ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ সড়ক দিবস পালন

বারো বছরে ৫১ হাজার দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ৫৭ হাজার

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

বারো বছরে ৫১ হাজার দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ৫৭ হাজার

নিখিল মানখিন ॥ গত ১২ বছরে দেশে সাড়ে ৫১ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৫৭ হাজার ২২৬। আহত হয়েছেন ৯৩ হাজার ৫০৬। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২০১৪ সালে পাঁচ হাজার ৯৯৭। এতে আট হাজার ৭৯৮ নিহত ও ১৮ হাজার ১১৩ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে ২০১৬ সালে দুই হাজার ৯৯৮। এসব দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা তিন হাজার ৪১২ ও আহত আট হাজার ৫৭২। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনার হার ৩৫ শতাংশ, নিহতের হার ৫০ শতাংশ ও আহতের হার ৩৯ শতাংশ কমেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন দিন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মহাসড়ক চার লেন করার পর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি দৃশ্যমান। তাই দ্রুত সকল মহাসড়ক চার লেন করার তাগিদ দিয়েছেন তারা। যাত্রী ও সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে এমন একাধিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, মূলত সাত কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। পাঁচ কারণে ২০১৬ সালে দুর্ঘটনার মাত্রা কমেছে। তবে এখনও বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে মহাসড়কগুলোতে। অনুমোদনহীন ও স্বল্পগতির যানবাহনে দুর্ঘটনার মাত্রা সবচেয়ে বেশি বলা হচ্ছে। এসব যান নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় দুই হাজার ৭শ’। এতে নিহতের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। আহত প্রায় সাত হাজার। এমন বাস্তবতায় দেশজুড়ে প্রথমবারের মতো সরকারীভাবে পালিত হলো ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’। এখন থেকে প্রতি বছরের ২২ অক্টোবর দিবসটি পালন করা হবে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচী পালন করা হয়। সেইসঙ্গে নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনারও অঙ্গীকার করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। ‘সাবধানে চালাবো গাড়ি, নিরাপদে ফিরবো বাড়ি’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে দিবসটি পালন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সড়ক কতটুকু নিরাপদ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন চিত্রনায়ক ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারী নানা পদক্ষেপের ফলে সড়ক দুর্ঘটনার হার কিছুটা কমলেও, আইন না মানা আর সচেতনতার অভাবে এখনও চলছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ও নিরাপদ সড়কের জন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ৩৩ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে। কিন্তু দুর্ঘটনার প্রায় ৪০ ভাগ সংবাদমাধ্যমে আসে না। ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও অটোরিক্সা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সংখ্যাগত দিক থেকে সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না বলেও মনে করেন তিনি। ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, ‘পথচারী ও মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশ ঠিকমতো কাজ করছে না। তবে তাদের কিছু কিছু উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, দেশের জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের কাজগুলো করছেন না। আমার দাবি, নিরাপদ সড়কের জন্য জনপ্রতিনিধিরা যেন তাদের নিজ নিজ এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রচার চালান। সড়ক দুর্ঘটনার ওপর জরিপ ও পর্যবেক্ষণ চালিয়ে বেসরকারী সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে সারাদেশে ৫১ হাজার ৬৬৯ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। শীর্ষস্থানীয় ২০ বাংলা ও ইংরেজী জাতীয় দৈনিক, দশটি আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং আটটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থা থেকে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশে ৫৩ হাজার ১৯১ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গত বছর ৩৪০ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসবের মধ্যে ১৬৯ দুর্ঘটনার নেপথ্যে ছিল বাসচালকরা। অর্থাৎ রাজধানীর ৪৯ ভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিল বাসচালকদের বেপরোয়া গতি। পুলিশ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ৩৪০ আসামির মধ্যে মাত্র ১৯৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চালকদের ওপর করা জরিপে দেখা গেছে, বাসের চালকরাই সবচেয়ে বেশি (৪৮ দশমিক ৭ ভাগ) দুর্ঘটনা ঘটায়। চালকদের ৮১ ভাগ প্রশিক্ষণ ছাড়া শুধু ওস্তাদের কাছ থেকে শিখেই হেলপার থেকে চালক বনে যান। চালকদের ৪৮ ভাগই মাধ্যমিক বা সমমানের শিক্ষিত। চালকদের সবাই অধিক রোজগারের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন। জরিপে দেখা গেছে, ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা গাড়ি চালান ৪৮ ভাগ চালক। ১৯ ভাগ চালক গাড়ি চালান ১৩ থেকে ১৬ ঘণ্টা। আবার এসব চালকের গ্রামে বাড়ি থাকলেও ৪১ ভাগই ঘুমান গাড়িতে। এক যুগের দুর্ঘটনার চিত্র ॥ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে চার হাজার ৫৯২। এতে নিহত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ছয় হাজার ৮২৩ ও ১৪ হাজার ২৬। ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা দুই হাজার ৯৯৮। এতে তিন হাজার ৪১২ নিহত ও আট হাজার ৫৭২ জন আহত হন। এই হিসাবে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে এক হাজার ৫৯৪টি। নিহত ও আহতের সংখ্যা কমেছে যথাক্রমে তিন হাজার ৪১১ ও পাঁচ হাজার ৪৫৪। অর্থাৎ ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনার হার ৩৫ শতাংশ, নিহতের হার ৫০ শতাংশ ও আহতের হার ৩৯ শতাংশ কমেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ৪ হাজার ৭৫৬টি দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৮১৩ নিহত ও ১১ হাজার ৫২৮ জন আহত হয়েছেন। ২০১২ সালে ৪ হাজার ৮১৭টি দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৯৫৪ নিহত ও ১২ হাজার ৯০৮ জন আহত হয়েছেন। ২০১১ সালে ৪ হাজার ৯৫৯টি দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৫ হাজার ৯২৮ ও ১১ হাজার ৪৩০। ২০১০ সালে ৩ হাজার ১০৭টি দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৬৪৬ নিহত ও ১ হাজার ৮০৩ জন আহত হন। ২০০৯ সালে ৩ হাজার ৫৬টি দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৯৫৮ নিহত ও ৩ হাজার ৪৫৬ জন আহত হন। ২০০৮ সালে ৪ হাজার ৮৬৯টি দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৭৬৫ নিহত ও ৩ হাজার ২৩৩ জন আহত হয়েছেন। ২০০৭ সালে ৪ হাজার ৭৬৯টি দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৩ হাজার ৭৪৯ ও ৩ হাজার ২৭৩। ২০০৬ সালে ৩ হাজার ৭৯৪টি দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ১৯৩ জন নিহত ও ২ হাজার ৪০৯ জন আহত হন। ২০০৫ সালে ৩ হাজার ৯৫৫টি দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৩ হাজার ১৮৭ ও ২ হাজার ৭৫৫ জন। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে জনকণ্ঠকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত হয়েছে। করণীয় সম্পর্কেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানেন। সমস্যা হলো বাস্তবায়নে। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা একটি বিরাট বড় সমস্যা। এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সবাই একযোগে কাজ করলে সুফল মিলবে। তিনি বলেন, আমাদের মহাসড়কগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে চার লেনে রূপান্তর করতে হবে। কোন অবস্থাতেই মহাসড়কে অযান্ত্রিক বা নিষিদ্ধ যানবাহন চলতে দেয়া যাবে না। এসব পরিবহনের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ চালক বৃদ্ধি, জনসচেতনতা বাড়ানো, কঠোর আইন প্রয়োগ, চালকদের শাস্তি বৃদ্ধি নিশ্চিত করলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে বলেও মনে করেন এই গবেষক। দুর্ঘটনার কারণ ॥ গবেষণায় সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সাতটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ, নিয়ম ভঙ্গ করে ওভারলোডিং ও ওভারটেকিংয়ের প্রবণতা, চালকদের দীর্ঘক্ষণ বিরামহীনভাবে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব ও অযান্ত্রিক-অনুমোদনহীন যানবাহনের দৌরাত্ম্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও বেহাল সড়ক। দুর্ঘটনা কমার কারণ ॥ অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের পেছনে পাঁচটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছে জাতীয় কমিটি। সেগুলো হলো- সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বছরজুড়ে গঠনমূলক সংবাদ প্রচার, দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে সামাজিক সংগঠনগুলোর ধারাবাহিক কর্মসূচী পালন, বছরের অধিকাংশ কর্মদিবসে রাজপথে সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর পদচারণা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা ও পুলিশের দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি এবং ঝুঁঁকিপূর্ণ অনেক বাঁক চিহ্নিত করে সতর্কীকরণ সঙ্কেত স্থাপন ও সড়ক সংস্কার, মহাসড়কে রোড ডিভাইডার স্থাপন, ফোর লেন প্রকল্প বাস্তবায়ন। মহাসড়কে দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ॥ ‘এদিকে নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে হাইওয়েতে ছোট ছোট অবৈধ যানবাহন যেমন- ভ্যান, রিক্সা, নসিমন, করিমন, ভটভটি, অটো রিক্সা এসব যানবাহন বেশি দায়ী। এছাড়া আইন অমান্য করে ধীরগতির বাহন মহাসড়কে এখনও চলাচল করে যা দূরপাল্লার বড় গাড়িগুলোর চলাচলে বিঘ্ন ঘটনায়। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশকে অযান্ত্রিক ও নিষিদ্ধ পরিবহন চলাচল না করার ব্যাপারে তেমন কোন ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। তাছাড়াও ধীরগতির গাড়ির হেডলাইট না থাকায় ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টিতে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এক সময় ট্রাকের বেপরোয়া গতি বা চালনাকে দুর্ঘটনার জন্য বেশি দায়ী করা হলেও এখন তা অনেক কমেছে। কিন্তু বাসের বেপরোয়া গতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি নিসচার পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৪ হাজার ১৪৪। জাতিসংঘের নির্দেশনা ॥ জাতিসংঘ ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার জন্য দশক ঘোষণা করেছে। জাতিসংঘের এ ঘোষণার সঙ্গে একাত্ম্য হয়ে সপ্তম পাঁচসালা পরিকল্পনায় (২০১৬-২০২০) বর্তমান সরকার এসডিজিতে এ ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৫০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এদিকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সরকারী একটি বৈঠকে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য প্রধান কারণ হিসেবে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর বিষয়টি উঠে আসে। এছাড়াও ওভারটেকিং, মহাসড়কে লোকাল বাসে যাত্রী পরিবহন করা, মাদকাসক্ত চালক ও মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহন করা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সচিব শওকত আলী জনকণ্ঠকে বলেন, দুর্ঘটনা বেশি হওয়ায় বৈঠকে সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি দ্রুত তা রোধ করার পরামর্শও আসে বৈঠকে। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করেছি। সবার কথা একটাই দুর্ঘটনার জন্য মূলত চালকরাই দায়ী। বেপরোয়া চালানোর কারণেই বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো রোধ ও মাদকাসক্ত চালক নিয়োগ না দিতে মালিকদের কঠোরভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম বৃদ্ধি, সংবাদমাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার, সতর্কবার্তা দেয়া। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কঠোর নজরদারি বাড়াতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, রাস্তা ভাল। তবুও সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। এটাই সবচেয়ে কষ্টের বিষয়। হাইওয়েতে যারা গাড়ি চালিয়ে অভ্যস্ত নয় তারা দিব্যি বাস, মাইক্রোসহ অন্যান্য পরিবহন নিয়ে নেমে যাচ্ছে। কিন্তু সড়ক সম্পর্কে এসব চালকের কোন ধারণা নেই। এ রকম চালকদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক সড়ক দুর্ঘটনা কারণ হিসেবে বলেন, গাড়ি কমেনি। দিন দিন বিশৃঙ্খলা বাড়ছে সকল সড়ক মহাসড়কে। সড়কের ভূমি ব্যবহার বৃদ্ধিসহ নসিমন-করিমন ও অযান্ত্রিক গাড়ি চলাচলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে সমানতালে। অবৈধ চালক, ফিটনেসবিহীন পরিবহনের সংখ্যাও কমেনি। বছরে ৮-১০ ভাগ গাড়ি বাড়ছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের হিসাবে প্রতিদিন ৩৩ জন মানুষ দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে ৫০। এর মধ্যে ১০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দুর্ঘটনার জন্য আমরা যারা পথ চলি তাদের যেমন দোষ আছে, তেমনি যাত্রী ও মালিক পক্ষের দোষ আছে। সকলকে সতর্কতার সঙ্গে রাস্তা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, রাস্তা একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক জায়গা। এখানে প্রতি মুহূর্তে ভূত চলাচল করে। দেশের জনসংখা ও যানবাহনের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সে অনুপাতে দুর্ঘটনা বাড়েনি। গত কয়েক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
×