ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিভে শব্দের স্বাদ!

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

জিভে শব্দের স্বাদ!

কথায় আছে ‘সত্যি কথা শুনতে সব সময় তেতো লাগে’। আর মিষ্টি কথা শুনলে মিষ্টি। এই বিষয়গুলো সত্যি হলে কেমন হতো? কারও তেতো কথা শুনলে জিভে তেতো একটা স্বাদ পাওয়া যেত আর মিষ্টি কথায় জিভে এনে দিত মিষ্টি স্বাদ! ভাবছেন, যতসব আজগুবি বিষয়? তবে সত্যি সত্যিই এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছেন ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার শহরের বাসিন্দা জেমস ওয়ানারটন। তিনি প্রতিটি উচ্চারিত শব্দের স্বাদ পান! তার এই শারীরিক অবস্থার নাম ‘সিনেস্থেশিয়া’। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগে এনেস্থেশিয়ার সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। অস্ত্রোপচারের আগে শরীরের ইন্দ্রিয়গুলোকে অকেজো করে নেয়ার প্রক্রিয়ার নাম ‘এনেস্থেশিয়া’। আর সিনেস্থেশিয়ায় মানুষের স্বাধীন ইন্দ্রিয়গুলো সংযুক্ত হয়ে পড়ে। ব্যতিক্রম এই অবস্থায় যারা ভোগে, তাদের ইন্দ্রিয় ঠিক আমাদের মতো কাজ করে না। ওয়ানারটনের বেলায় এমনই হয়েছে। মানুষের পাঁচটি ইন্দ্রিয় অর্থাৎ শোনা, স্বাদ নেয়া, দেখা, স্পর্শ করা, এবং ঘ্রাণ নেয়ার ক্ষমতা স্বাধীনভাবে কাজ করে। ট্রাকের হর্নের শব্দ আমরা কান দিয়েই গ্রহণ করি। রংধনু দেখতে আমাদের ব্যবহার করতে হয় চোখ। কিন্তু অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থার কারণে ওয়ানারটন প্রায় প্রতিটি শব্দের আলাদা স্বাদ নিতে পারেন। বিভিন্ন শব্দ তার জিহ্বাও এনে দেয় বিভিন্ন স্বাদ! জেমস ওয়ানারটন, সিনেস্থেশিয়া নামের জটিল এক শারীরিক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমরা অনেকেই কিছু মাত্রায় পরিচিত। যেমন মুখরোচক কোন খাবার বা আচারের নাম শুনলেই আমাদের জিভে জল চলে আসে। কিন্তু ওয়ানারটনের এমন অভিজ্ঞতা প্রায় সব ক্ষেত্রেই হয়; শুধু লোভনীয় খাবারের বেলায় নয়! এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, ‘কুকুরের ডাক শুনলে আমি কাস্টার্ডের স্বাদ পাই। ‘লাইক’ শব্দ শুনলে দইয়ের স্বাদ পাই।’ এ রকম অনেক লম্বা ফিরিস্তি আছে ওয়ানারটনের। ওয়ানারটন প্রথম শব্দের স্বাদ পেয়েছিলেন স্কুলে, ঈশ্বরের প্রার্থনা উচ্চারণ করার সময় তিনি বেকনের স্বাদ পান। কোন একটা নির্দিষ্ট শব্দ শুনলে জিহ্বায় কোন একটা নির্দিষ্ট স্বাদ আসে, এই অভিজ্ঞতার কথা অনেক দিন লুকিয়েই রেখেছিলেন তিনি। ২০ বছর বয়সে জানতে পারেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি নতুন নয়। এখন তো এ নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে। এ বিষয়ে ওয়ানারটন বলেছেন, ‘শব্দের স্বাদ পছন্দ না হলে আমার বিরক্ত বা বিষাদের অনুভূতি হয়। এটা আমি চাইলেও এড়াতে পারি না। তবে আমি এই নিয়েই এখন সুখে আছি।’-দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট
×