ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা-নেপিডো আলোচনায় রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান চায় বেজিং

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

ঢাকা-নেপিডো আলোচনায় রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান চায় বেজিং

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান চায় চীন। বুধবার বিকেলে ঢাকায় চীনের বিশেষ দূত সান গোসিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকায় আসেন চীনের বিশেষ দূত গোসিয়াং। বিকেল পাঁচটায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে। বৈঠক শেষে চীনের বিশেষ দূত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সচিব জানান, চীনের বিশেষ দূত জানিয়েছেন রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে চীন ভীষণ উদ্বিগ্ন। বিপুল পরিমাণ মানুষের বাস্তুচ্যুতির ঘটনা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি মনে করে চীন। এ অবস্থায় চীন চায় বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই সঙ্কটের সমাধান করুক। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয় দেশই চীনের বন্ধু। চীন চায় দুই দেশের সঙ্গে সমান বন্ধুত্বের সম্পর্ক রেখেই সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজতে। বাংলাদেশের বক্তব্য কি জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনি চীনের বিশেষ দূতকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে রাখাইন থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু এই সঙ্কট দীর্ঘ হলে বাংলাদেশের জন্য সেটা বড় ধরনের চাপের সৃষ্টি করবে। যে কোন বিচারেই এই সঙ্কট দীর্ঘস্থায়ী হওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের নিজের দেশে নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে বলে মনে করে বাংলাদেশ। এ কারণে বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনে চীন কার্যকর ভূমিকা রাখুক। সূত্র জানায়, মূলত রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা আরও গতিশীল করতেই চীনের বিশেষ দূত ঢাকায় আসেন। তিনি পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে এটাও জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক নানা তৎপরতার চেয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় আলোচনাই কার্যকর সমাধানের পথ বলে চীন মনে করে। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের অনাগ্রহ এবং দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। উদাহরণ হিসেবে গত ২ অক্টেবর ঢাকায় মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তিন্ত সোয়ের সফর ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তী অবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়। সর্বশেষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেপিডো সফর সম্পর্কেও জানানো হয় চীনের বিশেষ দূতকে। এ সময় চীনের বিশেষ দূত জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় আলোচনা গতিশীল করতে চীন ভূমিকা রাখবে। তিনি আশা করেন দ্রুতই এ সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে যাত্রা শুরু হবে। চীনের বিশেষ দূত এর আগে এপ্রিল মাসে ঢাকা এসেছিলেন। গত ছয় মাসের মধ্যে ঢাকায় এটি তার দ্বিতীয় সফর। বুধবার বৈঠক শেষে তিনি রাতেই ঢাকা ত্যাগ করেন। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে তার মূল বৈঠক হয়। তিনি মিয়ানমার থেকে ঢাকা আসেন। চীনের বিশেষ দূত আসার পর বেজিংকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছে ঢাকা। কেননা, গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের নিয়ে গোলযোগ শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ এ বিষয়ে আলোচনার জন্য একাধিকবার মিয়ানমারকে অনুরোধ করেছে। প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের শীর্ষ নেতৃত্বকে চিঠি পর্যন্ত দিয়েছেন। কিন্তু তারা সময়ক্ষেপণ করে দায়সারাভাবে অংশগ্রহণ করে। এরপর ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন শুরু হওয়ার ছয় সপ্তাহের মধ্যে তাদের একজন ইউনিয়ন মন্ত্রী ঢাকায় আসেন শুধু আন্তর্জাতিক চাপের কারণে। এসব বিষয় বিশেষ দূতের কাছে তুলে ধরা হয়। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কট সমস্যা সমাধানে অনেক আগেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেছে। বাংলাদেশের আহ্বানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাড়াও দিয়েছে। বিশেষ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে মিয়ানমারের ওপর চীনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করে আসছে বাংলাদেশ। কেননা ঢাকা-বেজিংয়ের মধ্যে এখন উচ্চতর সম্পর্ক বিরাজ করছে। সে কারণে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চীনের সহযোগিতা নিতে চায় বাংলাদেশ। চীনের বিশেষ দূতের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে এই সহযোগিতার নতুন পথ খুলবে বলে প্রত্যাশা করছে সরকার।
×