ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাসিমুখ রোহিঙ্গা শিশুদের

কচিকাঁচা মনের ক্ষত সারাতে ড্রামা থেরাপি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

কচিকাঁচা মনের ক্ষত সারাতে ড্রামা থেরাপি

জনকণ্ঠ ফিচার নিজ দেশের মানুষকে নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে মিয়ানমার। সরকারী সিদ্ধান্তে চলেছে গণহত্যা। রোহিঙ্গা জাতি গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে মাঠে নেমেছিল সেনাবাহিনী। একেবারে হেসে খেলে মানুষ খুন করেছে তারা। বাড়ি ঘরে আগুন দিয়েছে। ধর্ষণ করেছে নারীদের। এ অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ মানুষ এসে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। শরণার্থীদের একটি বড় অংশই শিশু-কিশোর। শিশু-কিশোর বলে রেহাই পায়নি তারা। মরতে মরতে বেঁচে এসেছে। শরীরে ক্ষত। তার চেয়েও বড় ক্ষত কচিকাঁচা মনে। তাদের অনেকেই নিজের চোখের সামনে পিতাকে খুন হতে দেখেছে। বর্বর নির্যাতনের শিকার হতে দেখেছে মাকে। আরও কত রকমের বীভৎসতা! সবই ওরা দেখেছে। চোখে মুখে এখন আতঙ্ক তাদের। মুখে হাসি নেই। এ অবস্থায় শিশু-কিশোরদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সম্প্রতি চমৎকার উদ্যোগ গ্রহণ করে নাট্যকর্মীদের একটি দল। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য ড্রামা থেরাপির ব্যবস্থা করেন তারা। ড্রামা টেকনিক কাজে লাগিয়ে চুপসে যাওয়া শিশুদের মনের ভার লাঘব করার চেষ্টা করেন। শরণার্থী শিবিরে কয়েকদিন ধরে চলা ড্রামা থেরাপি হাসি ফিরিয়ে দেয় বাচ্চাদের মুখে। বিনোদনের মাধ্যমে শিশুদের মানসিক শক্তি যোগানোর এই প্রয়াস সত্যি প্রশংসাযোগ্য। উদ্যোগটি গ্রহণ করেছিল শিল্পকলা একাডেমি ও পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন। ড্রামা থেরাপির প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় গত ৭ ও ৮ অক্টোবর। পালং বালুখালী, ঘুমধুম, পালংখালী, থ্যাংখালী, টেকনাফের উনছিপ্রাংসহ অন্যান্য এলাকায় ঘুরে বেড়ান নাট্যকার্মীরা। ১২ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত কার্যক্রম চলে টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। শিশুদের সামনে, শিশুদের নিয়ে উপস্থাপন করা হয় ড্রামা থেরাপি। মুখোশ নির্মাণ, থিয়েটার গেম, সার্কাস প্রদর্শন, পারফরমেন্স আর্টস প্রভৃতির আয়োজন মুগ্ধ করে রাখে শিশুদের। তাদের সামনে কাগজ কেটে বিভিন্ন ধরনের মুখোশ তৈরি করা হয়। সেগুলো পরিয়ে দেয়া হয় শিশুদের মুখে। মুকুট বানিয়ে মাথায় পরিয়ে দেয়া হয়। তাতেই মহাআনন্দের উপলক্ষ পেয়ে যায় শিশুরা। শুরু হয়ে যায় হৈ হুল্লোড়। নাট্য কর্মীরা ক্লাউন সাজেন। চার্লি চ্যাপলিন হন। তার ভঙ্গিগুলো নকল করে দেখান। সব দেখে শিশুদের আনন্দ আর ধরে না। ছিল আকর্ষণীয় এক্রোবেটিক শো। উদ্যোগটি সফল করতে ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন শিল্পী সুজন মাহাবুর, বিপ্লব, হাবিব, বিপুল, হিমু, শিশিরসহ পিপলস থিয়েটারের একঝাঁক কর্মী। কক্সবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমি এগিয়ে এসেছিল। তবে মূল পরিকল্পনাটি গ্রহণ করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এত এত মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের প্রতিদিনের খাবারের ব্যবস্থা করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সবাই চেষ্টা করছে। কিন্তু শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটি নিয়ে সেভাবে ভাবা হচ্ছিল না। আমরা তাই ড্রামা থেরাপির উদ্যোগ নেই। কার্যক্রমটি ভবিষ্যতেও চালানোর উচ্ছে আছে বলে জানান পিপল থিয়েটারের প্রধান।
×