ্চিত্র সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইকবাল হোসেন কচি। এতে ‘উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রকার হীরালাল সেন এবং আমাদের দায়’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চলচ্চিত্র গবেষক ও শিক্ষক অনুপম হায়াৎ। আয়োজনের শুরুতেই আলোচক ও অতিথিদের নিয়ে হীরালাল সেনের প্রতিকৃতিকে সামনে রেখে প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। এরপর হীরালাল সেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞানপ করে পালন করা হয় নীরবতা। অনুপম হায়াৎ তার প্রবন্ধ উপস্থাপনে বলেন, আমার জানামতে বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো হীরালাল সেনের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। হীরালাল সেন তার প্রথম জীবনে আলোকচিত্রী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এরপর তিনি চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে চলচ্চিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি প্রথম ব্যক্তিত্ব যিনি রয়াল বায়োস্কোপ কোম্পানি নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। আমরা তাকে উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রকার হিসেবে অভিহিত করতে চাই। দুই গুণীজনকে ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার প্রদান ॥ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও প্রথম চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা সিনেমার সম্পাদক ফজলুল হক। নির্মাণ করেছেন দেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রেসিডেন্ট। বৃহস্পতিবার ছিল তার ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাকে স্মরণ করে এদিন দুই গুণীজনকে প্রদান করা হলো ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার। ফজলুল হকের সহধর্মিণী প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন প্রবর্তিত এ পুরস্কার পেয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালনায় আবদুল লতিফ বাচ্চু ও চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় নরেশ ভূঁইয়া। পুরস্কারের অর্থমূল্য ২৫ হাজার টাকার সঙ্গে ছিল সম্মাননাপত্র ও স্মারক। রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম ও বিশেষ অতিথি নাট্যজন মামুনুর রশীদ। পুরস্কারপ্রাপ্তদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন ফজলুল হকের মেয়ে কেকা ফেরদৌসী।
×