ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

সড়ক দুর্ঘটনা

সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বোধকরি বিশ্বে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অপ্রতিরোধ সম্পর্কিত নানা কর্মসূচী পালিত হয় । পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১২ বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে সাড়ে ৫১ হাজার। এতে নিহতের সংখ্যা ৫৭ হাজার ২২৬ জন, আহত হয়েছেন ৯৩ হাজার ৫০৬ জন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সড়ক দুর্ঘটনার জন্য প্রধানত সাতটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। কারণ গুলো হচ্ছে- বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, ওভারলোডিং-ওভারটেকিং, চালকদের বিরামহীন গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন অনুসরণ না করা, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, অযান্ত্রিক- অনুমোদনহীন যানবাহন চলাচল, সর্বোপরি ঝুঁকিপূর্ণ ও বাঁকবহুল সড়ক যোগাযোগ। অবশ্য আশার কথা হলো, বছর ওয়ারিভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনার হার কমে আসছে। মহাসড়কগুলো চার লেনে উন্নীত হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ক্রমশ। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো নিয়ন্ত্রণ, মাদকাসক্ত চালক নিয়োগ বন্ধ ও লাইসেন্স বাতিল, মোবাইলকোর্টের কার্যক্রম বৃদ্ধি, জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি হাইওয়ে পেট্রোল পুলিশের নিয়মিত নজরদারি বাড়ানোর সুপারিশও রয়েছে। জেল-জরিমানার বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। এই প্রথম সড়ক পরিবহন আইনে যানবাহন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান রাখা হয়েছে ন্যূনতম ৮ম শ্রেণী এবং সহকারীর যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণী পাস। পেশাদার চালকের ক্ষেত্রে বয়সও বেঁধে দেয়া হয়েছে ২১ বছর। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রণীত এই আইনে তিন রকম শাস্তি দেয়া যাবে দ-বিধির অধীনে। নরহত্যা (উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে) হলে ৩০২ ধারা প্রযোজ্য হবে। যাতে শাস্তি মৃত্যুদ-। আর খুন নয় এমন ঘটনায় ৩০৪ ধারা অনুযায়ী সাজা দেয়া যাবে যাবজ্জীবন। আর শুধু সড়ক দুর্ঘটনার জন্য হলো ৩০৪ (খ) এর ধারা মতে তিন বছরের কারাদ-। এর ফলে শেষ পর্যন্ত যানবাহন মালিক ও চালকদের স্বার্থই সংরক্ষিত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে কেবল চালক দায়ী নয়। বরং ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, ভুল সিগন্যাল, মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন, অসতর্ক যাত্রী ও পথচারী, সড়কের পাশে হাটাবাজার, সড়কের যথেচ্ছ ব্যবহারও কম দায়ী নয়। প্রশিক্ষিত-স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন চালকেরও অভাব প্রকট। বিআরটিএসহ ট্রাফিক বিভাগের অব্যবস্থা, ঘুষ-দুর্নীতিও এর জন্য দায়ী অনেকাংশে। সভ্য ও উন্নত হতে হলে এসব বাধাই আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে পর্যায়ক্রমে। তবু সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যেহেতু চালককে প্রাথমিকভাবে দায়ী বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, সেহেতু শাস্তির বিধান একটু বেশি রাখা হলে সে সতর্ক ও সাবধান হতে পারে। আর সতর্ক ও সাবধান হলে সড়ক দুর্ঘটনার হার এমনিতেই কমে আসবে। দেশে বর্তমানে যানবাহনের তুলনায় দক্ষ চালকের অভাব প্রকট। ৮ম শ্রেণী পাস ড্রাইভার এবং ৫ম শ্রেণী পাস হেলপার পাওয়া তো আরও দুঃসাধ্য। এমনকি রাজধানীতেও অনেক কিশোর বয়সী চালকের সন্ধান মেলে। তাদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে নৈশ বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি তৈরি করতে হবে পেশাদার দক্ষ চালক। তাদের নিজেদের মানবিকবোধসম্পন্ন হতে হবে। তাহলেই তৈরি হবে দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন চালক। কমবে সড়ক দুর্ঘটনা।
×