ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাগরে মজুদ ৭শ’ বিলিয়ন ঘনফুট;###;আবিষ্কারের কথা জানালেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ;###;তিন স্তরে গ্যাস থাকতে পারে ॥ বাপেক্স কর্মকর্তা;###;আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আগামী সপ্তাহে

ভোলায় নয়া গ্যাসক্ষেত্র

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

ভোলায় নয়া গ্যাসক্ষেত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোলায় একটি নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এক মন্ত্রী ভোলায় এই নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার কথা জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ খবর জানিয়ে বলেন, এটা আমাদের দেশের জন্য একটি সংবাদ। বলা হচ্ছে, এই ক্ষেত্রে এক ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিটের (টিসিএফ) মতো গ্যাসের মজুদ আছে। বাপেক্স সূত্র বলছে, এখনও গ্যাসক্ষেত্রটিতে কূপ খননের কাজই শেষ হয়নি। গ্যাসের উদ্গীরণও শুরু হয়নি। তবে গ্যাসক্ষেত্রটিতে পাঁচ হাজার পিএসআইয়ের ওপর চাপ রয়েছে। এতে গ্যাস পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তিন হাজার ৫শ’ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। তিন হাজার ৩শ’র পর থেকে ২শ’ মিটারের মধ্যে তিনস্তরে গ্যাস পাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে বাপেক্সের এক কর্মকর্তা। আগামী সপ্তাহে গ্যাসক্ষেত্রটি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বাপেক্স। অবশ্য এর আগেও পেট্রোবাংলা থেকে গ্যাস পাওয়ার আগাম ঘোষণা দিয়ে সাড়া জাগানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রকৃত পরিস্থিতির সঙ্গে ঘোষণার মিল পাওয়া যায়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পেট্রোবাংলা সুনেত্র, সুন্দলপুর, হরিপুরে তেল-গ্যাস পাওয়ার আগাম ঘোষণা দেয়। যদিও এর কোন ক্ষেত্রেই কাক্সিক্ষত মাত্রায় সাফল্য পাওয়া যায়নি। সুনেত্রয় চার টিসিএফ গ্যাস মজুদ আছে বলে প্রচার করা হলেও সেখানে কিচ্ছু মেলেনি। হরিপুরে তেল পাওয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও সেখানে অতিরিক্ত কনডেনসেট যুক্ত গ্যাস পাওয়া যায়। ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করা সুন্দলপুরও কিছুদিন পর আর গ্যাস সরবরাহ করতে পারেনি। মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর শফিউল আলম বলেন, ৭শ’ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস হয়ত আছে। আগে ওখানে যে কূপ আছে সেটা মিলে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংস্থান ওখানে আছে বলে আমরা ধারণা পেয়েছি। সম্প্রতি এক টিসিএফ মজুদের গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া যায়নি। বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম জানান, নতুন এই গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান শাহবাজপুরের বর্তমান গ্যাসক্ষেত্র থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্বদিকে, বোরহানউদ্দিন উপজেলার টগবি ইউনিয়নে। তিনি জানান, সাধারণত একটি গ্যাসক্ষেত্রের আয়তন এক বর্গকিলোমিটার হয়ে থাকে। যেহেতু আগের ক্ষেত্র থেকে নতুন গ্যাস প্রাপ্তির স্থান তিন কিলোমিটার দূরে তাই এটি নতুন ক্ষেত্র। আগামী সপ্তাহে বাপেক্স এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে। আরও যাচাইবাছাই করে প্রকৃত মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি। ভোলার কূপটি খনন করেছে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম। এই গ্যাসক্ষেত্রের মালিক বাপেক্স। বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে কূপটি খনন করা হয়েছে। ভোলায় নতুন এলাকায় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মাত্রার জরিপ করেছে বাপেক্স। তখন এখানে গ্যাস পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা ছিল বলে জরিপে উঠে আসে। তবে কূপ খনন শেষ না হওয়া পর্যন্ত গ্যাস রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ৬ আগস্ট অনুসন্ধান কূপটি খনন কাজের উদ্বোধন করেন। ভোলার শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে ২০০৯ সালের ১১ মে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। সেখানে থাকা চারটি কূপের মধ্যে তিনটি থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে। শাহবাজাপুরে ৩৫ বিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রটি বেঙ্গল বেসিন এলাকায়। সেখানে যে ভূকাঠামোয় গ্যাস পাওয়া গেছে, তার ভূতাত্ত্বিক নাম ‘স্টেটিগ্রাফিক স্ট্রাকচার’। দেশের অন্য সব গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে সুরমা বেসিনে। এই বেসিনের ভূকাঠামোয় ভূতাত্ত্বিক নাম ‘এ্যান্টি ক্লেইন স্ট্রাকচার’। ভোলায় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য প্রথমে দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করা হয় ১৯৮৬-৮৭ সালে। তাতে গ্যাসের অবস্থান চিহ্নিত করার পর প্রথম অনুসন্ধান কূপটি খনন করা হয় ১৯৯৪ সালে। এরপর আরও তিনটি কূপ খনন করা হয়েছে। কূপগুলো থেকে বর্তমানে দুটি বিদ্যুত কেন্দ্র চলছে। সেখানে আরও বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে পিডিবি। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ত্রিমাত্রিক জরিপ করে দেশের দ্বীপ জেলা ভোলায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ইউনোকল এক জরিপের ভিত্তিতে শাহবাজপুরে দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুদের সম্ভাবনার কথা বলেছিল। তখন তারা ওই গ্যাস তুলে তা দিয়ে বরিশাল, খুলনা ও যশোর অঞ্চলে সরবরাহের কর্মপরিকল্পনাও সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছিল। পরে ওই প্রক্রিয়া আর এগোয়নি। দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাস চাহিদা পূরণে ২০২১ সালের মধ্যে ১০৮ কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৫৩ অনুসন্ধান কূপ, ৩৫ উন্নয়ন কূপ ও বিশটি ওয়ার্কওভার কূপ রয়েছে।
×