ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্যাসিবাদ কেন আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

ফ্যাসিবাদ কেন আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে

[বিশ্বের দেশে দেশে ফ্যাসিবাদ কেন নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে? এর কারণ কি পুঁজি বা মূলধনের বিশ্বায়ন? নব্য উদার রাজনীতির আধিপত্য? এবং এর পাশাপাশি বামপন্থী শক্তির নতুন এজেন্ডা হাজির করতে ব্যর্থতা? নয়াদিল্লীর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইকোনমিক স্টাডিজের প্রফেসর ইমেরিটাস প্রভাত পাটনায়েক বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে সেই কারণগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। নিবন্ধটি ‘দি টেলিগ্রাফ’ থেকে অনূদিত] বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছে, যদিও অনেক সময় একে ‘জাতীয়তাবাদ’ বা ‘দক্ষিণপন্থী লোকরঞ্জনবাদ’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। তবে এই শব্দগুলো বিভ্রান্তিকর এবং এর মধ্যে নব্য উদারনৈতিক মনমানসিকতার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। ‘জাতীয়তাবাদ’ শব্দটির মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে এভাবে সেটিকে ব্যবহার করা হলে এর বিপরীতে যে নব্য উদার বিশ্বায়ন ব্যবস্থা রয়েছে তারই বরং পরোক্ষ প্রশস্তি করা হয়। এটা আরও বিভ্রান্তিকর, কারণ তা গান্ধীর ‘জাতীয়তাবাদ ও হিটলারের জাতীয়তাবাদের’ মধ্যে পার্থক্য টানে না। অনুরূপভাবে ‘পপুলিজম’ বা লোকরঞ্জনবাদ কথাটা ইদানীং সকল পুনর্বণ্টনমূলক বা কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ব্যবস্থাবলী বোঝাতে ব্যবহার হচ্ছে এবং সেগুলোকে ‘উন্নয়নের’ নব্য উদার ব্যবস্থাবলীর বিপরীতে অনুদারভাবে দাঁড় করানো হচ্ছে। ঐ শব্দটিকে ফ্যাসিবাদের বর্তমান জোয়ারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা বিভ্রান্তিকর, কারণ তা এই শব্দের উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ায় এবং আরও একটা কারণ এর মধ্যে জনগণের কাছে হস্তান্তরের যে প্রচ্ছন্ন আভাস আছে তা এসব আন্দোলনের এজেন্ডার কোথাও স্থান পায় না। বর্তমান ফ্যাসিবাদী জোয়ার অবশ্যই ১৯৩০ -এর দশকের ফ্যাসিবাদের প্রতিরূপ নয়। আজকের প্রেক্ষাপট আলাদা। এমনকি একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটের মধ্যেও এ ধরনের যে কোন আন্দোলনের নিজস্ব দেশগত সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে ‘ফ্যাসিবাদ’ শব্দটি যথোপযুক্ত, কারণ আগের সকল ফ্যাসিবাদী জোয়ারের অন্তত চারটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য বর্তমান ফ্যাসিবাদী জোয়ারের মধ্যেও লক্ষ্য করা যায়। প্রথমটি হলো শ্রেষ্ঠত্ববাদ এবং এর অনুষঙ্গ হিসেবে ‘অন্যদের’ দমন : পাশ্চাত্যে শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদ, ভারতে হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদ ইত্যাদি ইত্যাদি। বস্তুতপক্ষে এসব আন্দোলনকে ‘জাতীয়তাবাদ’ শব্দের চাইতে ‘শ্রেষ্ঠত্ববাদ’ কথাটির দ্বারা অধিকতর সঠিকভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। জার্মানির ফ্যাসিবাদী দল এএফডির একজন নেতা যখন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন যে, জার্মানির রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তিনি একজন জার্মানেরও দেখা পান না, তখন স্বভাবতই তিনি জার্মানত্বকে শ্বেত চামড়ার সঙ্গে একাত্ম করে দেখেন এবং ‘তেমন মনমতো’ নয় এমন লোকদের জার্মান নাগরিকত্বের জন্য অনুতাপ করেন। এটা জাতীয়তাবাদ নয়, বরং শ্রেষ্ঠত্ববাদের