ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

টানা দ্বিতীয়বার ও সবমিলিয়ে পঞ্চমবার ফিফা বর্ষসেরা (দ্য বেস্ট) ফুটবলার হওয়ার পর বললেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ্রধন্যবাদ জানালেন মেসি-নেইমার-সতীর্থসহ সবাইকে ্রপ্রশংসার স্রোতে ভাসছেন রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগীজ সুপারস্টার ্রবরাবরের মতো এবারও একে অপরকে ভোট দেননি ম

‘সাত সৌভাগ্যের নম্বর, সাতবার এ অর্জন চাই’

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

‘সাত সৌভাগ্যের নম্বর, সাতবার এ অর্জন চাই’

জাহিদুল আলম জয় ॥ ‘এখানেই শেষ নয়, আমি এরকম সাতটি অর্জন করতে চাই। পাঁচ ঠিক আছে, কিন্তু সাত আমার সৌভাগ্যের নম্বর। এ কারণেই আরও দুটি পেতে চাই।’ কথাগুলো সময়ের সেরা ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার মধ্যরাতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফিফা বর্ষসেরা (দ্য বেস্ট) ফুটবলারের এ্যাওয়ার্ড জয়ের পর এমন বলেন রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগীজ সুপারস্টার। এবারসহ (২০১৭ সাল) মোট পাঁচবার ফিফা বর্ষসেরা হলেন সি আর সেভেন। ফলে তিনি ছুঁয়ে ফেলেছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসিকে। বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন মহানায়কও পাঁচবার ফিফা বর্ষসেরার খেতাব জিতেছেন। লন্ডনের প্যালাডিয়ামের ব্লুমসবুরি বলরুমে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনা ও ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার রোনাল্ডোর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন রোনাল্ডো। এরপর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে ভোট দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। লিও ও নেইমারের সঙ্গে এক জায়গায় হওয়াটা সত্যিই অসাধারণ মুহূর্ত। পুরো বছরজুড়েই রিয়াল মাদ্রিদের সতীর্থ, সমর্থক, কোচ আমাকে সমর্থন যুুগিয়ে গেছে। এই প্রথমবারের মতো আমরা ইংল্যান্ডে এই পুরস্কারের জন্য এসেছি। টানা দ্বিতীয়বারের মতো এই পুরস্কার এখন আমার হাতে। এটা আমার জন্য দারুণ একটি মুহূর্ত।’ রোনাল্ডো জিতবেন অনুমিতই ছিল। কিন্তু প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মেসিকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে হারাবেন এটা হয়তো কেউ ভাবেননি। ফিফার সদস্যভুক্ত দেশগুলোর কোচ, অধিনায়ক ও সাংবাদিকরা মিলে এবার ৪৫৯ ভোট দিয়েছেন। সেখানে রোনাল্ডো পেয়েছেন ৩৪০ ভোট আর দ্বিতীয় হওয়া মেসি পেয়েছেন মাত্র ৫৫ ভোট। মেসির এত বিশাল ব্যবধানে হার অবাক করার মতোই। ভোটের হিসেবে নির্ধারণ হয় পয়েন্ট। সেখানে রোনাল্ডো ১৮৮৮ ও মেসি পান ৮২৩ পয়েন্ট। বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যাওয়া নেইমারও খুব বেশি ভোট পাননি। তৃতীয় হওয়ার পথে তিনি পেয়েছেন মাত্র ১৫ ভোট। এ হিসেবে তিনি পয়েন্ট পেয়েছেন ২৯৮টি। শতকরা হিসেবে রোনাল্ডো, মেসি ও নেইমার পেয়েছেন যথাক্রমে ৪৩.১৬ শতাংশ, ১৯.২৫ শতাংশ ও ৬.