ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আপন জুয়েলার্সের তিন মালিক কারাগারে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

আপন জুয়েলার্সের তিন মালিক কারাগারে

কোর্ট রিপোর্টার ॥ শুল্ক ফাঁকির ৫ মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক ৩ ভাই দিলদার আহমেদ সেলিম, গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিনের প্রার্থনা করলে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) চারটি পৃথক আদালত তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আসামিদের মধ্যে দিলদার আহমেদ সেলিম বহুল আলোচিত বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমদের বাবা। মঙ্গলবার দুপুরে গুলশান, ধানম-ি, রমনা ও উত্তরা পূর্ব থানার মোট ৫ মামলায় আসামিরা সিএমএম আদালতের জিআর শাখায় আত্মসমর্পণপূর্বক জামিনের আবেদন জমা দেন। বেলা ৩টা থেকে শুনানি শুরু হয়। প্রথমে আসামি দিলদার আহমেদ সেলিমের উত্তরা পূর্ব, ধানমণ্ডি ও রমনা থানার ৩ মামলায় জামিনের শুনানি হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম মোঃ মাহমুদুল হাসান, নুরুন্নাহার ইয়াসমিন ও দেবব্রত বিশ্বাস শুনানি শেষে তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ঢাকা মহানগর হাকিম মোঃ আহসান হাবীব আসামি গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদের গুলশান থানার দুই মামলায় জামিন আবেদনের উপর শুনানি করেন। শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে সংশ্লিষ্ট থানা সমূহের জিআরও পুলিশের এসআই ফরিদ আহমেদ, মোজাম্মেল হোসেন, মকবুল হোসেন ও শওকত হোসেন জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন। তারা বলেন, আসামিরা মামলাসমূহে গত ২২ আগস্ট হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করলে হাইকোর্ট তাদের ৪ সপ্তাহের জন্য জামিন মঞ্জুর করেন। ৪ সপ্তাহ পর তাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের প্রার্থনা করার কথা ছিল। কিন্তু তারা প্রায় ৯ সপ্তাহ পর এসেছেন। তাই তারা জামিমের শর্ত ভঙ্গ করায় তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হোক। শুনানির পর আদালতসমূহ আসামিদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আসামিদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর কারাগারে তাদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা প্রদানের জন্য আবেদন করা হলে বিচারকগণ কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন। আসামি পক্ষে এ্যাডভোকেট কাজী নজীবউল্লাহ হিরু ও ফেরদৌস সুলতানা কাকলী জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন। শুনানিতে আইনজীবী হিরু দাবি করেন, কোন নোটিস ছাড়াই শুল্ক গোয়েন্দা অফিসাররা আপন জুয়েলার্সের পাঁচ শাখায় অভিযান চালিয়ে স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করেও দোকানগুলো সিলগালা করে দেয়। স্বর্ণ জব্দ ও সিলগালার বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষ রিট শুনানিতে সময় নিয়ে গত ১২ আগস্ট এই মামলাগুলো দায়ের করেন। আইনজীবী আরও বলেন, মামলায় পাচারের কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নাই। টাকা কিভাবে কোথায় পাচার করা হয়েছে তা বলা নাই। আসামিরা অসুস্থ। তারা উচ্চ আদালতে গিয়ে জামিন পেয়েছিলেন। তাই তারা জামিন পেতে পারেন। চোরাচালানের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা প্রায় ১৫ মণ স্বর্ণ ও হীরা জব্দের ঘটনায় ওইসব মূল্যবান ধাতু কর নথিতে অপ্রদর্শিত ও গোপন রাখার দায়ে গত ১২ আগস্ট আপন জুয়েলার্সের মালিক ওই ৩ ভাইয়ের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দায়ের করে শুল্ক গোয়েন্দা। মামলাগুলোয় আসামিগণ গত ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের জামিন পান। এরপর তারা নিম্ন আদালতে জামিননামাও দাখিল করেন। হাইকোর্টের জামিনের মেয়াদ শেষে হলেও নিম্ন আদালতে হাজির না হওয়ায় গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর ৩টি মামলায় তাদের জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। শুল্ক গোয়েন্দার পাঁচ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা যথাক্রমে এম আর জামান বাঁধন, বিজয় কুমার রায়, মোঃ শাহরিয়ার মাহমুদ, মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও মোঃ আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে এসব মামলা করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ধারা ২ (ঠ) এবং কাস্টমস এ্যাক্ট, ১৯৬৯ এর ধারা ১৫৬ (৫) অনুযায়ী শুল্ক গোয়েন্দা ওই মামলা দায়ের করা হয়। আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণালঙ্কার মজুদের অভিযোগে কাস্টমস এ্যাক্ট, ১৯৬৯ অনুযায়ী কাস্টম হাউস ঢাকায় আরও পাঁচটি কাস্টমস মামলা বিচারাধীন। বনানীর আলোচিত দ্য রেইন ট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণীতে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার হোসেন সেলিম ছেলে সাফাত ও তার সহযোগীরা। ওই ঘটনার পরই রাজধানীতে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শোরুম থেকে প্রায় ১৫ মণ স্বর্ণ ও হীরার অলঙ্কার জব্দ করা হয়। পরে এসব অলঙ্কার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়া হয়।
×