ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুষমা স্বরাজের সফর

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

সুষমা স্বরাজের সফর

বাংলাদেশ-ভারত প্রতিবেশী দেশ। দুই দেশই পরস্পরের বিশ্বস্ত বন্ধু। দুই দেশের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সার্বভৌমত্বের, সমঅধিকার এবং বিশ্বাসের ওপর। যা কূটনৈতিক সম্পর্ককে ছাড়িয়ে গেছে। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশ দুটির সম্পর্ক আজ একটি কার্যকর আন্তরিকতার পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা শুধু নয়, সীমান্ত সুরক্ষা, প্রযুক্তি বিনিময়, মহাকাশ গবেষণা, সাইবার নিরাপত্তা, কানেকটিভিটি, শিপিংসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতার দিগন্ত ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাস ও মৌলবাদের মতো কিছু সমস্যা দুই দেশ একই সঙ্গে মোকাবেলা করে আসছে। সব পর্যায়ের সহিংস চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি ও জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে উভয়পক্ষই সন্ত্রাস, সহিংসতা ও বিদ্বেষপূর্ণ মতবাদ থেকে সমাজকে রক্ষায় বদ্ধপরিকর। এতে উপকৃত হচ্ছে দুদেশই। বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করছে ভারত। দেশটির সহযোগিতায় গত তিন বছরে ২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। আরও ৫টি প্রকল্প হাতে রয়েছে। এবার সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরকালে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং সংস্কৃতি বিকাশে ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। বিদ্যুত ও জ্বালানি ক্ষেত্রে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতায় দুদেশই সন্তুষ্ট। উভয়ের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্র ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। ভারতের ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুত আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রফতানির মধ্য দিয়ে দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিশেষত আন্তঃসংযোগের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে নতুন অধ্যায়ের। বাংলাদেশে ভারত বর্তমানে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করছে। এর পরিমাণ ভবিষ্যতে দ্বিগুণ হবে। তেল এবং গ্যাস ক্ষেত্রে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে উভয় দেশের জনগণ সমানভাবে উপকৃত হবে বলে সুষমা স্বরাজ জানান। এজন্য ভারত এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, প্রাকৃতিক গ্যাস বিনিময়ের জন্য পাইপলাইন স্থাপন এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আগামীতে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। উভয় দেশের মানুষের মাঝে সম্পর্ক উন্নয়নে ১৯৬৫ সালের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় চালুর অর্থই হচ্ছে সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি। এতে উভয় দেশের সড়ক, রেল এবং পানি যোগাযোগ অনেক সহজ হবে। জনগণের মধ্যে যোগাযোগ দুই দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য এখন প্রয়োজন সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সফরকালে বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো দ্রুত মিটিয়ে ফেলার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। এমনটাও বলেছেন যে, ভারতের কাছে প্রতিবেশী আগে, কিন্তু বাংলাদেশ সবার আগে। উভয় দেশের সম্পর্ক বর্তমানে অসাধারণ। দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানে দুইপক্ষই সঠিক পথে কাজ করছে। বাংলাদেশ ভারতের শুধু নিকট প্রতিবেশীই নয়, বরং দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত অকৃত্রিম বন্ধু ও সুহৃদ। দিল্লী বাংলাদেশের কাছে করিডর, ট্রান্সশিপমেন্ট শুল্কমুক্ত পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্য সুবিধাসহ যখন যা চেয়েছে, তখনই তা পেয়েছে সহজে। একাত্তরের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ভারতের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা স্মরণ করা হয়ে থাকে। ভারতের মন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধকালীন অনেক স্মারক বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছেন। তবে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই চুক্তি করার বিষয়ে আবারও আহ্বান মিলেছে। আন্তর্জাতিক আদলে বাংলাদেশের যে কোন উদ্যোগকে ভারত স্বাগত জানাবে এবং সমাধান দেবে বলে ইতোপূর্বে প্রদত্ত আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার বিষয়ে চাপ প্রয়োগে ভারত এগিয়ে এসেছে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান ভারতও চায়। এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের ইতিবাচক মনোভাব আবারও উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ও ভারত পারস্পরিক অগ্রগতির লক্ষ্যে ও দুই দেশের জনগণের স্বার্থে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
×