ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লোহাগড়ায় ৩০ প্রাইমারী স্কুলভবন ঝুঁকিপূর্ণ

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

লোহাগড়ায় ৩০ প্রাইমারী স্কুলভবন ঝুঁকিপূর্ণ

রিফাত-বিন-ত্বহা, নড়াইল থেকে ॥ খোলা আকাশের নিচে ছাতার ব্যবহার থাকলেও ঘরের মধ্যে ছাতার ব্যবহার চোখে পড়ার কথা নয়। তাও আবার শ্রেণীকক্ষের ভেতরে! এই অবস্থা লোহাগড়া উপজেলার ঈশানগাতী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ছাদ দিয়ে পানি পড়ায় নিরুপায় শিশু শিক্ষার্থীরা পাঠদানের সময় শ্রেণীকক্ষেই ছাতা ব্যবহার করছে। একই অবস্থা শিক্ষকদেরও। এই বিদ্যালয়টির মতো অধিক ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে আরও ২৯টি বিদ্যালয়। এছাড়া ৪১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন মধ্যম ও স্বল্প মেরামত এবং সংস্কারের তালিকায় রয়েছে। এদিকে সচেতনমহলসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারী টাকার যথাযথ ব্যবহার না হওয়ায় ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আরও কম সময়ের মধ্যে ভবনগুলো অকেজো হয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, লোহাগড়া উপজেলার ঈশানগাতী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৯ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭২৫ টাকা ব্যয়ে ১৯৯৯ সালের ৩০ মার্চ একতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তিন কক্ষবিশিষ্ট এই ভবনটিতেই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত দুই ভাগে পাঠদান করানো হয়। অথচ, তিন বছর যাবত ভবনটির ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। ভবনের সব কক্ষেরই এই অবস্থা। পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাজমিন নাহার জানায়, বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। তারা ঠিকমতো ক্লাস ও পড়ালেখা করতে পারে না। এ কারণে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তার। দ্বিতীয় শ্রেণীর আরিফুজ্জামান ও মারিয়া আক্তার বলে, বৃষ্টি হলেই ছাতা মাথায় দিয়ে আমাদের ক্লাস করতে হয়। ছাদ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি পড়ে। একদিন জোরে বৃষ্টি হলে দু’তিন দিন ধরে ছাদ দিয়ে পানি ঝরে। এ কারণে আমরা ভালভাবে পড়ালেখা করতে পারি না। সহকারী শিক্ষক আবদুর রউপ মোল্যা বলেন, বিদ্যালয়ের ছাদে বড় ফাটল রয়েছে। যে কারণে বৃষ্টির পানি ভেতরে প্রবেশ করে শ্রেণীকক্ষসহ অফিস রুমের সবকিছু ভিজে যায়। পলিথিন দিয়ে ছাদ ডেকে দেয়ার পরও বৃষ্টির পানি ভেতরে প্রবেশ করে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ছাদ ধসে যাওয়ার আতঙ্কে আছি। অপর শিক্ষক তারিকুল ইসলাম বলেন, একদিকে বিদ্যালয় ভবনটি জরাজীর্ণ, অপরদিকে রয়েছে শ্রেণিকক্ষের সঙ্কট। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের সামনে খোলা আকাশের নিচে শিশু শ্রেণীর পাঠদান চলছে। তবে, বৃষ্টি শুরু হলে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় তিন বছর ধরে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ছাতা মাথায় শ্রেণীকক্ষে যান। এ বছর বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় বিড়ম্বনা বেড়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এক হাতে ছাতা, অন্য হাতে বই-খাতা-কলম নিয়ে ক্লাস করছে। এতে করে লেখাপড়ায় ঠিকমতো মন দিতে পারছে না। জরাজীর্ণ ভবনের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু, কোন সুরাহা মেলেনি। এদিকে, ঈশানগাতী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো লোহাগড়া উপজেলায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা আরও ২৯টি। এর মধ্যে কোনটি আবার পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে হাজার হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। এ অবস্থায় চিন্তিত অভিভাবকসহ এলাকাবাসী। কে মঙ্গলহাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র পরশ ভূঁইয়া জানায়, ভাঙ্গা দেওয়াল ও ছাদের নিচে ক্লাস করতে তাদের ভয় হয়। হঠাৎ করে মেঘ বা বাতাস শুরু হলে শ্রেণীকক্ষ থেকে বেরিয়ে যায় তারা। অনেকে বাড়ি চলে যায়। কে মঙ্গলহাটার প্রধান শিক্ষক তছলিম হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে পাঠদান চলছে। মাঝে-মধ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গায়ে পলেস্তরা খসে পড়ে আহতের ঘটনা ঘটছে।
×