ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞানীদের কৃতিত্ব

প্রকাশিত: ০৩:২৯, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

বিজ্ঞানীদের কৃতিত্ব

লিভার বা যকৃতের একটি প্রাণঘাতী ব্যাধির নাম হেপাটাইটিস-বি। অদ্যাবধি এর কোন নিরাময় বা সুচিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। যদিও প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে এই রোগটির নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে তাতেও রোগীর নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ সেবনে। সম্প্রতি বাংলাদেশের দুজন গবেষক হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসায় অধিক কার্যকর ও উন্নত ওষুধ উদ্ভাবন করেছেন। তাদের একজন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর এবং দ্বিতীয় জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব। তাদের দীর্ঘ গবেষণায় উদ্ভাবিত ওষুধের নাম ‘ন্যাসভ্যাক’. যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ, জাপান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ব্যবহার করে অভূতপূর্ব সাফল্য পাওয়া গেছে। চিকিৎসকদ্বয়ের গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য হলো, হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিয়ে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করা। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী বিজ্ঞানী মুহাম্মদ জহিরুল আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একদল গবেষক এমন একটি কিট আবিষ্কার করেছেন, যা দিয়ে ঘরে বসেই প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব। তাদের উদ্ভাবিত যন্ত্রটির দামও খুব কম। বাংলাদেশী টাকায় মাত্র দেড় শ’ টাকা। উল্লেখ্য, ক্যান্সারের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। বর্তমান বিশ্বে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই ভূখ-ে এটি একটি অভাবনীয় সাফল্য নিঃসন্দেহে। বাংলাদেশ এখন ধান-চাল উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং কিছু পরিমাণ উদ্বৃত্ত চাল রফতানিও করে। যদিও অসময়ে অতিবৃষ্টি, পাহাড়ী ঢল, বন্যা, জলাবদ্ধতা ও মিয়ানমার থেকে হঠাৎ করে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীর চাপ সামলাতে জরুরী খাদ্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে হচ্ছে। তবে আগাম নতুন চাল বাজারে আসতে শুরু করায় সার্বিক পরিস্থিতি বর্তমানে অনুকূলে। আর এর প্রধান কৃতিত্ব অবশ্যই বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের। ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের আদলে তৈরি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত খ্যাতিমান বিজ্ঞানীরা দেশের উপযোগী উন্নতজাতের উচ্চফলনশীল ধানের জাত ও বীজ একের পর এক উদ্ভাবন করে ধান-চাল উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে অনবদ্য অবদান রেখে চলেছেন। বিভিন্ন জাত ও মানের উফশী জাতের মানসম্মত ধানের পাশাপাশি তারা উদ্ভাবন করেছেন খরা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধান। সম্প্রতি রংপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা আমন মৌসুমের জাত হিসেবে ব্রি-৭৫ আগাম জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন দীর্ঘ গবেষণা করে। এই ধানবীজটি রংপুর বিভাগ তথা উত্তরাঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী এবং মাত্র ৮০ দিনে ফলন হয় হেক্টর প্রতি ৫ টনেরও বেশি। বিজ্ঞানীদের আশা আগাম জাতের এই ধান এ অঞ্চলে আমন মৌসুমে আবাদ করা গেলে অতিরিক্ত আরও ৫ লাখ টন ধান উৎপন্ন হবে। ধানের পরই বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী কৃষিপণ্য পাট। পাটের জেনোম তথা বংশগতির মানচিত্র উদ্ভাবন করে বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম ও তার দল তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সারা বিশ্বে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পাটের মেধাস্বত্ব তথা প্যাটেন্ট রাইট সুরক্ষার জন্য আবেদনও করেছে আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে। এই আবিষ্কার ও স্বত্বাধিকারের ফলে বাংলাদেশ উফশী ও উন্নত জাতের পাট উৎপাদনের পাশাপাশি অতি সূক্ষ্ম পাটতন্তু তৈরি করে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় একচ্ছত্র প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম। তবে এর জন্য চাই পাট নিয়ে আরও উচ্চ ও উন্নততর নিরন্তর গবেষণা এবং এর সঠিক ব্যবহার। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে বিজ্ঞান গবেষণার সুযোগ সীমিত এবং আর্থিক বরাদ্দও সীমাবদ্ধ। ফলে এদেশের প্রতিভাবান ও মেধাবী বিজ্ঞানীরা প্রায়ই উন্নত বেতন ও গবেষণার আকর্ষণে বাইরে চলে যান। তদুপরি গবেষণাগারে যেসব বিজ্ঞানী দিনরাত কাজ করেন তাদের সৃজনশীল কাজটি ১০টা-৫টা নিয়মিত অফিসের মতো হলে চলে না। বরং নতুন কিছু একটা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এটা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। নিজের এবং সংসারের দিকেও মন দিলে চলে না তাদের। সেক্ষেত্রে গবেষণাগারে যারা কাজ করেন, তাদের সুযোগ-সুবিধা-প্রণোদনা নিয়ে আলাদাভাবে ভাবতে হবে । পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞান গবেষণাগার স্থাপনে বাড়াতে হবে আর্থিক বরাদ্দ। তাহলেই বিজ্ঞান গবেষণায় ইচ্ছুক মেধাবী ও প্রতিভাবানদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে। সরকার এদিকে সবিশেষ মনোনিবেশ করবে বলেই প্রত্যাশা।
×