ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা

দীর্ঘ ১৩ বছর পর গ্রেনেড হামলা মামলার যুক্তিতর্ক শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

দীর্ঘ ১৩ বছর পর গ্রেনেড হামলা মামলার যুক্তিতর্ক শুরু

বিকাশ দত্ত ॥ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় বর্বরোচিত ও বহুল আলোচিত গ্রেনেড হামলা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আর্গুমেন্ট (যুক্তিতর্ক ) শুরু হয়েছে। গ্রেনেড হামলার দীর্ঘ ১৩ বছর পর দুটি মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য) এখন শেষ ধাপ। রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করবেন। রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান সূচনা বক্তব্যে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আর্থিক ও প্রশাসনিক সহায়তায় যুদ্ধে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার লক্ষ্যে এই অপরাধ সংঘটিত করে। উদ্দেশ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করা । আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। ’৭০ এর নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের হত্যাকা- ঘটানো হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায়ের মধ্যদিয়ে জাতি কলঙ্ক মুক্ত হয়েছে। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় দেশের তিনটি জঙ্গী সংগঠন ও আন্তর্জাতিক ২ থেকে তিনটি জঙ্গী সংগঠন জড়িত ছিল। এ মামলার আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের কি অভিযোগ তার ওপর যুক্তি উপস্থাপন করা হবে। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষ আজ মঙ্গল ও আগামীকাল বুধবার তাদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবে। এর পর আসামি পক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন করবে। নাজিম উদ্দিন রোডে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে ঢাকার-১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। বিচার চলাকালীন আদালতের বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। স্পর্শকাতর ও আলোচিত এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দসহ রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। আসামি পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন ২০ জন। মোট আসামির সংখ্যা ৪৯ জন। এর মধ্যে কারাগারে আটক ২৩ জন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক ও জামিনে রয়েছেন ৮ জন। চলতি বছরের ১১ অক্টোবর কারাগারে থাকা আসামি মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে মাসুম বিল্লাহ ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দালের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহ? শেষ হয়। এর আগে গত ১২ জুন মামলাটিতে জামিনে ও কারাগারে থাকা ৩১ আসামির আত্মপক্ষ শুনানি শুরু হয়, যা শেষ হয় গত ১১ জুলাই। আত্মপক্ষ শুনানিতে ৩১ আসামির সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এরপর শুরু হয় সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ। কারাগারে থাকা ২৩ আসামির মধ্যে ২০ আসামি সাফাই সাক্ষ্য দেয়। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য শুরু হয় ২০১১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, আর শেষ হয় ২০১৭ সালের ১২ জুলাই। আসামি পক্ষের সাক্ষ্য শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই আর শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর । এ মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমানের টিমে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন এ্যাডভোকেট খন্দকার আব্দুল মান্নান, এ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু, এ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজল, এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল ও এ্যাডভোকেট ফারজানা রেজা। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সুবহান তরফদার ও এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম । চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান সূচনা বক্তব্যে বলেন ’৭১ এর পরাজিত শক্তি যারা বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত হয়ে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট, জেলাখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। একাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভার্ষণ : ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এই ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে জনগণ এবং ভারত ও রাশিয়ার সহযোগিতায় দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার , সেরনিয়াবাত ও তার পরিবার, শেখ ফজলুল হক মনি ও তার পরিবারের ওপর আঘাত হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে পরিবারের সদস্যদের। হত্যা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের অগ্রগতি, উন্নতি এবং এই সম্ভাবনাকে পেছনে ঠেলে দেয়ার জন্য। এবং পরাজয়ের প্রতিশোধের জন্য। দীর্ঘ ২৩ বছর পর নানা বাধা উত্তীর্ণ করে বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারের মধ্য দিয়ে কলঙ্ক লেপন করা হয়েছিল ললাটে, সেটার অবসান ঘটে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার ও রায়ের মাধ্যমে। ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের অপরাধ ছিল সংগঠিত অপরাধ । পরবর্তীতে ৩ নবেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। তার পরবর্তী ধারাবাহিকতায় ২০০৪ এ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। ’৭৫ এ তারা যে অপরাধ সংঘটিত করেছিল তার ফলে তারা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে হত্যা করতে পারেনি বিদেশে অবস্থানের কারণে। একই পরাজিত শক্তি অন্য কৌশল অবলম্বন করে স্থানীয় বা দেশের তিনটি জঙ্গী সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও দু’তিনটি জঙ্গী সংগঠন পরস্পর যোগসাজশে চার দলীয় বিএনপি-জামায়াত জোটের আর্থিক ও প্রশাসনিক সহায়তায় যুদ্ধেক্ষেত্রে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার লক্ষ্যে এই অপরাধ সংঘটিত করেছে। উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। প্রয়াত নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ একটি হিসেবে ২৪ জন অপর হিসেবে ২২ জনকে হত্যা করা হয়। এবং শেখ হাসিনা ডান কানের শ্রবণশক্তি হারায়। শত শত নেতাকর্মী-সমর্থক, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ অগণিত মানুষ আহত হয়। সূচনা বক্তব্যে আরও বলা হয়, আর্জেস গ্রেনেড আরও কয়েকটি জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের হযরত শাহজালাল (র) মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর, হবিগঞ্জে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া হত্যা, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে আমাদের মামলার সাক্ষী ভিক্টিম সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় হামলায় এই আর্জেস গ্রেনেড ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও গ্রেনেড হামলা হয় ভারতের মুম্বাইয়ে হোটেল তাজ এবং ভারতের পার্লামেন্টের সামনে। গ্রেনেড হামলা হয়েছে সেটি আর্জেস গ্রেনেড কিনা তা জানা যায়নি। তবে