ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাপ্টেনের নৈপুণ্যে ৭১ আরোহীর প্রাণরক্ষা

সৈয়দপুরে উড্ডয়নের পরই খুলে পড়ল বিমানের চাকা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

সৈয়দপুরে উড্ডয়নের পরই খুলে পড়ল বিমানের চাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও উড্ডয়নের পরপরই বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটের চাকা সৈয়দপুরের রানওয়েতে খুলে ছিটকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে ক্যাপ্টেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ওই ফ্লাইটটিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরী অবতরণ করতে সক্ষম হন। বুধবার সকালে ৬৬ যাত্রী সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসার সময় রানওয়েতে উড়োজাহাজটির পেছনের চাকা খুলে যায়। ফ্লাইটটিতে পাইলটসহ ৭১ জন ছিল। ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দশটা ৪৫ মিনিটে উড়োজাহাজটি ঢাকায় জরুরি অবতরণ করে বলে জানান বিমানের পরিচালক আলী আহসান বাবু। তিনি জানান, বিকেলে চাকাটি ঢাকায় এনে প্রকৌশল শাখায় জমা দেয়া হয়েছে। এটা সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়েতেই পড়ে ছিল। সেখান থেকে কুড়িয়ে আনা হয়। জানা গেছে, বেলা সাড়ে নয়টায় বাংলাদেশ বিমানের ড্যাশ ৮ উড়োজাহাজ ৬৬ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু উড্ডয়নের পরপরই উড়োজাহাজের একটি চাকা রানওয়েতে খুলে পড়ে। তবে ঢাকায় জরুরী অবতরণ করে উড়োজাহাজটি। শাহজালাল কর্তৃপক্ষ জরুরী অবতরণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর নিরাপদে সেটা অবতরণ করে। পাইলট উড়োজাহাজটি নিরাপদেই অবতরণ করাতে সক্ষম হন। কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা অনুসন্ধান শেষে বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানিয়েছেন পরিচালক আলী আহসান বাবু। এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিমানের ডেপুটি চীফ অব ফ্লাইট সেফটি ক্যাপ্টেন এনামকে প্রধান করে এ কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বিজি-৪৯৪ বুধবার সকাল ৯.৩৩ টায় সৈয়দপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়নের পর সেখানকার কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেনকে জানানো হয় যে, ফ্লাইটটি উড্ডয়নের পর একটি চাকা খুলে পড়ে গেছে। এ সংবাদ পেয়ে ফ্লাইটের অপারেটিং ক্যাপ্টেন আতিক ও ফার্স্ট অফিসার ইয়ামিন ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন। সে মোতাবেক ঢাকায় ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। নিজস্ব সংবাদদাতা, সৈয়দপুর থেকে জানান, সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড়াল দেয়ার সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বিজি-৪৯৪’র একটি চাকা খুলে পড়ে রানওয়ের উত্তরপ্রান্তের সীমানা প্রাচীরের কাছে। এ সময় বিমানটি ৩০ ফুট ওপরে উঠেছিল। চলন্ত বিমানের চাকাটি নিচে লাফিয়ে সীমানা প্রাচীরের বাইরে একটি খোলাস্থানে গিয়ে আছড়ে পড়ে। তবে ড্যাশ-এইট বিমানটি ৬৬ যাত্রী নিয়েই ঢাকার হযরত শাহজালালের উদ্দেশে চলতে থাকে। পাইলটের বুদ্ধিমত্তায় পরে নিরাপদে অবতরণ করে। এতে বিমানটি একটি বড় দুর্ঘটনার হাত হতে রক্ষা পায়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার বলা হয়েছে, বিমান উড্ডয়নের পর সেখানকার কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেনকে জানানো হয়, ফ্লাইটটি উড্ডয়নের পর একটি চাকা খুলে পড়ে গেছে। এ সংবাদ পেয়ে ফ্লাইটের অপারেটিং ক্যাপ্টেন আতিক ও ফার্স্ট অফিসার ইয়ামিন ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। সে মোতাবেক ঢাকায় ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের যাবতীয় প্রস্তুতি স¤পন্ন করা হয়। সকাল দশটা ২৫ মিনিটে ক্যাপ্টেন আতিক রানওয়ের ওপর লো লেভেল ফ্লাই