ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইরাক-সিরিয়ায় পরাজয়ের পর সব জঙ্গী ফিরছে নিজ নিজ দেশে

আইএস জঙ্গী যাতে দেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য আগাম সতর্কতা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

আইএস জঙ্গী যাতে দেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য আগাম সতর্কতা

শংকর কুমার দে ॥ ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস) চূড়ান্ত পরাজয়ের মুখে পলায়নপর জঙ্গীরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জঙ্গীরা যাতে নিজ দেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য আগাম সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ সীমান্ত এলাকার সীমান্তরক্ষী বিজিবিকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যৌথ বাহিনীর অভিযানের মুখে কোণ্ঠাসা হয়ে পড়া আইএস জঙ্গীরা নিজ নিজ দেশে ফিরে আসতে পারে এমন ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে ঢুকে পড়া আইএস জঙ্গীরা যাতে সীমান্ত পেরিয়ে চোরাইপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে সেই বিষয়েও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ইরাক ও সিরিয়ায় কোণঠাসা হয়ে চূড়ান্ত পরাজয়ের মুখে রয়েছে জঙ্গীগোষ্ঠী আইএস। যে কোনদিন ঘোষণা আসতে পারে যে, ইরাক ও সিরিয়ায় অবস্থিত আইএসের মূল ঘাঁটিগুলোর পতন ঘটতে যাচ্ছে, যা খুব একটা বেশি দেরি নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যে আইএসের প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি জীবিত নাকি মৃত কিংবা জীবিত থাকলে কোথায় আছেন অথবা মারা গেছে যে দাবি করা হয়েছে তা কখন কোথায় সেই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে ইরাক ও সিরিয়ায় মোতায়েন করা বহুজাতিক বাহিনীর গোয়েন্দরা। আইএস প্রধানের মারা যাওয়ার খবর প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু আইএস মুখপাত্ররা জীবিত বলেও দাবি করে ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতার বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন এমন ঢাকার গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, সর্বোচ্চ দু’এক মাসের মধ্যেই আইএস ঘাঁটির পতন ঘটিয়ে আইএস নিমূল করার বিষয়টি এখন প্রায় চূড়ান্ত। চলতি বছরের শুরুতেই ইরাকে পরাজয় স্বীকার করে বিদেশী যোদ্ধাদের হয় আত্মঘাতী হওয়া নয়তো পালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ইসলামিক স্টেটস (আইএস) জঙ্গী সংগঠনের প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি। এমন পরিস্থিতিতে আইএসের হয়ে যুদ্ধ করা বাংলাদেশের জঙ্গীদের দেশে ফেরার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের হয়ে বাংলাদেশের কেউ যুদ্ধ করছেন কিনা বা যুদ্ধ করতে থাকলে কতজন যুদ্ধ করছেন সেই সম্পর্কে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। শুধু মাঝে মধ্যে দু’একজনের আইএস পোশাক পরে হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে ছবি ভার্চুয়াল বা আইএসের দাবিড় ম্যাগাজিন, আমাক নিউজের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাইট ইন্টেলিজেন্সের পোস্ট করা ছবির খবর ছাড়া তেমন কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। এ পর্যন্ত জঙ্গী বিরোধী অভিযানে যারা নিহত, আহত, গ্রেফতার হয়েছেন তারা সবাই হোমগ্রোন জঙ্গী বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি। ২০১৪ সালে ইরাকের মসুল থেকেই কথিত খিলাফতের ঘোষণা দিয়েছিলেন আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদি। তিন বছরের ব্যবধানে সেই শহর এখন হাত ছাড়া হওয়ার ঘটনাটি এখন সময়ের বিষয় মাত্র। ইরাকের মসুল এখন প্রায় আইএস মুক্ত। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ইরাকে পরাজয় মেনে নিয়ে বিদেশী জঙ্গীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অথবা আত্মঘাতী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বাগদাদি। অন্যদিকে সিরিয়াতেও চরম বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে আইএস। সিরিয়ায় আইএসের কথিত রাজধানী রাকা শহরের পতনও আসন্ন প্রায়। বাগদাদির এই নির্দেশের পর ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের পক্ষে লড়াই করা বাংলাদেশী যদি কোন জঙ্গী থেকে থাকে তারা দেশে ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। ইসলামিক স্টেটস (আইএস জঙ্গীরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে ঢুকে নাশকতা চালাতে পারে এমন খবর পেয়ে ভারতের বিভিন্ন বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইতোমধ্যেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার সীমান্ত ঘেঁষা বাংলাদেশে যাতে চোরাইপথে যাতে কোন আইএস জঙ্গী কিংবা অন্যান্য জঙ্গী প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। আইএস জঙ্গীরা বাংলাদেশে একবার ঢুকে পড়তে পারলে তাদের অনুসারীদের সংগঠিত করে নাশকতা চালানোর চেষ্টা করতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ইসলামিক স্টেটস (আইএস) যোদ্ধারা যেসব দেশের যোদ্ধা আছে তারা সেসব দেশে ফিরে যায় তাহলে তাদের মতাদর্শ, হিংসা, নাশকতা, আত্মঘাতীর ঘটনা ছড়াবে, এটাই স্বাভাবিক। আইএস যোদ্ধাদের ঠেকাতে হলে সতর্কতা জারি আগে থেকেই করা হচ্ছে, নজরদারির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইরাক-সিরিয়ায় বাংলাদেশের ঠিক কতজন আইএসে যোগ দিয়েছে কিংবা আদৌ যোগ দিয়েছে কিনা সেই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সঠিক তথ্য নেই। তবে বাইরে থেকে আইএস জঙ্গীরা যাতে দেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে কোন আইএস নেই এটা নিশ্চিত। তবে বাংলাদেশ থেকে যারা মিসিং অর্থাৎ নিখোঁজ আছে তারা আইএস যোদ্ধা কিনা তাও পরিষ্কার নয়। তবে যারা মিসিং আছে তাদের সব তথ্য সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দরে দেয়া আছে। এসব লোক যদি দেশে আসতে চায় ইমিগ্রেশনে কোনরকম সন্দেহ হলে তাদের আটক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকার পাশাপাশি নজরদারি করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাকে। দেশের হোমগ্রোন জঙ্গী যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গী বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
×