ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ খুলছে মগবাজার মৌচাক উড়াল সড়ক

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ খুলছে মগবাজার মৌচাক উড়াল সড়ক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাড়ে চার বছর পর দ্বার খুলছে মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কের। আজ দুপুরের পর থেকেই সচল হবে এই এলাকার ট্রাফিক সিগন্যাল। জ্বলবে লাল আর সবুজ বাতি। তেমনি উড়াল সড়কের সবক’টি লুপও সচল হবে। যানবাহন চলাচলে উন্মুক্ত করা হবে প্রথম ট্রাফিক সিগন্যালযুক্ত এই উড়াল সড়কটি। এদিকে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে আজ বৃহস্পতিবার মৌচাক-মালিবাগ এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। মৌচাক মোড়ে মঞ্চ নির্মাণের কারণে বুধবার সকাল থেকেই মৌচাক-মালিবাগ রেলগেট সড়কটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় মালিবাগ, মৌচাক-শান্তিনগর-মগবাজারসহ আশপাশের এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার দুপুরে মৌচাক এলাকায় গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রস্তুতি শেষ। অপেক্ষা উদ্বোধনের। উড়াল সড়কে লাগানো হয়েছে রং বেরঙের পতাকা। মরিচ বাতি ও রঙিন কাপড় দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো ফ্লাইওভার। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকবেন মৌচাক এলাকায় বানানো অনুষ্ঠান মঞ্চে। মেয়র সাঈদ খোকন বুধবার বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য মৌচাক এলাকায় প্যান্ডেল তৈরি করা হবে। এ কারণে ওই এলাকায় যানজট হতে পারে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে থাকবেন। আমরা থাকব এই প্রান্তে। সেখানে একটা অনুষ্ঠান হবে। এ কারণে ওই রাস্তাটা বন্ধ থাকবে। নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছে যেন তারা খুব জরুরী কাজ না থাকলে ওই এলাকার সড়ক ব্যবহার না করেন। যানজট এড়াতে তারা যেন বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করেন। মেয়র বলেন, শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা ব্যক্তি, সংগঠন অনুষ্ঠানে আসবেন। তারা মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে আসবেন তো, এ কারণে যানবাহন চলাচলে কিছুটা বিঘœ হবে। এ কারণে আমরা অনুরোধ করছি এ এলাকা এড়িয়ে চলতে। রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের তৃতীয় ধাপে এফডিসি মোড় থেকে সোনারগাঁও হোটেলের দিকের অংশটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় গত ১৭ মে। তার আগে, ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ এ ফ্লাইওভারের হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত অংশটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা উদ্বোধন করেন। ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এ ফ্লাইওভারের ইস্কাটন-মৌচাক অংশের যান চলাচল উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১১ সালে যখন এই ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল, তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কাজ শুরুতে বিলম্ব হওয়ায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তা শেষ করার কথা ছিল। এর পর কয়েক ধাপে ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ তিন ভাগে করা হয়েছে। একটি অংশে রয়েছে সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি পর্যন্ত, আরেকটি অংশে শান্তিনগর-মালিবাগ-রাজারবাগ পর্যন্ত এবং শেষ অংশটি বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক পর্যন্ত। উড়াল সড়কের প্রতিটি পিলার পাইলের গভীরতা প্রায় ৪০ মিটার গভীর। ফ্লাইওভারটি আটটি মোড় যথাক্রমে- সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া ও রমনা থানা। ফ্লাইওভারটি মগবাজার, মালিবাগ ও সোনারগাঁসহ তিনটি রেলক্রসিং অতিক্রম করেছে। ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্প রয়েছে। তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, বাংলামোটর, মগবাজার, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং শান্তিনগর মোড়ে ওঠানামা করার ব্যবস্থা রয়েছে। এযাবতকালে রাজধানীতে যে কটি উড়াল সড়ক নির্মাণ হয়েছে এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি জনভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এই উড়ালসড়কটি নির্মাণের সময়। বিশেষ করে বেহাল সড়কের কারণে যাত্রী ও পরিবহন ভোগান্তির শেষ ছিল না। এজন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনকে বারবার সতর্ক করেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বহুল আলোচিত মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কের দুটি পয়েন্টে সিগন্যাল রাখা হয়েছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌচাক-মালিবাগ এলাকার যানজটের মহাভোগান্তি নিরসনে উড়াল সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ফ্লাইওভারে সিগন্যাল থাকায় যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তির সম্ভাবনা নেই। অর্থাত নতুন এই উড়াল সড়কে এখন নিত্য যানজটের চিত্র দেখার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ বলছে, জায়গা সঙ্কটের কারণে লুপ বাড়ানো সম্ভব হয়নি। তাই সিগন্যাল পড়েছে। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উড়াল সড়কে রয়েছে। কারো কারো মতে নক্সায় ভুল হওয়ার কারণে উড়াল সড়কে সিগন্যাল দেয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না।
×