ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে না ফিরতে উস্কানি আরএসওর

প্রকাশিত: ০৩:২১, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে না ফিরতে উস্কানি আরএসওর

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের স্রোতে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের ক্যাডাররাও ঢুকে পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেড়মাস ধরে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা কম হলেও বর্তমানে প্রতি রোহিঙ্গা পরিবারে সদস্যদের মধ্যে যুবকদেরও দেখা মিলছে। আরএসও নেতারা ঐসব ক্যাডারকে সাহস যুগিয়ে যাচ্ছে। স্বদেশে ফিরে যাওয়া এবং স্থানান্তরে রোহিঙ্গাদের ‘না’ বলাতে বিভিন্ন কৌশল ও অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। জানা যায়, দুই সপ্তাহ ধরে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ক্যাডাররা আশ্রয়স্থল ঠিক হওয়ার পরপরই আরএসও নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গাদের বিভ্রান্ত করে চলছে। আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ আরএসও সহ একাধিক সন্ত্রাসী উগ্রবাদী গোষ্ঠী স্বদেশে ফিরে না যেতে রোহিঙ্গাদের উস্কানি দিচ্ছে। এ অন্যায় কাজে একশ্রেণীর এনজিও কর্মকর্তা, মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী ধনাঢ্য রোহিঙ্গারা আরএসও ক্যাডারদের ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপে পড়ে আউং সান সুচি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে রাজি হওয়ায় দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপ রোহিঙ্গাদের এ সিদ্ধান্তে ‘না’ বলাতে তোড়জোর শুরু করেছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া কয়েক রোহিঙ্গা নেতার মুঠোফোন যেন সর্বক্ষণই ব্যস্ত। বলা হচ্ছে শুধু মিয়ানমারে নয়, বর্তমান আশ্রয়স্থল থেকে যেন কেউ অন্য কোথাও স্থানান্তর না হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে নেপিডোতে সফররত বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা আউং সান সুচি বলেছেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার কাজ শুরু করেছে। এ খবর প্রচার হলে কতিপয় এনজিও সংস্থা, মৌলবাদী গোষ্ঠী ও আরএসও নেতার যেন চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন কৌশলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে না যেতে ষড়যন্ত্র করছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বলতে রোহিঙ্গাদের শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে, ‘দরকার হলে এখানে মরে যাব-তারপরও পুরোপুরি শান্তি না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারে যাব না।’ স্থানীয়রা জানান, লাখ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে কারা রোহিঙ্গা এবং কে স্থানীয় বাসিন্দা তা ফারাক করা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের উস্কানিদাতা বহু অচেনা লোকজনকে ক্যাম্প এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তারা নিজেদের বাংলাদেশী বলে দাবি করে থাকে। অথচ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গোপনে কথা বলার সময় তারা নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিক (পুরনো রোহিঙ্গা) বলে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। টেকনাফ ও উখিয়ায় প্রধান সড়ক লাগোয়া ক্যাম্পগুলো স্থাপিত হওয়ায় প্রশাসনের সদস্যরাও যানবাহনে চলাচলকারী যাত্রী বা পথচারীকে বাধা দিতে পারছে না। সন্দেহজনক কোন ব্যক্তিকে চ্যালেঞ্জ করলেও তিনি সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র বের করে দেখিয়ে অমুক কাজে বা আত্মীয়ের কাছে এসেছেন বলে দাবি করে অনর্গল শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকে। এতে কে স্থানীয়, কারা আরএসও জঙ্গী এবং কারা পুরনো রোহিঙ্গা পৃথক করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনের ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে। এদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন না থাকলেও প্রতিদিন রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করে চলছে কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে। যারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের ওই স্থান থেকে না সরতে ফুসলিয়ে চলছে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আরএসও জঙ্গীরা। তাদের ভয় দেখিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে- সমুদ্রের মধ্যখানে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গাদের কোথাও কারও সঙ্গে যোগাযোগ চলবে না। সেখানে রোহিঙ্গারা সাগরের পানিতে ডুবে মরবে ইত্যাদি বলে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে আরএসও জঙ্গীরা। এসব উস্কানি ও ভয়ভীতি পেয়ে রোহিঙ্গারা স্থান ছেড়ে যাচ্ছে না বান্দরবানের সন্ন্কিটে জিরো পয়েন্টে বিভিন্ন আশ্রয় শিবির থেকেও। অথচ সরকারের সিদ্ধান্ত মতে সকল রোহিঙ্গাকে টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাবার কথা। ষড়যন্ত্রকারী চক্রের বিভিন্ন উস্কানির কারণে ওসব আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে রাজি নয় অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের জিরো পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্ব কোনাপাড়া, বড়ছনখোলা, সাপমারাঝিড়ি এবং ফুলতলী চারটি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে আপাতত সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। এসব রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে উর্ধতন মহল থেকে এখনও দিকনির্দেশনা আসেনি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বনিক। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর বড়ছনখোলায় ১৬শ’ পরিবারের সাড়ে নয় হাজার, শাপমারাঝিড়ি ৬শ’ পরিবারে চার হাজার, ফুলতলী ৭৮ পরিবারের ৫শ’ এবং ঘুমধুম দক্ষিণ-পূর্ব কোনাপাড়ায় ১৫শ’ পরিবারের ৯ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে সেখানে আরও পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে।নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী ও ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়িতে কোন রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্র নেই। চারটি স্থানে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছে। জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, বান্দরবানের সীমান্তে নোম্যান্স ল্যান্ডে আন্তর্জাতিক সীমারেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি এখনও। সরকার সিদ্ধান্ত না নেয়া পর্যন্ত আপাতত সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরানো হবে না।
×