লক্ষণ। ফ্যাসিবাদের দ্বিতীয় লক্ষণ হলো যুক্তিহীনতাকে মহিমান্বিত করা যার একটা অভিপ্রকাশ হলো শ্রেষ্ঠত্ববাদ। ‘কৃষ্ণাঙ্গরা নিকৃষ্ট’ বা ‘দলিত’ বা ‘নিকৃষ্ট’ বা ‘মুসলমানরা নিকৃষ্ট’, খোদ এই বক্তব্যগুলোই যুক্তিহীনতার পরিচায়ক। তবে যুক্তিহীনতার প্রতি আরও সর্বাত্মক আবেদন, যুক্তির ওপর আরও সার্বিক আঘাত হানার দ্বারাই এই যুক্তিহীনতাকে বজায় রাখা হয়। এর স্বাভাবিক কতগুলো লক্ষণ হলো যে, কোন যুক্তিতর্কে- তথ্য প্রমাণের প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা প্রদর্শন, শিক্ষার কেন্দ্রগুলোতে হামলা করা, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর শারীরিক আক্রমণ এবং মিডিয়াকে হুমকি-ধমকি দেয়া। তৃতীয়ত : ফ্যাসিবাদ এমন এক আন্দোলন যা কতিপয় হিংসাশ্রয়ী গ্রুপের স্রেফ অসৎ ও চাতুরিপূর্ণ ক্রিয়াকলাপ থেকে আলাদা। তবে ফ্যাসিবাদ এমন গ্রুপগুলোকে কাজে লাগাতে পারে এবং সেগুলোই আবার ফ্যাসিবাদী মনমানসিকতার অধিকারী হয়ে উঠতে পারে। যেমন ধরুন, লাতিন আমেরিকায় খুনে গ্যাংগুলোকে দশকের পর দশক ধরে বিশেষ করে সামরিক শাসনের অধ্যায়ে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই কারণে সামরিক শাসনকে ফ্যাসিবাদী বলা যাবে না। কারণ ফ্যাসিবাদ একটা আন্দোলনের দ্বারা টিকে থাকে, যে আন্দোলন সামরিক শাসনের ক্ষেত্রে হয় না। চতুর্থত : ফ্যাসিবাদী আন্দোলন তার জীবনচক্রের এক নির্দিষ্ট পর্যায়ে বৃহৎ কর্পোরেট পুঁজির সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসে এবং শুধু এই সমঝোতার বদৌলতে ফ্যাসিবাদ মূল মঞ্চে উপস্থিত হতে এবং সম্ভব হলে ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হয়। ফ্যাসিবাদীরা যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দরজায় করাঘাত করে, ফ্যাসিবাদীরা যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে (যেমন ভারতে হয়েছে) এবং ফ্যাসিবাদীরা যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ওপর তাদের বজ্রমুষ্টিকে রূপান্তরিত করে একটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র কায়েম করে বসে (যা আমরা বর্তমানে এ পর্যন্ত কোথাও হতে দেখিনি) সেটা তারা শুধু কর্পোরেট লগ্নিকারকদের সমর্থনের ওপর ভিত্তি করেই করতে পারে। নরেন্দ্র মোদির উত্থানের পিছনেও ভারতের কর্পোরেট ফিন্যান্সিয়াল অলিগার্কির সুদৃঢ় সমর্থন রয়েছে। এই শেষের বিষয়টি থেকেও ফ্যাসিবাদী উত্থানের কারণগুলোর একটা সূত্র পাওয়া যায়। বেশির ভাগ সমাজে ফ্যাসিবাদী, আধা-ফ্যাসিবাদী ও নব্য ফ্যাসিবাদী আন্দোলনগুলো মূল স্রোতধারা থেকে দূরে প্রান্তিক ঘটনা হিসেবে থাকে। অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় সহসা সেগুলো লক্ষণীয় অবস্থানে চলে আসে। সেটা ঘটে এই কারণে নয় যেমনটা বামপন্থী মহল প্রায়শ ধারণা করে যে, কর্পোরেট হাউসগুলো এমন সঙ্কটের সময় শ্রমিক শ্রেণীর চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ফ্যাসিবাদীদের পিছনে সমর্থন যোগায়। বরং ঠিক এর উল্টো কারণে ঘটে। আর সেই কারণটি হলো কায়েমী স্বার্থের প্রতিভূ প্রচলিত দলগুলো সঙ্কট থেকে উদ্ধারের পথ খুঁজে বের করতে অক্ষম এবং বামপন্থী দলগুলোও এতই দুর্বল যে, তারা তাদের এজেন্ডা জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারে না। প্রধানত মধ্যবিত্ত পাতিবুর্জোয়া আন্দোলন হিসেবে যাত্রা শুরু করা ফ্যাসিবাদ এ ধরনের সময়গুলোকে শক্তি অর্জন করে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কোন সমাধান তুলে ধরতে পারে বলে নয়, বরং এই কারণে অর্জন করে যে, সমাজের তাবৎ সমস্যার অলৌকিক সমাধান এনে দেবে এমন এক ত্রাণকর্তাকে তুলে ধরে ফ্যাসিবাদ সমস্ত