আমাদের এখানে যে গ্রেনেড হামলা হয়েছে তা আর্জেস গ্রেনেড। আর্জেস গ্রেনেড পৃথিবীর দুটি দেশ উৎপাদন করে থাকে। একটি অস্ট্রিয়া অন্যটি পাকিস্তান । পাকিস্তান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি ওয়েবসাইটে এটা প্রচার করা হয়। সেখানে সেনাবাহিনী ছাড়া অন্য কারো কাছে বিক্রি করে না। এটা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। সেনাবাহিনী ব্যবহার করে থাকে। অস্ট্রিয়া তাদের প্ল্যান্ট বিক্রি করে দিয়েছে। এখন শুধু পাকিস্তানেই উৎপাদন হয়ে থাকে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, আসামি পক্ষের আইনজীবীগণ পর্যাপ্ত জেরা করেছে। কোন কোন সময় অপ্রয়োজনীয়, অপ্রাসঙ্গিক জেরাও করেছে। আসামি পক্ষ ৫বার হাইকোর্টে গিয়েছে। সেখানে ২৯২ কার্যদিবস ব্যয় হয়েছে। এই মামলায় আসামি সংখ্যা বেশি, সাক্ষীর সংখ্যাও বেশি। অন্যান্য সমসাময়িক চাঞ্চল্যকর মামলায় আসামিদের অনেকেই সম্পৃক্ত ছিল ফলে তারা কোন সময় কেউ কেউ সিলেটে হযরত শাহজালাল (র:) মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামি হয়েছে। চট্টগ্রাম ১০ ট্রাক অস্ত্র চালান মামলা, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলা, রমনা বোমা হামলা মামলা, সিপিবি বোমা হামলা মামলায় আসামি। তখন এই দুটি মামলায়( হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের ২৯/১১ (হত্যা), ও ৩০/১১ (বিস্ফোরক) ) মুলতবি রাখতে হয়েছে। ফলে সময় ব্যয় হয়েছে। মৃত্যুর কারণে মুফতি হান্নানসহ তিনজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আলোচিত এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জন সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। মামলার নথি থেকে জানা যায়, মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। ২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এই মামলাটির তদন্ত ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে, যা পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলাটি তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আখন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। তবে মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবির সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এখন আসামির সংখ্যা ৪৯, যাদের মধ্যে তারেক রহমানসহ পলাতক রয়েছেন ১৮ জন। এছাড়া জামিনে রয়েছেন আটজন ও কারাগারে ২৩ জন। বাকি ১৮ আসামির অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ চলছে। একই সঙ্গে পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাও অব্যাহত আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি হত্যা মামলা ও অপরটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে ওই সমাবেশে একটি ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে যখন শেখ হাসিনা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন আকস্মিক এ হামলা চালানো হয়। একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা ও ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ সময় ঢাকার তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ অন্য নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিকভাবে একটি মানব বলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সহ্য করে দলীয় সভানেত্রীকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন। তবে গ্রেনেডের আঘাত থেকে বেঁচে গেলেও তার (শেখ হাসিনা) শ্রবণ শক্তির ক্ষতি হয়। এই বর্বরোচিত হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন: প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন, ইসাহাক মিয়া প্রমুখ। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের এ হত্যাকা-ের বিচারের ব্যাপারে তৎকালীন বিএনপি সরকার নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেছিল। শুধু তাই নয় এ হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষা করতে সরকারের কর্মকর্তারা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। তবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে বর্তমানে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন আসামিপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ হবে। শীঘ্রই বিচার কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। ২৩ জন কারাগারে ॥ বর্তমানে ২৩ জন আসামি কারাগারে আছেন। তারা হলেন মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাঃ জাফল, আবুল কালাম আজদ ওরফে বুলবুল, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মোঃ আব্দুল সালাম পিন্টু, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হোসেন ওরফে সুমন, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ, মোঃ উজ্জল ওরফে রতন, মোঃ লুৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আব্দুর রহিম, মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, মোঃ আব্দুল মাজেদ ভাট, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহম্মেদ ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বি, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবুল বক্কর ওরফে সেলিম হাওলাদার। যারা জামিনে রয়েছেন ॥ ৮ জন আসামি জামিনে আছেন। এরা হলেন মোঃ আরিফুর ইসলাম ওরফে আরিফ কামিশনার, মোঃ সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, বিশেষ পুলিশ সুপার (অব) রুহুল আমিন, এ এসপি (অব) আব্দুর রশিদ, এএসপি (অব) মুন্সী আতিকুর রহমান, লে: কমান্ডার (অব) সাইফুল ইসলাম ডিউক। যাদের অব্যাহতি ॥ মৃত্যুজনিত কারণে তিন আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তারা হলেন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহাসান মোহাম্মদ মোজাহিদ (মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ- কার্যকর) মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী (ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর), শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল। পলাতক রয়েছে ১৮ ॥ পলাতকদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান রয়েছেন লন্ডনে, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ মধ্যপ্রাচ্যে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ হানিফ কলকাতা, মেজর জেনারেল (অব) এ টি এম আমিন আমেরিকায়, লে. কর্নেল (অব) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোরসালীন ও তার ভাই মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের একটি কারগারে এবং মওলানা তাজ উদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকা। জঙ্গী নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও মাওলানা লিটন ওরফ জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ডিএমপির তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার (পূর্ব) ও ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মোঃ ওবায়দুর রহমান এবং খান সৈয়দ হাসানও বিদেশে অবস্থান করছে। তবে আসামি (সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা) হারিছ চৌধুরীর অবস্থান জানা যায়নি। পলাকতকদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন আটক সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই।
×