স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রথম সাবমেরিন কেবল সিমি-উই-৪’র মেরামত কাজ আরও তিনদিন পিছিয়ে গেছে। ২৯ অক্টোবরের মধ্যে কেবলটির মেরামত কাজ শেষ হবে। ২৪ অক্টোবর থেকে কেবলের ‘রিপিটার’ মেরামত কাজ শুরু করা হয়। মেরামত কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৬ অক্টোবর। কিন্তু কেবলের যে অংশে রিপিটার মেরামত করা হচ্ছে তা মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে। রিপিটারটি টেনে তুলতে মেরামতকারী জাহাজের নানা কৌশলে এগোতে হচ্ছে। জাহাজ থেকে বিএসসিসিএলর কাছে দুই দুফা ই-মেলে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) এমডি মশিউর রহমান বলেন, রিপিটারের ওপরে কয়েক ফুট পলি জমে যাওয়ায় তা টেনে তুলতে একটু সময় লেগে যাচ্ছে। এ জন্য আরও দুইদিন সময় বেশি লাগবে কেবল মেরামতে। তবে দেশে সাবমেরিন কেবল সিমি-ইউ-৫’র কেবল ও বেসরকারী মালিকানাধীন ‘ইন্টারনেট টেরিস্টরিয়াল কেবল’র (আইটিসি) মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ ঠিক রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) এমডি মশিউর রহমান জানান, কেবলটির মেরামত কাজ ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রিপিটারের ওপর পলি জমতে জমতে কয়েক ফুট পলির নিচে রিপিটারটি চলে গেছে। আজ কালের মধ্যে রিপিটারটি টেনে তোলা যাবে বলে মেরামতকারী জাহাজ থেকে জানানো হয়েছে। ওই জাহাজে বিএসসিসিএলর ইঞ্জিনিয়ার শরিফুল ইসলামও রয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে আগামী ২৯ অক্টোবর কেবলটির মেরামত কাজ পুরোপুরি শেষ হবে। তখন দেশে ইন্টারনেটের গতি বাড়বে। বর্তমানে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক রাখতে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ১৫০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। সিমি-উই-৪ কেবলের মাধ্যমে ২৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ বন্ধ রয়েছে। এই কেবলের বাংলাদেশ অংশের ‘রিপিটার’ প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। রিপিটারটি পুরোপুরি বদল করতে হবে। সিমি-উই-৪ কেবলের মেয়াদ কাল ২০ বছর। ২০০৫ সালে কেবলটি স্থান করা হয়। বর্তমানে কেবলের বয়স ১২ বছর পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে কেবলটির কয়েক দফা মেরামত কাজ করেছে কনসোটিয়াম। আগামী ডিসেম্বরে আবারও এই কেবলে মেরামত কাজ শুরু হবে। ওই সময় কেবলটির মেরামত কাজ চলবে ইউরোপ অংশে। সিমি-উই-৪ কেবলটির মালিক ১৬ দেশ। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে কেবলটি ফ্রান্স থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত চলে গেছে। যেখান থেকে বাংলাদেশের সংযোগ স্থাপন হয়েছে সেখানেই মেরামত কাজ চলছে। সিএস এশিয়ান রেস্টোরার (কেবল শিপ) এই জাহাজে কোনসোটিয়ামের চীফ ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন জুলফিকার সোলায়মান। বাংলাদেশের একজন ইঞ্জিনিয়ার শরিফুল ইসলাম কেবল মেরামত কাজ করছেন। কক্সবাজার সমুদ্র তীর থেকে ১২০ কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে মেরামত কাজ চলছে। আগামী ২৭ অক্টোবর মেরামত কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মেরামত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পটুয়াখালীতে স্থাপিত দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সিমি-উই-৫ কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে দেশের ইন্টারনেট। ইন্টারনেট থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোন সুযোগ নেই। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে অনেক আগেই যুক্ত হয়েছে দেশ।
বিএসসিসিএল জানিয়েছে, সিমি-উই-৫ (সাউথ এশিয়া-মিডেলিস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ) সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে এ বছরের ডিসেম্বরে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এই কেবলের সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হওয়ায় দেশে প্রথম কেবল বন্ধ হলেও বিকল্প কেবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবারহ দেয়া হবে। বর্তমানে বিকল্প কেবলের মাধ্যমে সেই কাজটিই করা হচ্ছে। এ সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে দেশে পর্যায়ক্রমে দেশে এক হাজার ৩শ’ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাবে। তখন ফোর জি (চতুর্থ প্রজন্মের) ফাইভ জি (পঞ্চম প্রজন্মের) নেটওয়ার্ক স্থাপন করা আরও সহজ হবে।
বিএসসিসিএলের এমডি মশিউর রহমান বলেন, কেবল মেরামত কাজ তিনদিন বেড়ে গেলেও ইন্টারনেট সরবরাহ দেয়া স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। ২৯ অক্টোবর রবিবারের মধ্যে কেবল মেরামত কাজ শেষ হবে এমন তথ্য মেরামতকারী জাহাজ থেকে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাহাজ থেকে দুই দফা ই-মেলে জানানো হয়েছে, রিপিটারটি পুরোপুরি বদল করতে হবে।