ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমতলীতে প্রেমিকাকে হত্যা করে লাশ ৭ টুকরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

আমতলীতে প্রেমিকাকে হত্যা করে লাশ ৭ টুকরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা, ২৪ অক্টোবর ॥ বরগুনার আমতলী পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কের এ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান বিপ্লব তালুকদারের বাসায় আলমগীর হোসেন পলাশ তার প্রেমিকা মালা আকতারকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে এসে ধারালো অস্ত্র (বঁটি) দিয়ে কুপিয়ে সাত টুকরো করে হত্যা করেছে। পুলিশ ঘাতক প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে। ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার দুপুরে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার গুদিঘাটা গ্রামের মোঃ মন্নান খানের কন্যা মালা আকতারের সঙ্গে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসোন্দা গ্রামের আবদুল লতিফ খানের ছেলে আলমগীর হোসেন পলাশ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের সঙ্গে মন দেয়ানেয়া চলছিল। মালা সম্পর্কে আলমগীর হোসেন পলাশের মামাতো শালি। সপ্তম শ্রেণীতে লেখাপড়া অবস্থায় পলাশের সঙ্গে মালার সম্পর্ক হয়। মালা কলাপাড়া মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজে একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। গত রবিবার সন্ধ্যায় পলাশ প্রেমিকা মালাকে নিয়ে আমতলী তার আত্মীয় এ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান বিপ্লবের বাসায় বেড়াতে আসে। তিন দিন ধরে পলাশ এ বাড়িতে অবস্থান করে। মঙ্গলবার মালা পলাশকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু পলাশ এতে রাজি হয়নি। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়। একপর্যায় মঙ্গলবার দুপুরে পলাশ মালা আকতারকে ধারালো অস্ত্র (বঁটি) দিয়ে কুপিয়ে মাথা, দু’হাত, দু’পা, গলার নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত দু’টুকরো মোট সাত টুকরো করে হত্যা করে। এ সময় ওই বাসায় কেউ ছিল না। ঘাতক পলাশ লাশ সাত টুকরো করে ওই বাসার বাথরুমের মধ্যে দুটি ড্রামে ভরে আটকে রাখে। এ ঘটনা ঘটিয়ে দুপুরে ঘাতক পলাশ আত্মীয় এ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান বিপ্লবকে জানায়। বিপ্লব কৌশলে পলাশকে বাসায় থাকতে বলে। বিপ্লব পলাশকে বাসায় আটকে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে ঘাতক পলাশকে গ্রেফতার করে। পরে তার কথিত মতে, টয়লেট থেকে দুটি ড্রামে ভরা খন্ডিত লাশ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ঘাতক পলাশ ঘটনার সত্যতা পুলিশের কাছে স্বীকার করে বলেন, সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় আমি মালার সঙ্গে প্রেম করে আসছি। মালার বাবা-মা ঢাকা থাকে। মালার লেখাপড়ার খরচ আমি চালাই। গত রবিবার বিয়ে করার জন্য মালাকে নিয়ে আমতলী আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে আসি। মঙ্গলবার সকালে মালা আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। আমি বিয়ে করব বলে মালাকে আশ্বস্ত করলেও তা মানতে রাজি না। একপর্যায় আমি ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরে থাকা ধারালো অস্ত্র (বঁটি) দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করি। এ সময় বাসায় কেউ ছিল না। মালার দেহ সাত টুকরো করে ওই বাসার বাথরুমের মধ্যে থাকা দুটি ড্রামে ভরে রাখি। সে আরও বলে, প্রথমে বঁটি দিয়ে গলা কেটে বিচ্ছিন্ন করি। তারপর এক-এক করে সাত টুকরো করে ফেলি। এ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান বিপ্লব বলেন, আলমগীর হোসেন পলাশ আমার সম্পর্কে মামাশ্বশুর। গত রবিবার আমার বাড়িতে মালাকে নিয়ে সে বেড়াতে আসে। এ সময় সে মালাকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলে পরিচয় দেয়। মঙ্গলবার সকালে আমি ও আমার স্ত্রী আমাদের স্ব-স্ব কর্মস্থলে চলে যাই। এ ফাঁকে সে তাকে হত্যা করেছে। তিনি আরও বলেন, পলাশ আমাকে এ ঘটনা জানালে কৌশলে আমি তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেই। পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে লাশ উদ্ধার করেছে। আমতলী থানার ওসি মোঃ শহিদ উল্লাহ বলেন, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করেছি। ঘাতক পলাশকে আটক করেছি। পলাশ ঘটনার সকল সত্যতা স্বীকার করেছে। বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, ঘাতক ঘটনার সকল সত্যতা স্বীকার করেছে। ঘাতক পলাশকে গ্রেফতার করে লাশ উদ্ধার করেছি। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে।
×