ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রাথমিক পর্যায়ে গুলশান ও কাওরান বাজারের আন্ডারগ্রাউন্ডে নির্মাণের সুপারিশ ॥ সহায়তায় রাজি জাইকা

বিদ্যুতের সাবস্টেশন এবার হচ্ছে মাটির নিচে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

বিদ্যুতের সাবস্টেশন এবার হচ্ছে মাটির নিচে

আনোয়ার রোজেন ॥ রাজধানীতে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু নতুন করে বিদ্যুত উপকেন্দ্র (সাবস্টেশন) নির্মাণের মতো পর্যাপ্ত খালি জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মাটির নিচে (আন্ডারগ্রাউন্ড) বিদ্যুতের উপকেন্দ্র নির্মাণের কথা ভাবছে সরকার। যদিও এ ধরনের উপকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় অনেক বেশি। তবুও ঢাকার সার্বিক পরিবেশ ও ভবিষ্যত চাহিদা বিবেচনায় উন্নত বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড সাবস্টেশন সবচেয়ে ভাল বিকল্প বলে মনে করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে নির্মাণ করা হবে দুটি সাবস্টেশন। পর্যায়ক্রমে ঢাকা শহরের অন্য বিদ্যুত উপকেন্দ্রগুলোও মাটির নিচে স্থানান্তরের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর একনেক সভায় ২০ হাজার ৫০১ কোটি ৫২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘ডিপিডিসি’র আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ঢাকায় উপকেন্দ্রগুলো আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, উন্নত দেশের শহরগুলোতে বিদ্যুতের খুঁটি কিংবা টানা ঝুলন্ত তার চোখে পড়ে না। ওরা অনেক আগেই আন্ডারগ্রাউন্ড প্রযুক্তিতে চলে গেছে। ঢাকা শহর বিভিন্ন ধরনের তারের জঞ্জালের শহরে পরিণত হয়েছে, যা ক্ষেত্রবিশেষে ঝুঁকিপূর্ণও বটে। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে ঢাকাকে আরও উন্নত ও দৃষ্টিনন্দন শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এর আগে জমির দুষ্প্রাপ্যতা বিবেচনায় সরকারের অনুমতি নিয়ে জাইকা ঢাকা শহরে আন্ডারগ্রাউন্ড সাবস্টেশন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিরূপণে সম্ভাব্যতা যাচাই করে। সমীক্ষা প্রতিবেদনটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়, দু’টি আন্ডারগ্রাউন্ড সাবস্টেশন নির্মাণ করতে হবে। ছয়টি সম্ভাব্য জায়গার মধ্যে ডেসকোর (ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি) জন্য গুলশানে এবং ডিপিডিসির (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি) জন্য কাওরানবাজারকে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। বিদ্যুত বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), ডেসকো, ডিপিডিসি ও জাপানভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী জাইকার মধ্যে একটি যৌথ সভা হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। ওই সভার আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাইকা ওই দু’টি সাবস্টেশন নির্মাণে সহায়তা করতে রাজি হয়। পরে গত ১৭ মে জাপান সরকারের ৩৮তম ইয়েন লোন প্যাকেজের খসড়া বিনিময় নোটের ওপর ইআরডিতে সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্প জাইকা থেকে ঋণ নেয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত বলে ইআরডি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শহরাঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকার মতো রাজধানী শহরে জমির স্বল্পতার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে প্রথাগত উন্মুক্ত বিদ্যুত উপকেন্দ্র এয়ার ইন্স্যুলেটেড সুইচগিয়ার বা এআইএস নির্মাণ যৌক্তিক নয়। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে আমাদেরকে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। তবে সেই সঙ্গে নতুন প্রযুক্তির ব্যয়ভার বহনের সামর্থ্য আছে কি না তাও বিবেচনায় নিতে হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে গ্যাস ইন্স্যুলেটেড সুইচগিয়ার বা জিআইটি সমৃদ্ধ আন্ডারগ্রাউন্ড ধরনের উপকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব এটিই প্রথম। ভূগর্ভের পূর্ত কাজ বিশেষায়িত বিধায় নির্মাণ ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি হবে। ডিপিডিসির তরফে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বলা হয়, তাইওয়ান ও চীনে নির্মিত বেশির ভাগ বিদু্যুত উপকেন্দ্র আন্ডারগ্রাউন্ড টাইপ। তাই ভূমির বহুবিধ ব্যবহার ও বাণিজ্যিকভাবে প্রকল্প থেকে আয় বাড়ানোর একটা পরিকল্পনা থাকতে হবে। ওই সব দেশের আন্ডারগ্রাউন্ড সাবস্টেশনের ওপর বহুতল বিশিষ্ট সুপারস্ট্রাকচার নির্মাণের সংস্থান রাখা আছে। আমাদের এখানেও এ ধরনের সুপারস্ট্রাকচারে পরিকল্পনা থাকতে হবে, অন্যথায় এসব প্রকল্প কখনই লাভজনক হবে না। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের মধ্যে সারাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুত চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে সরকার ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২০৩০ সালে বিদ্যুতের এ উৎপাদন ৪০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে। বিদ্যুত উৎপাদনের এ লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুত সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নেও সরকার মনোযোগী। এর অংশ হিসেবে আন্ডারগ্রাউন্ড সাবস্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×