ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণমানুষের নেতা শেরেবাংলার জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

গণমানুষের নেতা শেরেবাংলার জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্রিটিশ ভারতের গণমানুষের নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের ১৪৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ আলোচনাসভা হয় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে। জাদুঘর ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংবাদিক সাইফুল আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এই দেশের মানুষের হৃদয়ের একটি নাম। অবিভক্ত ভারতে মুসলমানরা শিক্ষা-দীক্ষায় অনেক পিছিয়ে যায়। সেই মুহূর্তে মুসলমানদের জন্য তিনি শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করেন। তৎকালীর অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ১৯৬১ সালে তিনি যখন মৃত্যুপথযাত্রী তখন আমরা তাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, আমি ওকে দোয়া করি ওর মাধ্যমে এই দেশ একদিন স্বাধীন হবে। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তার ধারণা ছিল এতই পরিষ্কার। শেরেবাংলা এই দেশের কৃষক, গরিব মানুষের হৃদয়ে এখনও তার কর্মের মাধ্যমে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন। সাংবাদিক সাইফুল আলম বলেন, আজ এমনই একটা মানুষকে স্মরণ করা হচ্ছে যিনি আসলেই আমাদের গর্বের ও অহংকারের। এত বড় প্রতিভা নিয়ে একজন বাঙালী জন্মগ্রহণ করা আমি মনে করি একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার। এক জীবনের একজন মানুষের পক্ষে যা করা সম্ভব নয়, তিনি তা করে দেখিয়েছেন। এবং গণমানুষের নেতায় পরিণত হয়েছেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার পৌরসভার চেয়ারম্যান, ১৯৩৭ থেকে ৪৩ সাল পর্যন্ত অভিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, ১৯৫৫ সালে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ১৯৫৬ থেকে ৫৮ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর ছিলেন। শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা ও আইন পেশায় ছিলেন শীর্ষস্থানীয়। এ দেশের গণমানুষের জন্য তিনি যা করেছেন তা ভুলবার নয়। আমরা জানি যে তিনি একই সঙ্গে পাকিস্তানের মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। তিনি অনেক রাজনৈতকি দলের সঙ্গে একাত্ব হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। আদর্শিক ও কৌশলগত কারণে নানা সময়ে তিনি প্লাটফর্ম পরিবর্তন করেছেন। তিনি ১৯৪২ সালে মুসলিম লীগ থেকে যেভাবে দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরোধিতা করে বেরিয়ে যাওয়ার প্রয়াস নিয়েছেন সেখানেও তিনি অনেক হোঁচট খেয়েছেন। এসব মিলে আসলেই তার জীবন বর্ণাঢ্য ও সফল জীবন। প্রজাস্বত্ত্ব আইন, কৃষকদের জমিদারদের হাত থেকে রক্ষা করা ও দশ বছরের জন্য সব খাজনা বৃদ্ধি তার হাত দিয়েই বন্ধ হয়েছে। তাকে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্মরণ করব এ কারণেই। এ সময় আমরা দেখছি খুব সহজে সরলীকরণ হচ্ছে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি। সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক কৃষকদের জন্য একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গঠন করেছিলেন। তিনি যুক্তফ্রন্টে যোগ দিয়ে অসাধারণ দুরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। জাতীয় জাদুঘরের সচিব মোঃ শওকত হোসেনের স্বাগত বক্তব্যের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উদ্যাপন ॥ অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা হয় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে। বাংলা একাডেমি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ ও মফিদুল হক। ‘অক্টোবর বিপ্লব : ফিরে দেখা ও সামনে তাকানো’ শীর্ষক অধ্যাপক যতীন সরকার লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন একাডেমির কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ তানভীর আহমেদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অক্টোবর বিপ্লব কোন স্থানীয় বিপ্লব নয় বরং একটি আন্তর্জাতিক সমাজবিপ্লব যা মানবসভ্যতার ইতিহাসকে নতুন ধারায় প্রবাহিত করেছে। পুঁজিবাদীরা সোভিয়েত পতনকে সমাজতন্ত্রের পতন হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করলেও আজ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সমাজতন্ত্রের প্রতি মানুষের ব্যাপক আগ্রহ প্রমাণ করে সোভিয়েত পতন একটি রাষ্ট্রকাঠামোর পতন ছিল মাত্র। তিনি বলেন, অক্টোবর বিপ্লব মানুষে-মানুষে অধিকার ও সুযোগের সাম্যপ্রতিষ্ঠা করেছিল যা আজ পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার দাপটে হুমকির সম্মুখীন। বাংলাদেশেও আমরা শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষসহ নারীর উপর যে ক্রমাগত নিবর্তন প্রত্যক্ষ করছি, পরিবেশের যে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছি তা পুঁজিবাদী সমাজ ও বিশ্বব্যবস্থার চরম রূপকে প্রকাশ করছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে অক্টোবর বিপ্লবের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে। মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক যতীন সরকার বলেন, বিশ শতকের শেষ দশকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনাকাক্সিক্ষত বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে একুশ শতকে পদার্পণ করেছে যে বিশ্ব তো অচিন্তিতপূর্ব সব সঙ্কটে নিমজ্জমান। এ রকমের বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃত্বই আজকের সব বিশ্বসঙ্কটের মূল উৎস। নির্বিচার ভোগবাদ এবং ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদ ওই একই উৎস থেকে উপজাত। ভোগবাদ আর মৌলবাদÑ দুই-ই মানুষকে কূপম-ুক বানিয়ে রাখে, আবার সন্ত্রাস-নৈরাজ্যেও ইন্ধন যোগায়। ধনতন্ত্রী সাম্রাজ্যবাদের হাতেই সৃষ্ট ও লালিত-পালিত হয়েছে ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদ। একুশ শতকের শুরুতে এসে সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদের যে আপাত-দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে, তাতে এই দুয়ের কোন পক্ষকেই সমর্থন করার কোন যৌক্তিকতা নেই। দুই-ই মানবসভ্যতার শত্রু। দুই-ই সুস্থ ও সুষ্ঠু মানববিকাশের পথের প্রতিবন্ধক। দুইয়ের বিরুদ্ধেই আমাদের আজকের লড়াই। অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে সে লড়াইয়ের পথ ও পদ্ধতির সন্ধান করতে হবে। আলোচকদ্বয় বলেন, অক্টোবর বিপ্লব শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বিশ্বব্যাপী পরিবর্তন এনেছে। তাই এই বিপ্লবের শতবর্ষ উদ্যাপন প্রকৃতপক্ষে মানুষের অগ্রগতির এক ধাপকেই স্মরণ করার প্রয়াস। স্বাগত ভাষণে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, মানবসভ্যতার ইতিহাসে অক্টোবর বিপ্লবের তাৎপর্য অসামান্য। এই বিপ্লব পৃথিবীতে নতুন সামাজিক অগ্রগতি আনয়ন করেছিল, মানুষের মূল্যবোধে ঘটিয়েছিল ইতিবাচক রূপান্তর। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, মানবসভ্যতার ইতিহাসে অক্টোবর বিপ্লব এক বড় ঘটনা। নানা কারণে রুশ দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব স্থায়ী হয়নি কিন্তু এই বিপ্লব ভ্রাতৃত্ব, সাম্য ও ন্যায়পর সমাজ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবসময় অন্তহীন প্রেরণা হয়ে কাজ করে যাবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবি রুবী রহমান, কাজী রোজী, কথাসাহিত্যিক সুব্রত বড়ুয়া, আনোয়ারা সৈয়দ হক, অধ্যাপক আহমদ কবির, গবেষক ড. ইসরাইল খান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, মানজার চৌধুরী সুইট, মযহারুল ইসলাম বাবলা প্রমুখ।
×