আলোচনার প্রকরণটা একেবারেই বদলে দেয়। আর এমন এক ত্রাণকর্তাকে তুলে ধরার জন্য যুক্তিহীনতার আশ্রয় নেয়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এবং এই শক্তি অর্জনের কারণেই কর্পোরেট পুঁজি নিজের অবস্থান রক্ষা করতে ফ্যাসিবাদকে ‘গ্রহণ’ করে। সুপরিচিত দার্শনিক এবং সংস্কৃতি বিষয়ক তাত্ত্বিক ওয়াল্টার বেঞ্জামিন নিজেও ছিলেন ফ্যাসিবাদের শিকার। তিনি ফ্যাসিবাদকে ‘ব্যর্থ বিপ্লব’ থেকে উদ্ভূত বিষয় হিসেবে দেখেছিলেন। জার্মানির এবং সামগ্রিকভাবে ইউরোপের বেলায় কথাটা নিঃসন্দেহে সত্য ছিল। কারণ বলশেভিক বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে সেখানে শ্রমিক শ্রেণীর একের পর এক অভ্যুত্থান ঘটেছিল। কিন্তু সেসব অভ্যুত্থানের ব্যর্থতার কারণে শ্রমিক শ্রেণী বিভক্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তবে প্রশ্ন উঠে : বর্তমান যুগে যেখানে অন্তত চার দশক ধরে কোথাও কোন বিপ্লব সংঘটনের চেষ্টা হয়নি সেখানে শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলন এবং এর রাজনৈতিক অভিব্যক্তি হিসেবে বামপন্থী আন্দোলন কেন এত দুর্বল হয়ে যাবে যে, বর্তমান পুঁজিবাদী সঙ্কট থেকে বামপন্থী জোয়ারের বদলে বিশ্বব্যাপী ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে? এর এক স্বাভাবিক কারণ হলো বিশ্বায়ন এবং এর সঙ্গে যুক্ত নব্য উদারনৈতিক নীতিসমূহের পরিণতিতে সর্বত্রই ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়েছে। পুঁজির বিশ্বায়নের ফলে উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ নিম্নমজুরির তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আউট সোর্সিং করা হচ্ছে। এতে করে উন্নত দেশগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ক্ষুদে উৎপাদন ও কৃষিকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উন্নত দেশগুলোর এমন ব্যাপক আউটসোর্সিং সত্ত্বেও তৃতীয় বিশ্বে শ্রমের মজুদ স্ফীত হচ্ছে। কারণ সে সব দেশের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ক্ষুদে উৎপাদকরা কাজ বা চাকরির সন্ধানে শহরে এসে ভিড় জমাচ্ছে। এই চাকরিও আবার যথেষ্ট মাত্রায় বাড়ছে না, যাতে করে শ্রমশক্তির স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে শুষে নিতে পারে। এই স্ফীতমান শ্রমের মজুদ স্বাভাবিকভাবেই ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে পঙ্গু করে দেয়। তাছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন জঙ্গীরূপ ধারণ করলে বিনিয়োগ অন্য জায়গায় চলে যাবে এমন আশঙ্কা তো সর্বদা উপস্থিত। তদুপরি নব্য-উদারতাবাদের অধীনে সর্বব্যাপী একটা ঘটনা ঘটছে এবং তা হলো বিরাষ্ট্রীয়করণ। এই বিরাষ্ট্রীয়করণ সর্বত্রই ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে দুর্বল করে ফেলে। কারণ ট্রেড ইউনিয়নগুলো বেসরকারী খাতের তুলনায় সরকারী খাতে অবশ্যম্ভাবীরূপে অধিকতর শক্তিশালী হয়। শ্রমিক শ্রেণীর রাজনীতি দুর্বল হয়ে পড়ার দ্বিতীয় একটি কারণ আছে। সেটা হচ্ছে এই রাজনীতির পক্ষে নব্য-উদারতাবাদের আদর্শিক আধিপত্যকে প্রবল নাড়া দিয়ে হটাতে না পারা। ব্রিটিশ শ্রমিক দলের টনি ব্লেয়ার ও জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির গারহার্ড স্রোয়েডারের মতো ব্যক্তিরাই যে এই আধিপাত্যের বাহন হিসেবে কাজ করেছেন ঠিক তা নয়। এমনকি মার্ক্সবাদী বামপন্থীরাও নব্য-উদারতাবাদের সমালোচনা করা সত্ত্বেও তা থেকে অনিবার্য উপসংহারটুকু টানেননি যে বিকল্প এজেন্ডা অনুসরণ করার জন্য পুঁজিকে যথাস্থানে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সেই কারণে একে বিশ্বায়ন থেকে কতকাংশে বিযুক্ত