ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতির মামলায় খালেদার উপদেষ্টা মসিউরের ১০ বছরের কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

দুর্নীতির মামলায় খালেদার উপদেষ্টা মসিউরের ১০ বছরের কারাদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ও নিজস্ব সংবাদদাতা ঝিনাইদহ থেকে ॥ ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মসিউর রহমানের ১০ বছরের কারাদ- ও সম্পত্তি বাজেয়াফতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বুধবার যশোরের স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক নিতাই চন্দ্র সাহা এ আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার দুটি ধারায় এ আদেশ দেয়া হয়। এদিকে রায় ঘোষণার পর ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করেছে। যশোর প্রেসক্লাবে বুধবার দুপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এই হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ। অথচ রাতে এ খবর লেখার সময় পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে হরতালের পক্ষে কোন প্রচার লক্ষ্য করা যায়নি। আদালত সূত্র জানায়, ২৬ (২) ধারায় তথ্য গোপনের অভিযোগ তিন বছরের কারাদ- ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা, ২৭ (১) ধারায় ১০ বছরের কারাদ-, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদ-। এছাড়াও ১০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩০ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াফেতর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাবেক এমপি মসিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত সর্বোচ্চ শান্তির রায় দিয়েছেন। মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন প্রায় ১০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩০ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার তৎকালীন সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন মৃধা মামলা দায়ের করেন। ২০০৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটি তদন্ত শেষে মোঃ মসিউর রহমানকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখির করেন তদন্ত কর্মকর্তা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে যশোরের উপ-পরিচালক মোঃ নাসির উদ্দিন- যার নম্বর ৩৮৮। ২০০৯ সালের শেষের দিকে ঝিনাইদহ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত মামলাটি আমলে নেন। আমলযোগ্য মামলাটির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে প্রসিডিং কোয়াসমেন্টের জন্য আবেদন করেন মোঃ মসিউর রহমান। এরপর ২০১০ সালের ৬ জুন উচ্চ আদালত মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত করেন। যার নম্বর ক্রিমিনাল মিসকেস নম্বর ১৬৬/৭১/২০১০। চার বছর পর ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল উচ্চ আদালত আসামির মোকদ্দমা খারিজ করে স্থগিতাদেশ বাতিল করেন। একই সঙ্গে স্পেশাল জজ আদালত যশোরকে মামলার কার্যক্রম আইন অনুযায়ী পরিচালনার নির্দেশ দেন। এরপর আসামি পক্ষের বিভিন্ন সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে লিভ টু আপীল (যারা নম্বর ৩৩২/১৪) দাখিল করেন আসামি। পরবর্তীতে লিভ টু আপীল খারিজ হয়ে গেলে পুনরায় সুপ্রীমকোর্টে রিভিউ পিটিশন ৭৪/১৫ দাখিল করেন। রিভিউ পিটিশন খারিজ হলে বিচার কাজ শুরু হয়। পুনরায় আয়কর আইনের বিরুদ্ধে ৪৩৩৭/১৬ রিট পিটিশন দাখিল করেছেন উচ্চ আদালতে। সেখানে এই মামলার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যশোর স্পেশাল জজ আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বুধবার রায় ঘোষণা করা হলো। অপরদিকে, ঝিনাইদহ বিএনপি এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। একইসঙ্গে রায়ের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঝিনাইদহে হরতাল আহ্বান করেছে। পাশাপাশি উচ্চ আদালতে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন নেতৃবৃন্দ। যশোর প্রেসক্লাবে তাৎক্ষণিক এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন। এদিকে মামলার রায় ঘোষণার পর ঝিনাইদহ শহরে বিএনপির কোন প্রচার বা কোন মিছিল মিটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি। শহরের কেপিবসু সড়কের জেলা বিএনপি কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল। সেখানে কোন নেতাকর্মীকেও পাওয়া যায়নি। তবে শহরের কিছু এলাকায় এ রায়ের প্রতিবাদে ও হরতালের সমর্থনে লিফলেট পাওয়া যায়। অন্যদিকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পায়নি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করা হবে। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহে অর্ধদিবস হরতাল দেয়া হয়েছে।
×