ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শোষিত বঞ্চিতদের অধিকার আদায়ের দিন, মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

শোষিত বঞ্চিতদের অধিকার আদায়ের দিন, মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস

মোরসালিন মিজান অনেক পুরনো কথা। বহুবার শোনা। এর পরও বলতে হচ্ছে। বলতেই হচ্ছে যে, এই সময় আসলে নষ্ট সময়। যারপরনাই ঘূণে ধরা সমাজ। গোটা দুনিয়া পুঁজির নিচে চাপা পড়েছে। শোষণ বাড়ছে। প্রতিনিয়ত বঞ্চনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শ্রমিক তার শ্রম দিচ্ছে। দিয়েই যাচ্ছে। উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছে না। মালিক ফুলে উঠছে। ফেঁপে উঠছে শুধু। ফসল ফলাচ্ছে কৃষক, টাকা গুনছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। লুটেরার দল লুটেপুটে খাচ্ছে সব। অর্থনৈতিক মুক্তি মিলছে না মানুষের। ন্যূনতম অধিকারগুলো শিকেয় তোলা। এই যখন বাস্তবতা তখন অক্টোবর বিপ্লবের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আজ বুধবার ২৫ অক্টোবর। ঐতিহাসিক রুশ বিপ্লবের আলোকোজ্জ্বল দিন। সেই কবেকার ঘটনা। কবেকার বটে। এখনও স্বপ্ন দেখায়। নতুন করে জেগে ওঠা অসম্ভব নয়Ñ এই কথাটি স্মরণ করিয়ে দেয়। সাত সমুদ্র তেরো নদী দূরত্বে যে বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল তার ঢেউ এসে লেগেছিল বাংলাদেশেও। সারাবিশ্বের মতো এখানেও ক্রিয়া করেছিল অক্টোবর বিপ্লব। তাই নানা আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করা হয়। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষে নেয়া হয়েছে একাধিক কর্মসূচী। অক্টোবর বিপ্লব পৃথিবীর ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায়। এর মধ্য দিয়ে নতুন এক দর্শনের সূচনা হয়েছিল। বঞ্চিত, শোষিত শ্রমিক শ্রেণী ঘুরে দাঁড়িয়েছিল নিজের শক্তিতে। এই দাঁড়ানো যে সে দাঁড়ানো নয়। উত্থান। যুদ্ধ জয়। প্রতিটি মানুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে সত্যি করেছিল বলশেভিক বিপ্লব। রাশিয়ান বিপ্লবের দুটি ধাপ। প্রথম ধাপটি ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে রাশিয়ার সাম্রাজ্যের পতন ঘটনো হয়। ক্ষমতাচ্যুত করা হয় শেষ সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাসকে। দায়িত্ব নেয় একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দ্বিতীয় ধাপটি ছিল অক্টোবর বিপ্লব। কমরেড লেনিন নেতৃত্ব দিয়ে এই সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে যান। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করে বলশেভিক বা কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। জুলিয়ান বর্ষপঞ্জী অনুসারে বিপ্লবের দিনটি ১৯১৭ সালের ২৫ অক্টোবর। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জী অনুসারে দিনটি হয় একই বছরের ৭ নবেম্বর। অক্টোবর বিপ্লবের প্রাণ ছিল শ্রমিক শ্রেণী। হতদরিদ্র কৃষক শ্রেণী ছিল তাদের সঙ্গে। যুগ যুগ ধরে বুকে জমিয়ে রাখা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন তারা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১০ অক্টোবর লেনিনের নেতৃত্বাধীন বলশেভিকদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অস্থায়ী সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। ২৩ অক্টোবর বলশেভিক নেতা জ্যান আনভেল্টের নেতৃত্বে বামপন্থী বিপ্লবীরা বিক্ষোভ শুরু করে এস্তোনিয়ার রাজধানীতে। এর দু’দিন পর ছিল ঐতিহাসিক ২৫ অক্টোবর। এদিন লেনিনের নেতৃত্বে বিপ্লবী রেড গার্ডস পেত্রোগার্দে বিক্ষোভ শুরু হয়। আর ৯টা ৪৫ মিনিটে যুদ্ধজাহাজ অরোরা থেকে ফাঁকা শেল নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে সূচনা করা হয় চূড়ান্ত আক্রমণের। অল্প সময়ের মধ্যে বিপ্লবীরা পেত্রোগার্দের গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোর দখলে নিতে সক্ষম হন। পরে অস্থায়ী সরকারের প্রধান দফতর উইন্টার প্যালেসের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন তারা। সহসাই এই প্যালেসের পতন হয়। একই সময় স্মোলনির সমাবেশ হলে পেত্রোগ্রার্দ সোভিয়েতের জরুরী অধিবেশনে মহামতি লেনিন ঘোষণা করেন ‘যে শ্রমিক ও কৃষক বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তার কথা বলশেভিকরা সর্বদা বলে এসেছে আজ তা ঘটল’। এভাবে ২৫ অক্টোবর লেখা হয় নতুন ইতিহাস। বিপুল জয় হয় বিপ্লবীদের। প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রমিকদের শাসন। পতাকা ওড়ে সমাজতন্ত্রের। একচেটিয়া পুঁজিবাদের বিপরীতে সাম্যের পৃথিবীর দাবি জোরালো হয়। সারা দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন তুলে অক্টোবর বিপ্লব। অবশ্য বর্তমানে ঐতিহাসিক অর্জনের অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। ফের অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে পৃথিবী। পুঁজির কাছে নত হয়েছে। প্রতিদিনের জীবন, দর্শন সবকিছুই পুঁজির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশেও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম সেই আগের মতো নেই। যেন নিভু নিভু বাতিটি। তবে অক্টোবর বিপ্লবের চেতনা বুকে বাঁচিয়ে রেখেছেন মুক্তিকামী মানুষ। জাগিয়ে রেখেছেন। রেখেছেন যে, সে কথা বলাই বাহুল্য। নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে আজ দিবসটি উদযান করা হবে ঢাকায়। এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে মহান অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক যতীন সরকার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, হায়দার আকবর খান রনো এবং মফিদুল হক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। আগামীকাল বৃহস্পতিবার অক্টোবর বিপ্লবের বার্ষিকী উদযাপন করবে গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ। সোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজন করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার। এখান থেকে গানে কবিতায় বঞ্চিতদের শোষিতদের অধিকারের কথা বলা হবে।
×