করে নিশ্চিত হতে চান কোন চাকাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তাকে জানানো হয়, পেছনের ডানপাশের ৪ নম্বর চাকাটি খুলে পড়েছে। এমতাবস্থায় ক্যাপ্টেন ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে তার অসামান্য দক্ষতা ও নৈপুণ্যে নিরাপদ ও সফলভাবে ফ্লাইটটি অবতরণ করান। ফ্লাইটে থাকা ৬৬ যাত্রী, দুইজন কেবিন ক্রু, এক গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার এবং দুই পাইলট সকলেই নিরাপদ ও অক্ষত ছিলেন এবং এই ঘটনায় উড়োজাহাজেরও কোন ক্ষতি হয়নি। বিমানটি জরুরী অবতরণকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ক্যাপ্টেন জামিলসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই বিমানটি সকাল সাড়ে আটটায় ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সৈয়দপুরে যাত্রী নামিয়ে ঢাকা ফিরতি পথে ৬৬ যাত্রী নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় উড়াল দেয়। সৈয়দপুর রানওয়ের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে বিমানটি উত্তরপ্রান্ত দিয়ে উড্ডয়ন করছিল। রানওয়ের উত্তর প্রান্তের সীমানা প্রাচীরের আগে বিমানটি যখন উড্ডয়ন করে ৩০ ফুট উপরে উঠে যায় তখনই বিমানের ডান পার্শ্বের একটি চাকা রানওয়ের ওপরেই খুলে জাম্প করে সীমানা প্রাচীরের ওপারে সৈয়দপুর কলেজপাড়া এলাকার একটি ধানক্ষেতে গিয়ে আছড়ে পড়ে। খবরটি নিমিষেই ছড়িয়ে পড়লে শতশত মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে যেতে থাকে। বিমানটির চাকা খুলে পড়ার দৃশ্য দূর থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সৈয়দপুর কন্ট্রোল টাওয়ারকে অবগত করে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক শাহিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বিমানের ক্যাপ্টেন ও ঢাকায় শাহজাহাল বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারকে অবগত করি। ঢাকায় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেখানে বিমানটি নিরাপদের সঙ্গে অবতরণে সক্ষম হয়। এদিকে বার বার কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে জানতে চাইলে বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বার বার বলছেন কেন। আপনারা সব কিছুকে এভাবে দেখছেন কেন। এ ঘটনায় পাইলট অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নিরাপদে অবতরণ করেছে। এ জন্য পাইলটকে পুরস্কৃৃত করা উচিত। এতগুলো যাত্রীকে নিরাপদে রেখে যেভাবে ল্যান্ড করেছে সেটাই হাইলাইট করতে হবে। নিরাপদে অবতরণ করার জন্য পাইলটের কৃতিত্ব স্বীকার্য। কিন্তু উড়ন্ত অবস্থায় কেন চাকা খুলে পড়ে যায়, সেটার জন্য কি কেউ দায়ী নয়? এটা কি ইঞ্জিনিয়ার শাখার অবহেলা নয়-এমন প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, সেটা ভিন্ন কথা। সেটা আপনারা খুঁজে বের করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, আমার জীবনে এমন ঘটনা দেখিনি। সাধারণত উড্ডয়নের সময় চাকা ফেটে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। এ অবস্থায় অবতরণ করাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এক চাকার ওপর নির্ভর করেও অবতরণ করা যায়। কারণ একটা চাকা নষ্ট হলেও সাপোর্টিং আরেকটা চাকা থাকে। সেটাই যথেষ্ট। এমনটি হতেই পারে। কিন্তু উড্ডয়নের পর চাকাই খুলে পড়ে যায় এবং সেটাকে পরে খুঁজে বের করতে হয় এটা তো অস্বাভাবিক ঘটনা। এর মানে বিমানের প্রকৌশল শাখায় ঠিক মতো উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হচ্ছে না। ওই উড়োজাহাজ উড্ডয়নের আগের চেকাপে কি সেটা ধরা পড়ল না কেন ? চাকা সংযুক্তিতে বড় ধরনের দুর্বলতা ও ত্রুটি ছিল বলেই এমনটি ঘটেছে। আশীষ রায় চৌধুরী বলেন,আসলে বিমানের প্রকৌশল শাখার প্রতি কারোর কোন নজর না গুরুত্ব নেই। যে কারণে ৭ মাস ধরে এখানে পরিচালকের পদশূন্য থাকলেও সেটা পূরণ করতে পারছে না বিমান। বিমান যে কিভাবে চলছে- তা কেবল ভগবানই জানেন।
×