ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নড়বড়ে যান, অনভিজ্ঞ চালক

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

নড়বড়ে যান, অনভিজ্ঞ চালক

রাজধানীসহ সারাদেশেই ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় মার্কা পরিবহনে সয়লাব। মহাসড়কের প্রায় অধিকাংশ যানবাহনই জোড়াতালি দেয়া। গাড়ির বসার সিট থেকে শুরু করে দরজা-জানালা যা আছে সব কিছুই নড়বড়ে। ১৫ থেকে ২০ বছরের পুরনো গাড়ি রং করে অনায়াসেই মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এক কথায় গাড়ির অবস্থা হলো বাহিরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট। বাস-মিনিবাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানসহ সব গাড়ির একই অবস্থা। ফিটনেস সার্টিফিকেট ও রুট পারমিট ছাড়াই কোন প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করেই অনায়াসে দিব্বি চলছে এ সমস্ত গাড়ি। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রয়োজনের তাগিদে যাত্রীদের চড়তে হচ্ছে এ সমস্ত যানবাহনে। তথ্যমতে, রাজধানীতে ৯২টি কোম্পানির প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাস চলছে। যার অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন। এর মধ্যে ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের অবস্থা সব চেয়ে শোচনীয়। এই মহাসড়কে বলাকা, তুরাগ, ছালছালবিল, অনাবিল ও সুপ্রভাতসহ ১১টি কোম্পানির প্রায় ১২ শতাধিক বাস-মিনিবাস চলাচল করছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলোÑ এদের মধ্যে মাত্র ৪৭টি গাড়ির রুট পারমিট, ফিটনেসসহ অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক আছে। তাহলে প্রশ্ন হলো বাকি গাড়িগুলো কিভাবে চলছে? এক্ষেত্রে ট্রাফিক বিভাগের প্রতি আঙ্গুল উঠবে এটাই স্বাভাবিক। গাড়ির সমস্যার পাশাপাশি আরও একটি বড় সমস্যা হলো কম বয়সের প্রশিক্ষণহীন অনভিজ্ঞ চালক। এছাড়া রাস্তা পারাপারের সময় যে কোন মুহূর্তেই ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। এক নিমিষেই নিভে যেতে পারে একটি সুন্দর হাসি-খুশি পরিবারের আশা ভরসা এমনকি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির জীবন প্রদীপ। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় হারাতে হচ্ছে তরতাজা নিষ্পাপ প্রাণ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও নিসচারের দেয়া তথ্যমতে ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৯ হাজার ৯৯৫টি। এতে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এছাড়াও আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার মানুষ। চলতি বছরের আগস্টের ৭ তারিখের একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার কথা আজও ভুলতে পারেনি গাজীপুরের ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। রিমি, খাদিজা ও ফারহানা ওই কলেজের একাদশ শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী ছিল। ঘটনার দিন কলেজ শেষ করে একটি লেগুনায় করে বাড়ি ফিরছিল তারা। কিন্তু কে জানত চালক এতটায় অনভিজ্ঞ। চালকের ভুলের কারণে ঢাকাগামী একটি কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে লেগে লেগুনাটি ধুমড়ে-মুচড়ে এক হয়ে যায়। আর ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় মেধাবী ওই ৩ শিক্ষার্থী যারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। সমগ্র গাজীপুরজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। সন্তানহারা ওই পরিবারকে কে সান্ত¡না দেবে? কি পেলে তারা শান্ত হবে? এর কোন জবাব কেউ কি দিতে পারবে? কাজেই আমরা চাই না কোন মেধাবীমুখ এভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় অকালেই আমাদের ছেড়ে চলে যাক। তাই দেশে যত ধরনের যানবাহন রয়েছে সমস্ত গাড়ির যেন ফিটনেস সার্টিফিকেট, রুট পারমিটসহ সব ধরনের বৈধ কাগজপত্র থাকে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও শিক্ষিত চালকদের দ্বারাই মহাসড়কে গাড়ি চলুক এটাই সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন। শ্রীপুর, গাজীপুর থেকে
×