ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কেশবপুরে রোগীরা ছুটছে ক্লিনিকে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

কেশবপুরে রোগীরা ছুটছে ক্লিনিকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, ২৩ অক্টোম্বর ॥ কেশবপুরের প্রায় তিন লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র হাসপাতালে চিকিৎসা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারদের অবহেলা, উদাসীনতা ও অর্থ বাণিজ্যের কারণে কেশবপুরের মানুষ ঠিকমতো স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে মানুষ স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। বিশেষ করে দীর্ঘকাল হাসপাতালে ডাক্তারের অভাবে যাবতীয় অপারেশন বন্ধ থাকায় রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে। অপারেশন বা সাধারণ চিকিৎসার রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে অনেক ডাক্তার অপারেশন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার অজুহাতে শহরে তাদের নিজস্ব চেম্বারে নিয়ে যাচ্ছেন। পয়সা পান না বলে ডাক্তাররা মূলত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন অপারেশন করেন না বলে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ। কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালে। ২০০০ সালে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্বক্ষণিক লোকবলের অভাব থাকায় এখানকার মানুষ বরাবরই স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। প্রতিদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তাররা বহিঃবিভাগে দেড় থেকে ২শ’ রোগী চিকিৎসার জন্য আসেন। মাঝেমধ্যে বিষপান এবং সড়ক দুর্ঘটনার রোগী ভর্তি হন। জরায়ু, সিজার, ডিম্বাশয়ের টিউমার, নাড়ি ছিদ্র, নাড়ি জড়ানো, হার্নিয়া, এ্যাপেন্ডিস, অ-কোষের পানি, পিত্তথলিতে পাথর এবং প্রস্রাবের থলির নানা জটিলতার চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। অপারেশনের সব যন্ত্রপাতি থাকলেও এ জাতীয় কোন অপারেশন ডাক্তারের অভাবে করা হয় না। মাঝেমধ্যে দু’-একজনকে অপারেশন করা হলেও তারা হলেন যারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করেন তাদের আত্মীয়স্বজন। চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র নয়জন গর্ভবর্তী মাকে সিজার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন সিজার রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মাইনর অপারেশন হয়েছে ২৫৪টি। এ সময়ের মধ্যে আউটডোরে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে ২৫ হাজার ৬১৫ রোগীকে। পাশাপাশি শহরের সাতটি ক্লিনিকে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৮৬৩ জন রোগীকে সিজার ও মাইনর অপারেশন করা হয়েছে এবং ৮০ হাজার ১৬৩ রোগীকে আউটডোরে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। শহরের মহাকবি মাইকেল ক্লিনিক, কপোতাক্ষ সার্জিক্যাল ক্লিনিক, মডার্ণ ক্লিনিক, মাতৃমঙ্গল ক্লিনিক, কেশবপুর সার্জিক্যাল ক্লিনিক, হেলথ কেয়ার হসপিটাল ও নাগরিক হসপিটাল ওষুধ ও সার্জন ফিসহ জরায়ু অপারেশন চার থেকে ছয় হাজার, সিজার অপারেশন সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার, স্বাভাবিক সন্তান প্রসব দেড় থেকে দুই হাজার, ডিম্বাশয়ের টিউমার অপারেশন দুই থেকে তিন হাজার, নাড়ি ছিদ্র অপারেশন পাঁচ থেকে আট হাজার, নাড়ি জড়ানো অপারেশন পাঁচ থেকে আট হাজার, হার্নিয়া অপারেশন দুই থেকে তিন হাজার, এ্যাপেন্ডিস অপারেশন ৯শ’ থেকে ১২শ’, অ-কোষের পানি অপারেশন দুই থেকে তিন হাজার, পিত্তথলির পাথরসহ অন্যান্য অপারেশন পাঁচ থেকে সাত হাজার এবং প্রস্রাবের থলির নানা জটিলতা অপারেশন করে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা নিয়ে থাকে। এ সাতটি ক্লিনিকে রোগী অপারেশন করা হয় কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার এবং যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে সার্জন এনে। যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরার কোন ক্লিনিকে এ জাতীয় অপারেশন করানো হলে ওষুধ ও সার্জন ফি বাদে রোগীকে ৪-৫ গুণ বেশি টাকা দিতে হয়। কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন ধরনের অপারেশন না হওয়ায় রোগীদের যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরায় নিয়ে অপারেশন করালে টাকা লাগে কয়েকগুণ বেশি। তাই বাধ্য হয়ে মানুষ কেশবপুরের ক্লিনিকমুখী হয়ে পড়েছেন। তারপরও ক্লিনিকে ডাক্তার, নার্স না থাকায় রোগীর মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়েছে। কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে আটজন ডাক্তার ও ১৯ জন নার্স কর্মরত। অপারেশনের সব যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও কোন রোগীকে অপারেশন করা হয় না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডাক্তারদের অবহেলা, উদাসীনতা ও অর্থ বাণিজ্যের বিষয়ে উপর মহলও নিশ্চুপ থাকায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার মধ্যবর্তী স্থান হওয়ায় কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুরুত্ব অপরিসীম। পশ্চিমে কলারোয়া, দক্ষিণে ডুমুরিয়া ও তালা, উত্তরে মনিরামপুর উপজেলার অবস্থান সন্নিকটে হওয়ায় এ চারটি উপজেলার অধিকাংশ দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ চিকিৎসা ও অপারেশনের জন্য কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। কিন্তু এখানে ভাল চিকিৎসাসেবা ও অপারেশন না হওয়ায় তারা কম খরচে শহরের সাতটি ক্লিনিকে চিকিৎসা ও অপারেশন করিয়ে থাকেন।
×