ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একনেকে অনুমোদন পেল ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

একনেকে অনুমোদন পেল ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন প্রকার কাটছাঁট ছাড়াই সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেল বহুল প্রতিক্ষীত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। ১৬ হাজার ৯০১ টাকা ব্যয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া হয়ে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০ জেলার সংযোগস্থল আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা করিডরে যানজট অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করছে সরকার। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পসহ ৩৪ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ের মোট পাঁচ উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পও রয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে প্রকল্পগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। এ সময় পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল ইসলাম এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোয় সরকারী অর্থায়ন থেকে ১২ হাজার ৪০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য থেকে ২২ হাজার ১৬৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। তিনি বলেন, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প অনুমোদনের মধ্য দিয়ে আরও একটি স্বপ্নপূরণের পালা শুরু হলো। প্রকল্পটি রাজধানীর যানজট কমিয়ে আনার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে। উত্তরবঙ্গসহ দেশের ৩০ জেলার সঙ্গে ঢাকার সংযোগ ঘটাবে এ এক্সপ্রেসওয়ে। এটি নির্মাণ করা হবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে, থাকবে পাঁচটি টোলপ্লাজা। এতে এক্সপ্রেসওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে চায়না এক্সিম ব্যাংকের ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা রয়েছে। আর সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে বাকি পাঁচ হাজার ৯৫১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২২ সাল নাগাদ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সেতু বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। উল্লেখ্য, প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত তিন বছরে দুবার সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এরপরই অনুমোদনের জন্য প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়। মন্ত্রী জানান, সভায় ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটিও অনুমোদন পেয়েছে। মুস্তাফা কামাল বলেন, দেশে বর্তমানে আটটি বিমানবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক ও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ। এর মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরটি দেশের অন্যতম বিমানবন্দর। বাংলাদেশে প্রায় ১৭টি বিমান সংস্থার বিমান চলাচল করছে এবং এ বিষয়ে ৫২টি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে। এ বিমানবন্দরটির বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রী পরিবহন হ্যান্ডলিং সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু দেশের বিমান পরিবহন চাহিদা বিবেচনায় এটির অবকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। কারণ এয়ার ট্রাফিকের বর্ধিত চাহিদা বিবেচনায় বর্তমান টার্মিনালটির ধারণক্ষমতা ২০১৮ সালের মধ্যে পরিপূর্ণ হবে। ২০২৫ সালে এক কোটি ৪০ লাখ যাত্রী বিমানবন্দরটি ব্যবহার করবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে এ সংখ্যা দুই কোটি ৪৮ লাখে উন্নীত হবে। ভবিষ্যত চাহিদা বিবেচনায় প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী জানান, মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ থেকে ১১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। জাইকা নামমাত্র সুদে (বার্ষিক সুদহার শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ) প্রকল্পের মূল কাজ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। সভায় অনুমোদন পাওয়া অন্য তিন প্রকল্প হলো এক হাজার ৭৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর ঢাকা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। এর আওতায় ঢাকা বিভাগের ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরের ৩৪ উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামো বিশেষ করে সড়কের উন্নয়ন, সংস্কার ও মেরামত করা হবে। দুই হাজার ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ের কুমিল্লা (টমছম ব্রিজ)-নোয়াখালী (বেগমগঞ্জ) আঞ্চলিক মসহাড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প এবং প্রায় ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের বালাশী ও বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ প্রকল্প।
×