ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়ক আগামীকাল খুলছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়ক আগামীকাল খুলছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দ্বার খুলছে মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কের। আগামীকাল বৃহস্পতিবার উড়াল সড়কটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ইস্কাটন-মগবাজার-মৌচাক-রাজারবাগ-শাজাহানপুর-শান্তিনগর অংশটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিন পর্বের এই উড়াল সড়কের কাজ। প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই ফ্লাইওভারটির আরও দুটি অংশ ইতোমধ্যে উদ্বোধন হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত আবুল হোটেল থেকে মালিবাগ রেলগেট এলাকার নিচের সড়কের পুরো অংশ এখনও সংস্কার হয়নি। এ নিয়ে যাত্রী ও পরিবহনসংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। পাশাপাশি মালিবাগ রেলগেট এলাকায় খিলগাঁওমুখী উড়াল সড়কের কোন লুপ না থাকায় পরিবহনগুলোকে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে। ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ বলছে, নক্সায় না থাকায় এই অংশে কোন লুপ করা সম্ভব হয়নি। উড়াল সড়কের প্রতিটি পিলার পাইলের গভীরতা প্রায় ৪০ মিটার গভীর। ফ্লাইওভারটি আটটি মোড় যথাক্রমে-সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া ও রমনা থানা। ফ্লাইওভারটি মগবাজার, মালিবাগ ও সোনারগাঁসহ তিনটি রেলক্রসিং অতিক্রম করেছে। ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্প রয়েছে। তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, বাংলামোটর, মগবাজার, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং শান্তিনগর মোড়ে ওঠানামা করার ব্যবস্থা রয়েছে। এযাবতকালে রাজধানীতে যে কটি উড়াল সড়ক নির্মাণ হয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এই উড়াল সড়কটি নির্মাণের সময়। বিশেষ করে বেহাল সড়কের কারণে যাত্রী ও পরিবহন ভোগান্তির শেষ ছিল না। এজন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে বারবার সতর্ক করেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দেশে প্রথমবারের মতো নির্মাণ হলো ট্রাফিক সিগন্যালযুক্ত ফ্লাইওভার! বহুল আলোচিত মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কের দুটি পয়েন্টে সিগন্যাল রাখা হয়েছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌচাক-মালিবাগ এলাকার যানজটের মহা-ভোগান্তি নিরসনে উড়াল সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ফ্লাইওভারে সিগন্যাল থাকায় যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তির সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ নতুন এই উড়াল সড়কে এখন নিত্য যানজটের চিত্র দেখার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ বলছে, জায়গা সঙ্কটের কারণে লুপ বাড়ানো সম্ভব হয়নি। তাই সিগন্যাল পরেছে। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উড়াল সড়কে রয়েছে। কারও কারও মতে নক্সায় ভুল হওয়ার কারণে উড়াল সড়কে সিগন্যাল দেয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না। প্রকল্পের পরিচালক ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পরিচালক সুশান্ত কুমার পালও উদ্বোধনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমাকে মন্ত্রণালয় থেকে ২৬ অক্টোবর উদ্বোধনের কথা জানানো হয়েছে। উদ্বোধনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান তিনি। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উদ্বোধনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। সরকার প্রধান সময় দেয়ার পর সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার অধিদফতর। উড়াল সড়কের এখন চলছে ধোয়ামোছা, রঙ, বিদ্যুতের খুঁটি ও বাতি লাগানোর কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া সমন্বিত এ উড়াল সড়কের নিচের সড়কের সংস্কার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মৌচাক ও মালিবাগ মোড়ে লাগানো হয়েছে সিগন্যাল বাতি। তিনভাগের উড়াল সড়ক ॥ উড়াল সড়কটি তিন ভাগে করা হয়েছে। একটি অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। এটা নির্মাণ করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। গত বছরের মার্চ মাসে এ অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর নিউইস্কাটন থেকে মৌচাক পর্যন্ত উড়াল সড়কের এক দিক খুলে দেয়া হয়। এই অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন। তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) মোড় থেকে কাওরানবাজার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় গত ১৭ মে। এই অংশও তৈরি করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। এখন খুলে দেয়ার অপেক্ষায় মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার অংশ। এটা নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন। এলজিইডি সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সমন্বিত উড়াল সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে কয়েক দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ও অর্থ বাড়ানো হয়। প্রথমে এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। নক্সায় ভুল হওয়ায় পরে পরিবর্তন আনা হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা দিয়েছে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি)। ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেক এই প্রকল্প অনুমোদন করে। ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৯ কিলোমিটার লম্বা ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এই ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ঢাকা শহরের স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্যানের (এসটিপি) অন্তর্ভুক্ত। ফ্লাইওভারটি রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।
×