করা প্রয়োজন। আর আমাদের মতো দেশগুলোতে যেখানে মার্কসীয় বামপন্থীরা কয়েকটি রাজ্যেই শুধু শাসন পরিচালনা করতে পেরেছে সেখানে তারা প্রায়শ এই যুক্তিতেই প্রথাগত নীতি অনুসরণ করেছে যে, একমাত্র কেন্দ্র সরকারই নব্য-উদারতাবাদ থেকে সরে আসা কার্যকর করতে পারে। কিন্তু যেখানে বামপন্থীরা নব্য-উদারতাবাদের আধিপাত্য ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে পেরেছে সেখানে তারা ফ্যাসিবাদীদের চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম হয়েছে। একনিষ্ঠ সমাজতন্ত্রী বার্নি স্যান্ডার্স এক ভিন্ন, ওয়ালস্ট্রীট বিরোধী এজেন্ডা উপস্থাপন করেছিলেন। জনগণের উল্লেখযোগ্য সমর্থনও পেয়েছিলেন তিনি এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলে হয়ত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়েও দিতে পারতেন। জেরেমি করবিন এক নতুন বামপন্থী এজেন্ডা নিয়ে এসেছেন, যার মধ্যে জাতীয়করণও আছে। তিনি ব্রিটেনের শ্রমিক শ্রেণীর রাজনীতিকে এই পরিসরে পুনরুজ্জীবিত করেছেন যে তার ফলে ফ্যাসিস্ট দল ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টির ভোটের ভাগ আগের সাধারণ নির্বাচনে যেখানে ছিল ১১ শতাংশ সেখান থেকে সর্বশেষ নির্বাচনে মাত্র ২ শতাংশে নেমে এসেছে। ফ্রান্সে জাঁ-লুক মেলেনকনের লেফট পার্টি ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে একত্রে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নব্য-উদারপন্থী এজেন্ডার বিরোধিতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। সেখানে ম্যারিন লা পেনের ফ্যাসিবাদী পার্টির ভোটের ভাগ প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টারি নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ে ২৩ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে এবং পার্লামেন্টে এর আসন সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮টি। বস্তুতপক্ষে এই দলের ভোটসংখ্যা কমিউনিস্ট পার্টি ও মেলেনকনের পার্টির একত্রে প্রাপ্ত ভোটের চাইতে সামান্য কম। পার্লামেন্ট নির্বাচনে একজোট হয়ে লড়াই না করা সত্ত্বেও তারা ২৭টি আসন পেয়েছে, যা ফ্যাসিস্টদের প্রাপ্ত আসনের চেয়ে অনেক বেশি। সংক্ষেপে বলতে গেলে বামপন্থীরা নব্য-উদারপন্থীদের আধিপত্য ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে জনগণকে সুনির্দিষ্ট বিকল্প এজেন্ডা দিতে পারলে ফ্যাসিবাদীদের উত্থান পাল্টে দেয়া যেতে পারে। ভারতে বামপন্থীরা কংগ্রেসকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যাপক বিস্তৃত ফ্যাসিবাদবিরোধী জোট গঠন করবে কিনা কিংবা নব্য-উদারপন্থী দলগুলোকে নিয়ে কোন জোট গঠন বর্জন করবে কিনা সে প্রশ্নে যেখানে বিভক্ত সেখানে ওপরের ঐ ঘটনাবলী ভারতের জন্য কি তাৎপর্য বহন করে? পূর্ববর্তী আলোচনা থেকে এই দাঁড়ায় যে, এই বিতর্কটা সম্পূর্ণ উল্টে দেয়া উচিত। কে ‘স্পর্শযোগ্য’ এবং কে নয় সেটা বিষয় নয়। বিষয়টা হচ্ছে একটা বিকল্প এজেন্ডা এগিয়ে নেয়া এবং যে এই এজেন্ডার সমর্থনে আসবে তার সঙ্গে জোট বাঁধা। এই ধরনের বিকল্প এজেন্ডা বা কর্মসূচী হতে হবে ন্যূনতম, তবে তাৎপর্যপূর্ণ। এমনকি সকলকে বিনামূল্যে ও মানসম্পন্ন চিকিৎসা দেয়ার জন্য রাষ্ট্র পরিচালিত জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চাই এবং সকল শিশুকে বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদানের জন্য পাড়ায় মহল্লায় রাষ্ট্র পরিচালিত মানসম্পন্ন স্কুল চাই স্রেফ এই দুই দফা কর্মসূচী এদেশের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য বদলে দেয়ার ক্ষেত্রে বহুলাংশে সহায়ক হবে। সূত্র : টেলিগ্রাফ
×