ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুলে স্কুলে টিসি তোলার ধুম

রাজশাহীর দুই মডেল স্কুলে অসময়ে ভর্তি

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

রাজশাহীর দুই মডেল স্কুলে অসময়ে ভর্তি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ বছরের শেষভাগে এসে অনিয়ম করে ছাত্র ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী নগরীতে সদ্য সরকারী ঘোষিত দুটি মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে। রাজশাহী মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে এ ভর্তি বাণিজ্য চলছে। এজন্য নগরীর বিভিন্ন স্কুল থেকে ছাত্র ভাগিয়ে নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। সরকারী হওয়ার তকমা কাজে লাগিয়ে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে এ দুটি স্কুল এখন ছাত্র ভর্তির বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। এজন্য অন্যান্য স্কুল থেকে টিসি (বদলি সনদ) তোলার ধুম পড়েছে। এ ঘটনায় নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, হঠাৎ করে গত ২ অক্টোবর ৯০ শিক্ষার্থীকে একযোগে পেছনের তারিখে ভর্তি নেয়া হয় মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে। ওই দিন বিকেলে তাড়াহুড়া করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেয়া হয়। নামমাত্র মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র ভর্তি নেয়া হয়। সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী নেয়া হয়েছে প্রথম, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই স্কুল এ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষক জানান, মূলত কয়েকজন শিক্ষকের প্ররোচনায় বছরের শেষভাগে এ ভর্তিকা- শুরু করেছেন অধ্যক্ষ নিজেই। এ দুটি স্কুল সরকারীকরণের ঘোষণা আসার পর থেকেই এখানে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিভিন্ন মহল চেষ্টা চালাতে থাকে। বিশেষত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি অংশ এক্ষেত্রে বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, ছাত্রপ্রতি ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে এ ভর্তিকা-ে। একসঙ্গে দুটি স্কুল এ ভর্তি বাণিজ্য শুরু করেছে। বছরের শেষে ভর্তির কোন বিধান না থাকলেও তা মানছেন না এ দুটি কলেজের অধ্যক্ষ। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, বছরের শেষে ঢালাওভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির কোন বিধান নেই। ওই সূত্রটি জানায়, শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা সম্পূর্ণ অমান্য করে অবৈধভাবে বছরের শেষে ভর্তি করা হচ্ছে শিক্ষার্থী। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাদের শিক্ষার্থী ভাগিয়ে নেয়ায় কমে যাচ্ছে ছাত্র সংখ্যাও। রাজশাহী নগরীর একটি স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ জানান, তাদের স্কুল থেকে শিক্ষার্থীরা ঢালাওভাবে বছরের শেষে বদলি সনদের জন্য আবেদন করেছেন। তারা বেশকিছু বদলি সনদও দিয়েছে। ওই সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে অবৈধভাবে টাকার বিনিময়ে ভর্তি করা হচ্ছে। একই অবস্থা চলছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে। এখানেও শিক্ষার্থী ভর্তির হিড়িক পড়ছে। বিভিন্ন স্কুলে এখন ট্রান্সফার সার্টিফিকেট তোলার হিড়িক পড়ে গেছে। ভর্তির জন্য এখানে ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। শরিফুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক বলেন, ভর্তির জন্য তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে তিনি সন্তানকে ভর্তির চেষ্টা করে অপারগ হয়েছেন। এখন তিনি শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে সন্তানকে ভর্তির চেষ্টা করছেন। সরকারী হয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসার পর থেকে তিনি সন্তানকে ভর্তির চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তাইফুর রহমান বলেন, ভর্তির জন্য অনেকে আবেদন করেছে। কিন্তু এখনও ভর্তি নেয়া হয়নি। সেসব আবেদন রেখে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারীরা অন্য কোথাও থেকে বদলী হয়ে এলে তাদের ছেলেমেয়েদের ভর্তির বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর অভিভাবকদের বদলিসংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে। অর্থের বিনিময়ে ছাত্র ভর্তির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
×