৯৭ শতাংশ ভোট। এছাড়া চতুর্থ স্থানে থাকা জুভেন্টাসের জিয়ানলুইজি বুফন পেয়েছেন ৮ ভোট এবং বার্সাতে মেসির সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ পেয়েছেন ৪ ভোট। উরুগুয়ের স্ট্রাইকার হয়েছেন নবম। গত মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করা রিয়াল মাদ্রিদের অন্যতম সফল খেলোয়াড় ছিলেন রোনাল্ডো। এ কারণে প্রথমবারের মতো লন্ডনে অনুষ্ঠিত এই এ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে রোনাল্ডোর পাশাপাশি অধিকাংশ পুরস্কারেই ছিল রিয়ালের আধিপত্য। রিয়াল মাদ্রিদ ও পর্তুগালের হয়ে ২০১৬-১৭ মৌসুমে রোনাল্ডো ৪৮ ম্যাচে করেছেন ৪৪ গোল। এর মধ্যে আছে গত ৩ জুন কার্ডিফে জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে ৪-১ গোলের জয়ের ম্যাচে করা দুটি অসাধারণ গোল। গত বছর ২০ নবেম্বর থেকে চলতি বছরের ২ জুলাই পর্যন্ত ফুটবলারদের পারফর্মেন্স বিবেচনায় বর্ষসেরা নির্বাচন করা হয়েছে। ক্যারিয়ারে তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা প্রাপ্তিতে ১২ ম্যাচে ১৬ গোল, পর্তুগালকে প্রথমবারের মতো ইউরোর শিরোপা জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া এসবই রোনাল্ডোকে ২০১৭ সালের সেরা ফুটবলারের খেতাব জয়ে সহযোগিতা করেছে। রোনাল্ডো প্রথম বর্ষসেরা পুরস্কার জয় করেন ২০০৮ সালে। ওই বছর তিনি ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের দেয়া ব্যালন ডি’অর পুরস্কারও জয় করেছিলেন। এর পরপরই বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের সঙ্গে যৌথভাবে গত ছয় বছর বর্ষসেরা ফুটবলারের এ্যাওয়ার্ড ব্যালন ডি’অর প্রদান করে আসছিল। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রোনাল্ডো জয় করেছিলেন ব্যালন ডি’অর। এ বছর জানুয়ারিতে আবারও পুরস্কার দুটি আলাদা হওয়ায় জানুয়ারিতে ফিফার বিচারে সেরা পুরুষ খেলোয়াড় মনোনীত হয়েছিলেন রোনল্ডো। মাত্র আট মাসের ব্যবধ্যানে আবারও তিনি এই পুরস্কার জয় করলেন। অন্যবারের মতো এবারও একে অপরকে ভোট দেননি মেসি ও রোনাল্ডো। মেসি যেমন রোনাল্ডোকে একটি ভোটও দেননি, তেমনি রোনাল্ডোও আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে ভোট দেননি। ফল ঘোষণার পরপর কোন দেশের অধিনায়ক-কোচ কাকে ভোট দিয়েছেন সেটার তালিকা প্রকাশ করেছে ফিফা। প্রত্যেক ভোটারই তিনজনকে ভোট দিতে পারেন। এ তিন ক্যাটাগরির ভোটাররা সর্বমোট ৪৫৯টি ভোট দিয়েছেন। আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে মেসিও দিয়েছেন তিনটি ভোট। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী নিজেকে ভোট দেয়ার বিধান না থাকায় মেসি তার সেরা ফুটবলারের তালিকায় প্রথমে রেখেছেন লুইস সুয়ারেজকে। এরপর আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা এবং তারপর রেখেছেন নেইমারকে। রোনাল্ডো এবার সেরা তিনটি ভোট দিয়েছেন লুকা মডরিচ, সার্জিও রামোস ও মার্সেলোকে। পুরস্কার পেলেন যারা সেরা পুরুষ ফুটবলার ॥ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (রিয়াল মাদ্রিদ/পর্তুগাল) সেরা গোলরক্ষক ॥ জিয়ানলুইজি বুফন (জুভেন্টাস/ইতালি) সেরা পুরুষ কোচ ॥ জিনেদিন জিদান (রিয়াল মাদ্রিদ/ফ্রান্স) সেরা মহিলা ফুটবলার ॥ লিকে মার্টেন্স (বার্সিলোনা/হল্যান্ড) সেরা মহিলা কোচ ॥ সারিনা উইগম্যান (হল্যান্ড) ফেয়ার প্লে এ্যাওয়ার্ড ॥ ফ্রান্সিস কোনি (টোগোর স্ট্রাইকার) পুসকাস এ্যাওয়ার্ড ॥ অলিভিয়ের জিরুড (আর্সেনাল/ফ্রান্স) ফ্যান এ্যাওয়ার্ড ॥ স্কটিশ ক্লাব সেল্টিকের সমর্থকরা ফিফা বর্ষসেরা একাদশ গোলরক্ষক ঃ জিয়ানলুইজি বুফন, ডিফেন্ডার ঃ লিওনার্ডো বোনুচ্চি, সার্জিও রামোস, দানি আলভেজ, মার্সেলো, মিডফিল্ডার ঃ টনি ক্রুস, লুকা মডরিচ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, ফরোয়ার্ড ঃ লিওনেল মেসি, নেইমার ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
×