ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেজিংয়ের বার্তা নিয়ে ঢাকায় বিশেষ দূত

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের ইতিবাচক ভূমিকা চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের ইতিবাচক ভূমিকা চায় বাংলাদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দূত সান গোসিয়াং ঢাকায় এসেছেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতে তিনি ঢাকায় আসেন। আজ বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসবেন। এদিকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মিয়ানমারের বিশেষ দূত হিসেবে বব রে’কে নিয়োগ দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সূত্র জানায়, চীনের বিশেষ দূত এর আগে এপ্রিল মাসে ঢাকা এসেছিলেন। গত ছয় মাসের মধ্যে ঢাকায় এটি তার দ্বিতীয় সফর। আজ বুধবার বৈঠক শেষে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে তার মূল বৈঠকটি হবে। তিনি মিয়ানমার থেকে ঢাকা এসেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেজিংয়ের বার্তা নিয়ে ঢাকায় এসেছেন তিনি। তিনি দেশটির এশিয়া বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। এই বিশেষ দূতের কাছে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করবে ঢাকা। কেননা গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের নিয়ে গোলযোগ শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ এ বিষয়ে আলোচনার জন্য একাধিক বার মিয়ানমারকে অনুরোধ করেছে। প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের শীর্ষ নেতৃত্বকে চিঠি পর্যন্ত দিয়েছেন। কিন্তু তারা সময়ক্ষেপণ করে দায়সারাভাবে অংশগ্রহণ করে। এরপর ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন শুরু হওয়ার ছয় সপ্তাহের মধ্যে তাদের একজন ইউনিয়ন মন্ত্রী ঢাকায় আসেন শুধু আন্তর্জাতিক চাপের কারণে। এসব বিষয় বিশেষ দূতের কাছে তুলে ধরা হবে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কট সমস্যা সমাধানে অনেক আগেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেছে। বাংলাদেশের আহ্বানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাড়াও দিয়েছে। বিশেষ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে মিয়ানমারের ওপর চীনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করে আসছে বাংলাদেশ। কেননা ঢাকা-বেজিংয়ের মধ্যে এখন উচ্চতর সম্পর্ক বিরাজ করছে। সে কারণে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চীনের সহযোগিতা নিতে চায় বাংলাদেশ। চীনের বিশেষ দূতের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে এই সহযোগিতার নতুন পথ খুলবে বলে প্রত্যাশা করছে সরকার। এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মিয়ানমারে বিশেষ দূত হিসেবে বব রে’কে নিয়োগ দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণে তিনি কাজ করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে কানাডীয় হাইকমিশন। বিশেষ দূত হিসেবে রে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয় ও নিরাপত্তা সমস্যা নিয়ে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে গুরুত্বারোপ করবেন। এছাড়া রোহিঙ্গা মুসলমান সম্প্রদায়, অন্যান্য ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং নারী ও মেয়েশিশুসহ নির্যাতনের শিকার জনগোষ্ঠীর সর্বশেষ পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন। একই সঙ্গে সহিংসতার শিকার ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে কানাডা কিভাবে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে পারে সে বিষয়েও জাস্টিন ট্রুডোকে পরামর্শ দেবেন রে। এদিকে সমস্যা মোকাবেলায় মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে ১২ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দেয়ার কথা বলেছেন ট্রুডো। এক বিবৃতিতে ট্রুডো বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক বিপর্যয় ও নিরাপত্তা সমস্যা নিয়ে কানাডা উদ্বিগ্ন। আমি নিশ্চিত যে আইনজীবী, উপদেষ্টা, মধ্যস্থতাকারী ও সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে বব রে-এর ভূমিকা দেশটির (মিয়ানমার) সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
×