ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

‘আকমলসহ রাজাকাররা ৭০ জনকে গুলি মেরে হত্যা করে’

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

‘আকমলসহ রাজাকাররা ৭০ জনকে গুলি মেরে হত্যা করে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলভীবাজার রাজনগর উপজেলার আকমল আলী তালুকদারসহ চার রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম এই চার সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। পঞ্চম সাক্ষী গৌর মালাকার জবানবন্দীতে বলেন, আকমল আলীসহ অন্যান্য রাজাকার আমার বাবা, কাকা, পিসা, পিসাতো ভাইসহ ৭০ জন পিটিয়ে ও গুলি করেও হত্যা করে। তারা আমার মা ও বোনকে বেইজ্জতি করেছিল। রাজকাররা চলে যাবার সময় আমাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। অন্য তিন সাক্ষী হলো, গীতারানী শব্দকর, মায়ারাণী শব্দকর (১) ও মায়ারাণী শব্দকর (২)। চার সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাদের জেরা করেছেন। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য আজ বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছে। প্রসিকিউশনপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি, প্রসিকিউটর শেখ মুসফেক কবির ও প্রসিকিউটর আবুল কালাম। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আবদুস সোবহান তরফদার, এ্যাডভোকেট আবুল হাসান। পঞ্চম সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম গৌর মালাকার। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। আমার ঠিকানাÑগ্রাম পাঁচগাঁও, থানা-রাজনগর, জেলা-মৌলভীবাজার। একাত্তরে আমি আমাদের গ্রামের বাড়িতে থাকতাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩ বৈশাখ শুক্রবার খুব সকালে পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকার আমাদের গ্রামে এসে গ্রাম ঘেরাও করে। হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ পেয়ে আমরা ঘুম থেকে জেগে উঠি। এরপর আসামি মোঃ আকমল আলী তালুকদার ও তার সঙ্গীয় রাজাকার আসামি লাল মিয়া, মোঃ আনিছ মিয়া, আবদুল মোসাব্বির মিয়া ও পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। তারা বাড়ি থেকে আমার বাবা গোপেশ মালাকার, কাকা নরি মালাকার, পিসা উমেশ মালাকার ও পিসাতো ভাই ইরেশ মালাকারকে ধরে আমাদের বাড়ির নিকট হীরণ বাবুর পুকুরের পাড়ে নিয়ে যায়। যখন তাদের ধরে নিয়ে যায় তখন আমি, আমার মা, আমার ভাই ও বোন বাড়িতেই ছিলাম। আমার বাবা, কাকা পিসা ও পিসাতো ভাইদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমি বাড়ির সন্নিকটে জমিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখি আমাদের বাড়িতে আরও লোকজন ঢুকে মালামাল লুটপাট করে। আমি এখান থেকে আরও দেখতে পাই, ধরে নিয়ে যাওয়া আমার বাবা, কাকাসহ অন্যদের হাত-পা বেঁধে পুকুরে ফেলে দেয়। আসামি আকমল আলী, লাল মেম্বার, মোসাব্বিরসহ তাদের সঙ্গীরা লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে ও গুলি করে। আসামিরা গ্রাম থেকে তাদের আরও ৬০ থেকে ৭০ জন লোক ধরে নিয়ে আসে। সেখানে গুলি করে ও পিটিয়ে মেরে ফেলে। আসামিরা আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছিল। তারা আমার মা ও আমার বোনকে বেইজ্জতি করেছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুকুরে অনেক লাশ ভাসতে দেখি। তার মধ্যে আমার বাবার লাশও ছিল।
×